এপ্রিল ফুল : সন্দেহের অব্যর্থ তীর ইহুদিদের দিকে...
‘ইসরাইলি রেওয়ায়েত’ বলে আরবি শিক্ষিতদের মাঝে একটি নির্দিষ্ট পরিভাষা প্রচলিত আছে। কোরান এবং হাদিসের ব্যাখ্যায় যে সব তথ্য মিথ্যা কিংবা প্রায়মিথ্যা বলে প্রতীয়মান হয় সেগুলোকে সাধারণত ইসরাইলি রেওয়ায়েত-(ইসরাইলি বর্ণনা) বলা হয়। কোরানের তাফসির বা হাদিসের ব্যাখ্যায় এসব বর্ণনার ওপর আস্থা রাখা হয় না। লোকসমাজে ব্যাপক প্রচলিত হওয়ার কারণে এগুলোকে সত্য হিসেবে যেমন গ্রহণ করা হয় না তেমনি মিথ্যা বলেও উড়িয়ে দেয়া যায় না। আর এই ইসরাইলি রেওয়ায়েতগুলো উৎপাদিত হয় সাধারণত ইহুদিসমাজ থেকে। ইসরাইল মানেই ইহুদি। সেমতে আমরা বলতে পারি, এপ্রিল ফুলের বিষয়টিও একটি ‘ইসরাইলি রেওয়ায়েত’ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এ মতের ব্যাপারে নির্দিষ্ট কারণও রয়েছে। আসুন, কারণগুলো নিয়ে আমরা একটু আলোচনা করি।
আমরা আগেই উল্লেখ করেছি যে, খ্রিস্টানরা গ্রানাডা দখল করার পর সর্বপ্রথম স্পেন থেকে বিতাড়িত করে অভিশপ্ত ইহুদিদের। বর্তমান সময়ে ইহুদিরা খ্রিস্টানদের মিত্র হলেও ঐতিহাসিকভাবে ইহুদি এবং খ্রিস্টানদের সম্পর্ক দা-কুমড়ো। ইউরোপের ইতিহাসে বহুবার তাদেরকে বিভিন্ন খ্রিস্টান দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। এদের নির্দিষ্ট কোনো দেশ ছিলো না। যাযাবরদের মতো বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়াতো আর ষড়যন্ত্র করে গন্ডগোল বাধাতো রাষ্ট্রের ভেতর। বর্তমানে ইহুদি-খ্রিস্টান মিত্রতা দেখা গেলেও এটা কেবল বাহ্যিক মিত্রতা, ইহুদিরা নিজেদের স্বজাতি ছাড়া কাউকেই তাদের বন্ধু মনে করে না।
যাহোক, আমরা বলছিলাম গ্রানাডা থেকে ইহুদিদের বিতাড়নের প্রসঙ্গে। দেখুন ইতিহাসের কি চমৎকার মিল এবং মুসলমানদের কেমন অজ্ঞতা; ফার্ডিন্যান্ড এবং ইসাবেলার পক্ষে গ্রানাডা থেকে ইহুদিদের খ্রিস্টানধর্ম গ্রহণ নয়তো স্পেন থেকে বিতাড়নের অধ্যাদেশ জারি করা হয় ১৪৯২ সালের ৩১ মার্চ। অর্থাৎ ১ লা এপ্রিলের আগের দিন। খুব ভালো করে স্মরণ রাখা প্রয়োজন, এদিন গ্রানাডা থেকে ইহুদিদের বের হয়ে যাওয়ার আদেশ দেয়া হয়, মুসলমানদের নয়। আরো স্মরণ রাখুন, দিনটি ছিলো পহেলা এপ্রিলের আগের দিন, ৩১ মার্চ ১৪৯২। আশা করি বিষয়টি এবার ক্লিয়ার হওয়া শুরু করেছে।
দেখুন এ ব্যাপারে উইকিপিডিয়া কী বলছে- Several months after the fall of Granada an Edict of Expulsion was issued against the Jews of Spain by Ferdinand and Isabella (March 31, 1492). It ordered all Jews of whatever age to leave the kingdom by the last day of July (one day before Tisha B'Av). সূত্র :http://en.wikipedia.org/wiki/History_of_the_Jews_in_Spain#1391.E2.80.931492
‘গ্রানাডা পতনের কয়েক মাস পর ফার্ডিন্যান্ড এবং ইসাবেলা ৩১ মার্চ ১৪৯২-এ ইহুদিদের বিরুদ্ধে দেশান্তরের আদেশ জারি করেন। ...’
উইকিপিডিয়ার আরেকটি সূত্র দেখুন- The punishment for any Jew who did not convert or leave by the deadline was death without trial the punishment for a non-Jew who sheltered or hid Jews was the confiscation of all belongings and hereditary privileges. সূত্র :http://en.wikipedia.org/wiki/Alhambra_decree
উইকিপিডিয়ার আরেকটি সূত্র দেখুন- The punishment for any Jew who did not convert or leave by the deadline was death without trial the punishment for a non-Jew who sheltered or hid Jews was the confiscation of all belongings and hereditary privileges. সূত্র :http://en.wikipedia.org/wiki/Alhambra_decree
‘যেসব ইহুদি ধর্মান্তরিত কিংবা দেশান্তর হবে না তাদেরকে বিনা বিচারে হত্যা করা হবে।...’
আশা করি এতোক্ষণে আমাদের এপ্রিল ফুলবিষয়ক চিন্তা-ভাবনা স্বচ্ছ হতে শুরু করেছে। ১৪৯২ সালের ৩১ মার্চ যেহেতু ইহুদিদের বিরুদ্ধে ধর্মান্তর বা স্পেন থেকে বিতাড়নের ডিক্রি জারি করা হয় সেহেতু পরের দিনটি অর্থাৎ এপ্রিলের ১ তারিখটি তাদের জন্য নিশ্চয়ই বেদনাবহ হওয়ার কথা। হয়েছেও তাই। এদিনটি ইহুদিদের জন্য অত্যন্ত নারকীয় যন্ত্রণার। এদিনটিকে তারা ভুলতে পারেনি শত শত বছর পরেও। আজো তারা ইতিহাসের এ দিনটিকে বেদনার সঙ্গে স্মরণ করে।
যেহেতু তারা ইহুদি তাই একটা সময় তারা কুটিল সিদ্ধান্ত নেয় যে, এদিনটি কেবল আমরাই স্মরণ করবো না, কৌশলে আমাদের সঙ্গে মুসলমানদেরও কান্নাকাটি করাবো। নিজেদের অজান্তে তারাও আমাদের ব্যথায় সমব্যথী হবে। কোনো মুসলিম দেশে ইহুদিরা সমাদৃত না হতে পারে তাই বলে ইহুদিদের ইতিহাস তো অপাঙক্তেয় নয়। সেগুলো মুসলিম দেশগুলোতে তারা ঢুকাতে হবে। তবে সাপ্লাই প্রক্রিয়াটা হতে হবে আবেগী এবং ধর্মীয় হামদর্দির সাথে। কেননা ধর্ম মানেই তো স্পর্শকাতর বিষয়। ভুল-চুক হলেও যদি তার ভেতর যথেষ্ট পরিমাণ আবেগ থাকে তবে তা সমাদরে সমাদৃত হয় মুসলমানদের কাছে। কার ঠ্যাকা পড়েছে ইতিহাস ঘাটার! স্পেনে মুসলমানদের পুড়িয়ে মারা হয়েছে- এটাই সাফকথা। এই সুযোগে ইহুদিরা ঢুকিয়ে দিয়েছে তাদের ইতিহাস। বাইরে মলাট লাগিয়ে দিয়েছে- ১ লা এপ্রিল : স্পেনে মুসলমানদের বোকা বানিয়ে অগ্নিদগ্ধ করে মারার দিন। ইহুদিরা এখানে আরেকটি সুবিধা পেয়েছে, যেহেতু স্পেনে মুসলমানদের পরাজয়, ধর্মান্তর এবং দেশান্তরও প্রায় সমসাময়িক তাই এ বিষয়টিকে খুব সহজেই কাজে লাগিয়েছে তারা। অর্ধশিক্ষিত উপমহাদেশের মানুষ তো আর এতো ইতিহাস ঘাটতে যায় না, তাদেরকে কেবল ধর্মের কথা বলে একটু নাড়া দিলেই হয়, তারা ঝড়ের মতো নড়তে থাকে। কেননা এদেশে ধর্মের কল খুব অল্প বাতাসেই নড়ে। ফলে চতুর ইহুদিরা তাদের বেদনার ইতিহাসকে মুসলমানদের বেদনার ইতিহাস বানিয়ে ঢুকিয়ে দিয়েছে মুসলিমসমাজে। কারণ এদেশে ধর্মের লেবাস পরে ইহুদিদের টাকা খাওয়া পাবলিকের অভাব নেই। সুতরাং এইতো সুযোগ!
দাও, মুসলমানদের ধর্মীয় আবেগে ঢুকিয়ে দাও ইহুদি কান্না। মুসলমানদের চোখ দিয়ে ঝরবে ছয়শো বছয় আগের বিতাড়িত ইহুদিদের জন্য শোকাশ্রু। ইহুদিদের জন্য এর চেয়ে পরম চাওয়া আর কী হতে পারে! প্রতি পহেলা এপ্রিলে মুসলমানদের বড়ো বড়ো ধর্মীয় নেতা, আলেম, যুবক-যুবতীরা ইহুদিদের বেদনায় কান্নাকাটি করে। ইতিহাস বিকৃতির এমন নজির আর কয়টা পাওয়া যায়? আর কয়জনই বা পারে সত্য না জেনে কেবল আবেগের যুক্তিহীন বাণে নিজেদের ধর্মকে মিথ্যার কাছে বিকিয়ে দিতে ? ভাগ্য ভালো যে ইসরাইলকে বাংলাদেশ স্বীকৃতি দেয়নি, নইলে হয়তো অনেক আগেই বাংলাদেশের অনেক আলেম-ওলামা আর ইসলামপন্থীরা ইহুদি ইতিহাস তোষণ করার বদৌলতে ঢাকা টু তেলআবিবের বিমান টিকেট পেয়ে যেতেন।
আশা করি এতোক্ষণে আমাদের এপ্রিল ফুলবিষয়ক চিন্তা-ভাবনা স্বচ্ছ হতে শুরু করেছে। ১৪৯২ সালের ৩১ মার্চ যেহেতু ইহুদিদের বিরুদ্ধে ধর্মান্তর বা স্পেন থেকে বিতাড়নের ডিক্রি জারি করা হয় সেহেতু পরের দিনটি অর্থাৎ এপ্রিলের ১ তারিখটি তাদের জন্য নিশ্চয়ই বেদনাবহ হওয়ার কথা। হয়েছেও তাই। এদিনটি ইহুদিদের জন্য অত্যন্ত নারকীয় যন্ত্রণার। এদিনটিকে তারা ভুলতে পারেনি শত শত বছর পরেও। আজো তারা ইতিহাসের এ দিনটিকে বেদনার সঙ্গে স্মরণ করে।
যেহেতু তারা ইহুদি তাই একটা সময় তারা কুটিল সিদ্ধান্ত নেয় যে, এদিনটি কেবল আমরাই স্মরণ করবো না, কৌশলে আমাদের সঙ্গে মুসলমানদেরও কান্নাকাটি করাবো। নিজেদের অজান্তে তারাও আমাদের ব্যথায় সমব্যথী হবে। কোনো মুসলিম দেশে ইহুদিরা সমাদৃত না হতে পারে তাই বলে ইহুদিদের ইতিহাস তো অপাঙক্তেয় নয়। সেগুলো মুসলিম দেশগুলোতে তারা ঢুকাতে হবে। তবে সাপ্লাই প্রক্রিয়াটা হতে হবে আবেগী এবং ধর্মীয় হামদর্দির সাথে। কেননা ধর্ম মানেই তো স্পর্শকাতর বিষয়। ভুল-চুক হলেও যদি তার ভেতর যথেষ্ট পরিমাণ আবেগ থাকে তবে তা সমাদরে সমাদৃত হয় মুসলমানদের কাছে। কার ঠ্যাকা পড়েছে ইতিহাস ঘাটার! স্পেনে মুসলমানদের পুড়িয়ে মারা হয়েছে- এটাই সাফকথা। এই সুযোগে ইহুদিরা ঢুকিয়ে দিয়েছে তাদের ইতিহাস। বাইরে মলাট লাগিয়ে দিয়েছে- ১ লা এপ্রিল : স্পেনে মুসলমানদের বোকা বানিয়ে অগ্নিদগ্ধ করে মারার দিন। ইহুদিরা এখানে আরেকটি সুবিধা পেয়েছে, যেহেতু স্পেনে মুসলমানদের পরাজয়, ধর্মান্তর এবং দেশান্তরও প্রায় সমসাময়িক তাই এ বিষয়টিকে খুব সহজেই কাজে লাগিয়েছে তারা। অর্ধশিক্ষিত উপমহাদেশের মানুষ তো আর এতো ইতিহাস ঘাটতে যায় না, তাদেরকে কেবল ধর্মের কথা বলে একটু নাড়া দিলেই হয়, তারা ঝড়ের মতো নড়তে থাকে। কেননা এদেশে ধর্মের কল খুব অল্প বাতাসেই নড়ে। ফলে চতুর ইহুদিরা তাদের বেদনার ইতিহাসকে মুসলমানদের বেদনার ইতিহাস বানিয়ে ঢুকিয়ে দিয়েছে মুসলিমসমাজে। কারণ এদেশে ধর্মের লেবাস পরে ইহুদিদের টাকা খাওয়া পাবলিকের অভাব নেই। সুতরাং এইতো সুযোগ!
দাও, মুসলমানদের ধর্মীয় আবেগে ঢুকিয়ে দাও ইহুদি কান্না। মুসলমানদের চোখ দিয়ে ঝরবে ছয়শো বছয় আগের বিতাড়িত ইহুদিদের জন্য শোকাশ্রু। ইহুদিদের জন্য এর চেয়ে পরম চাওয়া আর কী হতে পারে! প্রতি পহেলা এপ্রিলে মুসলমানদের বড়ো বড়ো ধর্মীয় নেতা, আলেম, যুবক-যুবতীরা ইহুদিদের বেদনায় কান্নাকাটি করে। ইতিহাস বিকৃতির এমন নজির আর কয়টা পাওয়া যায়? আর কয়জনই বা পারে সত্য না জেনে কেবল আবেগের যুক্তিহীন বাণে নিজেদের ধর্মকে মিথ্যার কাছে বিকিয়ে দিতে ? ভাগ্য ভালো যে ইসরাইলকে বাংলাদেশ স্বীকৃতি দেয়নি, নইলে হয়তো অনেক আগেই বাংলাদেশের অনেক আলেম-ওলামা আর ইসলামপন্থীরা ইহুদি ইতিহাস তোষণ করার বদৌলতে ঢাকা টু তেলআবিবের বিমান টিকেট পেয়ে যেতেন।
আমরা সঠিকভাবে জানি না ঠিক কবে কীভাবে ইহুদিদের এই বিতাড়নের ইতিহাস আমাদের মুসলিমসমাজে প্রচলন করা হয়েছে, তবে এর প্রচলন যে খুব বেশিদিনের নয় তা অনুমান করা যায়। কেননা বিগত একশো বছরে মুসলমানদের বাংলা সাহিত্যে এপ্রিল ফুলবিষয়ক কোনো রচনা চোখে পড়ে না। পড়ার কথাও না। এর কারণ হলো, ইহুদিদের সর্বপ্রথম নিজস্ব ভূখন্ড ইজরাইল প্রতিষ্ঠা পায় ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে এবং এর পর থেকেই তারা মূলত বিশ্বব্যাপী তাদের নানামুখী ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রম শুরু করে। এরই আওতায় সম্ভবত তারা মুসলমানদের ইতিহাস বিকৃতির কাজটিও সুচারুরূপে সম্পন্ন করে। সুতরাং অনুমান করা যায় যে, ইতিহাস বিকৃতির এই কুকর্মটি বিগত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকের পরে ঘটেছে। ইজরাইল প্রতিষ্ঠার আগে ইহুদিরা ইউরোপব্যাপী দৌঁড়ানির ওপর ছিলো। তখন তাদের দ্বারা ইতিহাস নিয়ে এতো বৃহৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব ছিলো না বলেই মনে হয়। তবে এমনও হতে পারে, ইতিহাস বিকৃতির বিষয়টিকে ইহুদি ঐতিহাসিকরা আগে থেকেই সাজিয়ে রেখেছিলো এবং ইজরাইল প্রতিষ্ঠার পর সেগুলো বিভিন্ন মুসলিম দেশে সাপ্লাই করা শুরু করে।
এখানে আরেকটি সম্ভাবনার কথা বলা যেতে পারে। বিশেষ করে সেলিব্রেটিদের মুসলিম হওয়া এবং পাশ্চাত্যে ইসলাম দ্রুত অগ্রসরমান হওয়ার খবর নিয়ে। এগুলো বিধর্মীরা প্রচার করে মুসলিমদের মাঝে এমন ধারনা সৃষ্টি করে, সারাবিশ্বে ইসলাম খুব ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছে; সুতরাং মুসলিমবিশ্বের চিন্তার কিছু নেই। সেই সঙ্গে এগুলো দিয়ে অন্যান্য বিধর্মীদেরও উস্কে দেয়া হয়, যেনো তারা ইসলামের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পারে। যেমন ডেনমার্কের আন্দ্রে ব্রেভিক। যে চরম মুসলিমবিদ্বেষে গুলি করে খুন করেছিলো প্রায় একশো নিরীহ মানুষকে। সুতরাং এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না।
হাফেজ মাওলানা সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর
আলেম, সাংবাদিক, সাবেক সহযোগী সম্পাদক, সপ্তাহিক লিখনী
আলেম, সাংবাদিক, সাবেক সহযোগী সম্পাদক, সপ্তাহিক লিখনী
No comments:
Post a Comment