ইসলামী পোশাকের মূলনীতি

ইসলামী পোশাকের মূলনীতি
মুহাম্মদ হামিদুল ইসলাম আজাদ


আমাদের দেশে বর্তমানে সূন্নাতী লেবাস ,পোশাক-পরিচ্ছেদ বলে এক ধরনের বিশেষ কাটিং ও বিশেষ পরিমানের লম্বা কোর্তা পরিধান করা হচ্ছে । প্রচার করা হচ্ছে যে, এই হলো সূন্নাতী লেবাস ,পোশাক-পরিচ্ছেদ । আর যে ব্যক্তি এ সূন্নাতী লেবাস ,পোশাক-পরিচ্ছেদ পরবেনা সে ফাসেক বলে বিবেচিত হবে এবং এমন ব্যক্তি যদি আলিম হয়, তাহলে তার পেছনে নামায পড়া জায়েয হবেনা । এ ধারণার  করণে সমাজের এক বিশেষ শ্রেণীর লোক - আলিম ও পীরগণ এ ধরনের বিশেষ কাটিং ও বিশেষ পরিমানের লম্বা কোর্তা পরিধান করা কে সূন্নাহ মনে করেণ, সূন্নাতী

লেবাস ,পোশাক-পরিচ্ছেদ বলই তারা এর প্রচারও করেন । শুধু নিজেরাই তা
পরিধান করে এমন নয়, বরং তারা তাঁদের অনুসারী, ছাত্র, মুরীদনকেও অনুরুপ
বিশেষ কাটিং ও বিশেষ পরিমানের লম্বা কল্লিদান কোর্তা পরিধান করতে বাধ্য
করে থাকেন ।
কিন্তু প্রশ্ন এই যে, সূন্নাতী লেবাস ,পোশাক-পরিচ্ছেদ বলতে কি বুঝায় ?
কোনো বিশেষ কাটিং এর এবং বিশেষ লম্বা মাপের জামা পরিধান করা কি সত্যিই
সূন্নাত ? সে সূন্নাত কোন দলিলের ভিত্তিতে প্রমাণিত হলো ? কুরআন থেকে ?
হাদীস থেকে ? কুরআন ও হাদীসের আলোকে আমরা বিষয়টি জানার ও বুঝার চেষ্টা
করব ইনশ আল্লাহ ।
মহান আল্লাহ সূরা আ’রাফের ২৬ ও ২৭ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেছেন,

يَا بَنِي آدَمَ قَدْ أَنزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِي
سَوْآتِكُمْ وَرِيشًا ۖ وَلِبَاسُ التَّقْوَىٰ ذَٰلِكَ خَيْرٌ ۚ ذَٰلِكَ
مِنْ آيَاتِ اللَّهِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ

হে বনী আদম ! তোমাদের শরীরের লজ্জাস্থানগুলো ঢাকার এবং তোমাদের দেহের
সংরক্ষণ ও সৌন্দর্য বিধানের উদ্দেশ্যে আমি তোমাদের জন্য পোশাক নাযিল
করেছি ৷ আর তাকওয়ার পোশাকই সর্বোত্তম ৷ এই আল্লাহর নিদর্শনগুলোর
অন্যতম, সম্ভবত লোকেরা এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে ৷ সূরা আ’রাফের ২৬

يَا بَنِي آدَمَ لَا يَفْتِنَنَّكُمُ الشَّيْطَانُ كَمَا أَخْرَجَ
أَبَوَيْكُم مِّنَ الْجَنَّةِ يَنزِعُ عَنْهُمَا لِبَاسَهُمَا
لِيُرِيَهُمَا سَوْآتِهِمَا ۗ إِنَّهُ يَرَاكُمْ هُوَ وَقَبِيلُهُ مِنْ
حَيْثُ لَا
تَرَوْنَهُمْ ۗ إِنَّا جَعَلْنَا الشَّيَاطِينَ أَوْلِيَاءَ لِلَّذِينَ
لَا يُؤْمِنُونَ

হে বনী আদম ! শয়তান যেন তোমাদের আবার ঠিক তেমনিভাবে বিভ্রান্তির মধ্যে
নিক্ষেপ না করে যেমনভাবে সে তোমাদের পিতামাতাকে জান্নাত থেকে বের করেছিল
এবং তাদের লজ্জাস্থান পরস্পরের কাছে উন্মুক্ত করে দেবার জন্যে তাদেরকে
বিবস্ত্র করেছিল ৷ সে ও তার সাথীরা তোমাদেরকে এমন জায়গা থেকে দেখে যেখান
থেকে তোমরা তাদেরকে দেখতে পাও না ৷ এ শয়তানদেরকে আমি যারা ঈমান আনে না
তাদের অভিভাবক করে দিয়েছি ৷ সূরা আ’রাফের ২৭
এ আয়াতগুলোতে যে কথাগুলো বলা হয়েছে তা থেকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সত্য
সুষ্পষ্ট হয়ে সামনে ভেসে উঠেছেঃ
একঃ পোশাক মানুষের জন্যে কোন কৃত্রিম জিনিস নয় । বরং এটি মানব প্রকৃতির
একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবী । আল্লাহ মানুষের দেহের বহির্ভাগে পশুদের মত কোন
লোমশ আচ্ছাদন জন্মগতভাবে তৈরী করে দেননি । বরং লজ্জার অনুভূতি তার
প্রকৃতির মধ্যে গচ্ছিত রেখে দিয়েছেন । তিনি মানুষের যৌন অংগগুলোকে
কেবলমাত্র যৌনাংগ হিসেবেই তৈরী করেন না বরং এগুলোকে "সাওআত" ও বানিয়েছেন
। আরবী ভাষায় "সাওআত" এমন জিনিসকে বলা হয় যার প্রকাশকে মানুষ খারাপ মনে
করে । আবার এ প্রকৃতিগত লজ্জার দাবী পূরণ করার জন্যে তিনি মানুষকে কোন
তৈরি করা পোষাক দেননি । বরং তার প্রকৃতিকে পোশাক ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ
করেছেন ,--- যাতে নিজের বুদ্ধি ব্যবহার করে সে প্রকৃতির এ দাবীটি উপলব্ধি
করতে পারে এবং আল্লাহর সৃষ্ট উপাদান ও উপকারণ সমূহ কাজে লাগিয়ে নিজের
জন্যে পোশাক তৈরী করতে সক্ষম হয় ।
দুইঃ এ প্রাকৃতিক ও জন্মগত উপলব্ধির প্রেক্ষিতে মানুষের জন্যে পোশাকের
নৈতিক প্রয়োজন অগ্রগণ্য । অর্থাৎ প্রথমে সে "সাওআত" তথা নিজের
লজ্জাস্থান আবৃত করবে । আর তার স্বভাবগত চাহিদা ও প্রয়োজন দ্বিতীয়
পর্যায়ভুক্ত । অর্থাৎ তারপর তার পোশাক তার জন্যে "রীশ", অর্থাৎ দৈহিক
সৌন্দর্য বিধান করবে এবং আবহাওয়ার প্রভাব থেকে তার দেহ সৌষ্ঠবকে রক্ষা
করবে । এ পর্যায়েও মানুষ ও পশুর ব্যাপার স্বভাবতই সম্পূর্ণ ভিন্ন । পশুর
শরীরের লোমশ আচ্ছাদন মূলত তার জন্যে "রীশ" অর্থাৎ তার শরীরের শোভা
বর্ধন ও ঋতুর প্রভাব থেকে তাকে রক্ষা করে । তার লোমশ আচ্ছাদন তার
লজ্জাস্থান ঢাকার কাজ করে না । কারণ তার যৌনাংগ আদতে তার সাওআত বা
লজ্জাস্থান নয় । কাজেই তাকে আবৃত করার জন্যে পশুর স্বভাবও প্রকৃতিতে কোন
অনুভূতি ও চাহিদা থাকে না এবং তার চাহিদা পূরণ করার উদ্দেশ্যে তার জন্যে
কোন পোশাকও সৃষ্টি করা হয় না । কিন্তু মানুষ যখন শয়তানের নেতৃত্ব গ্রহণ
করলো তখন ব্যাপারটি আর উল্টে গেলো । শয়তান তার এ শিষ্যদেরকে এভাবে
বিভ্রান্ত করতে সক্ষম হলো যে, তোমাদের জন্যে পোশাকের প্রয়োজন পশুদের
জন্য পোশাকের প্রয়োজনের সমপর্যায়ভুক্ত , আর পোশাক দিয়ে লজ্জাস্থান
ঢেকে রাখার ব্যাপারটি মোটেই কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয় । বরং পশুদের অংগ
-প্রত্যংগ যেমন তাদের লজ্জাস্থান হিসেবে বিবেচিত হয় না, ঠিক তেমনি
তোমাদের এ অংগ -পত্যংগ গুলোও লজ্জাস্থান নয় বরং এগুলো নিছক যৌনাংগ ।
তিনঃ মানুষের পোশাক কেবলমাত্র তার লজ্জাস্থান আবৃত করার এবং তার শারীরিক
শোভাবর্ধন ও দেহ সংরক্ষণের উপায় হবে, এতটুকুই যথেষ্ঠ নয় । বরং আসলে এ
ব্যাপারে তাকে অন্তত এতটুকু মহত্তর মানে পৌছতে হবে, যার ফলে তার পোশাক
তাকওয়ার পোশাকে পরিণত হয় । অর্থাৎ তার পোশাক দিয়ে সে পুরোপুরি "সতর"
তথা লজ্জাস্থান ঢেকে ফেলবে । সৌন্দর্য চর্চা ও সাজসজ্জার মাধ্যমে শরীরের
শোভা বর্ধন করার ক্ষেত্রে তা সীমা অতিক্রম করে যাবে না বা ব্যক্তির
মর্যাদার চেয়ে নিম্ন মানেরও হবে না । তার মধ্যে গর্ব, অহংকার ও
আত্মম্ভরিতার কোন প্রদর্শনী থাকবে না । আবার এমন কোন মানসিক রোগের
প্রতিফলনও তাতে থাকবে না । যার আক্রমণের ফলে পুরুষ নারীসূলভ আচরণ করতে
থাকে ,নারী করতে থাকে পুরুষসূলভ আচরণ এবং এ জাতি নিজেকে অন্য এক জাতির
সদৃশ বানাবার প্রচেষ্টায় নিজের নিজের হীনতা ও লাঞ্ছনার জীবন্ত প্রতীকে
পরিণত হয় । যেসব লোক নবীদের প্রতি ঈমান এনে নিজেদেরকে পুরোপুরি আল্লাহর
পথনির্দেশনার আওতাধীন করে দেয়নি তাদের পক্ষে পোশাকের ব্যাপারে এ কাংখিত
মহত্তর মানে উপনীত হওয়া কোনক্রমেই সম্ভব নয় । যখন তারা আল্লাহর
পথনির্দশনা গ্রহণে অসম্মতি জানায় তখন শয়তানদেরকে তাদের পৃষ্ঠপোষক ও
অভিভাবক বানিয়ে দেয়া হয় এবং এ শয়তান তাদেরকে কোন না কোনভাবে ভূল
-ভ্রাণ্তি ও অসৎকাজে লিপ্ত করেই ছাড়ে ।
চারঃ দুনিয়ার চারদিকে আল্লাহর যেসব অসংখ্য নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে এবং
যেগুলো মহাসত্যের সন্ধানলাভের ব্যাপারে মানুষকে সাহায্য করে, পোশাকের
ব্যাপারটিও তার অন্যতম । তবে এখানে শর্ত হচ্ছে , মানুষের নিজের তা থেকে
শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে । ওপরে আমি যেসব সত্যের দিকে ইংগিত করেছে
সেগুলোকে একটু গভীর দৃষ্টিতে বিশ্লেষণ করলে পোশাক কোন দৃষ্টিতে
আল্লাহর একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন তা সহজেই অনুধাবন করা যেতে পারে ।
আললাহ তায়ালা বলেন, আমি তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের
লজ্জা স্থান আবৃত করে এবং অবতীর্ণ করেছি সাজ সজ্জার বস্ত্র এবং
পরহেজগারির পোশাক, এটি সর্বোত্তম ।’ অন্য দিকে বেহায়াপনা, বেল্লাপনা ও
উলঙ্গপনাকে হারাম করা হয়েছে । একই সূরার ৩৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ ইরশাদ
করেছেন,
‘আপনি বলে দিন, আমার পালনকর্তা প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীল বিষয়গুলো হারাম
করেছেন । এটি আল্লাহর কুদরতের অন্যতম নিদর্শন, যাতে তারা চিন্তা ভাবনা
করে । পোশাক ব্যবহারের উদ্দেশ্য বিশ্লেষণ করলে নিচের কারণগুলো আমাদের
সামনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে ।
১ . প্রতিকূল আবহাওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করা : আবহাওয়ার প্রতিকূলতায়
প্রকৃতি বিশ্বব্যাপী এক নয় । গরম দেশের পোশাক আর শীতপ্রধান দেশের পোশাক
যে এক হবে না তা ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না । তাই প্রাথমিকভাবে মানুষ তার
পরিবেশ অনুসারে পোশাক বেছে নেয় ।
২ . লজ্জাস্থানকে ঢাকা : লজ্জাস্থানের পরিমাণ বোধ ভিন্ন হতে পারে ;
কিন্তু লজ্জাস্থানকে আবৃত করা মানুষের একটি সহজাত প্রবৃত্তি ।
৩ . নিজেকে বা শ্রেণীকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করা : সভ্যতার একটি অবদান হলো
ইউনিফর্ম । ইউনিফর্ম হিসেবে পোশাক ব্যবহার করে বিভিন্ন শ্রেণীর
অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা এবং সমতা বিধান করাসহ উক্ত গোষ্ঠী বা শ্রেণীকে অন্য
গোষ্ঠী বা শ্রেণী থেকে পৃথকভাবে চিহ্নিত করা হয় ।
৪ . সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা : বেশভূষা মানুষের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে ।
সমাজজীবনকে করে সুশৃঙ্খল ।

পোশাক ব্যবহারের উদ্দেশ্য সম্পর্কে কুরআনের বর্ণনা :

আল্লাহ তায়ালা পোশাক ব্যবহারের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন,

وَاللَّهُ جَعَلَ لَكُم مِّمَّا خَلَقَ ظِلَالًا وَجَعَلَ لَكُم مِّنَ
الْجِبَالِ أَكْنَانًا وَجَعَلَ لَكُمْ سَرَابِيلَ تَقِيكُمُ الْحَرَّ
وَسَرَابِيلَ تَقِيكُم بَأْسَكُمْ ۚ كَذَٰلِكَ يُتِمُّ نِعْمَتَهُ
عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تُسْلِمُونَ

তিনি নিজের সৃষ্ট বহু জিনিস থেকে তোমাদের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করেছেন ,
পাহাড়ে তোমাদের জন্য আশ্রয় তৈরি করেছেন এবং তোমাদের এমন পোশাক দিয়েছেন,
যা তোমাদের গরম থেকে বাঁচায় আবার এমন কিছু অন্যান্য পোশাক তোমাদের
দিয়েছেন যা পারস্পরিক যুদ্ধে তোমাদের হেফাজত করে ৷ এভাবে তিনি তোমাদের
প্রতি তাঁর নিয়ামতসমূহ সম্পূর্ণ করেন, হয়তো তোমরা অনুগত হবে ৷ নাহল : ৮১
হে আদাম সন্তানগণ , আমি তোমাদের পোশাক - পরিচ্ছদ দিয়েছি লজ্জাস্থান ঢাকার
ও বেশভূষার জন্য । আ’রাফ : ২৬
আমাদের পর্যবেক্ষণ এবং আল-কুরআনে বর্ণিত উদ্দেশের মধ্যে মৌলিক কোনো
পার্থক্য নেই । প্রতিকূল আবহাওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করার কথা বলে স্বয়ং
আল্লাহপাক ভৌগোলিক কারণে বিশ্বব্যাপী পোশাকের বিভিন্নতার স্বীকৃতি
দিয়েছেন । ভৌগোলিক কারণেই বিশ্বব্যাপী পোশাকের একই ডিজাইন নির্ধারণ করা
বিজ্ঞানসম্মত নয় । বিজ্ঞানের আধার মহান আল্লাহপাক কুরআনে তা নির্দেশও
করেননি ।
দীনের ক্ষেত্রে ইসলাম প্রতিটি বিন্দুতে অনঢ় হলেও শরিয়তি বিধানের ক্ষেত্রে
ইসলাম সেভাবে অনঢ় না হয়ে সীমানা নির্ধারণ করেছে । তবে সীমানার ক্ষেত্রে
অনঢ় । যেহেতু হজরত মুহাম্মদ সা. শেষ নবী, তাই ইসলাম অনাগত ভবিষ্যতের
সবদিক খোলা রেখে শুধু জীবনের বিভিন্ন ব্যবহারিক দিকের চুতসীমা নির্ধারণ
করেছে । সীমার ভেতর মুমিনের আছে স্বাধীনতা । ইজতিহাদ করার অধিকারও এই
সীমার মধ্যে । পোশাক-পরিচ্ছেদের ব্যাপারে কুরআন ও হাদীসে যে, মৌলিক বিধান
বা সীমারেখা দেয়া আছে তা ঠিক রেখে আমরা স্বাধীন ভাবে আমাদের
পোশাক-পরিচ্ছেদ নির্বাচন করে তা পরিধান করতে পারি । করণ ইসলাম এক্ষেত্রে
আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছে । এখন আমাদের জানতে হবে পোশাক-পরিচ্ছেদের
ব্যাপারে কুরআন ও হাদীসে কি বিধান দেয়া আছে ।

পোশাকের কুরআনিক মৌলিক বিধান :

১ . লজ্জাস্থান তথা সতর আবৃতকারী পোশাক হতে হবে :

قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ

(মুমিনদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থানসমূহ
হেফাজত করে । নূর : ৩০

২ . পোশাক অপচয় ও অহমিকাপূর্ণ হবে না :

يَا بَنِي آدَمَ خُذُوا زِينَتَكُمْ عِندَ كُلِّ مَسْجِدٍ وَكُلُوا
وَاشْرَبُوا وَلَا تُسْرِفُوا ۚ إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ

হে বনী আদম ! প্রত্যেক ইবাদাতের সময় তোমরা নিজ নিজ সুন্দর সাজে সজ্জিত
হও ৷ আর খাও ও পান করো কিন্তু সীমা অতিক্রম করে যেয়ো না , আল্লাহ সীমা
অতিক্রমকারীদেরকে পছন্দ করেন না ৷ আ’রাফ : ৩১

৩ . মহিলাদের পোশাকে মাথা, বক্ষ এবং গ্রীবা আবৃতকারী কাপড় থাকতে হবে :

وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ
فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا ۖ
وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ ۖ

আর হে নবী ! মু’মিন মহিলাদের বলে দাও তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত করে
রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানগুলোর হেফাজত করে আর তাদের সাজসজ্জা না দেখায়,
যা নিজে নিজে প্রকাশ হয়ে যায় তা ছাড়া ৷ আর তারা যেন তাদের ওড়নার আঁচল
দিয়ে তাদের বুক ঢেকে রাখে ৷ তারা যেন তাদের সাজসজ্জা প্রকাশ না করে ৷ আন
নূর : ৩১
কোরআনিক বিধানের পর আমরা পাই রাসুল স . সুন্নাহ থেকে পোশাকের ব্যবহারিক
সীমা । অনেকে মনে করেন রাসুলের স . পোশাক ছিল ৬ষ্ঠ শতাব্দীর আরবের
প্রচলিত পোশাক । প্রকৃত ঘটনা তা নয় । রাসুলের স . পোশাক এক ছিল না ।
রাসুলুল্লাহর স . পোশাক ছিল এক আল্লাহতে বিশ্বাসী তাকওয়ার পোশাক ; কিন্তু
একই আবহাওয়া ও দেশে বাস করার পরও কাফিরদের পোশাক ছিল মুশরিকি চিন্তায়
সিক্ত ।
রাসুলুল্লাহ স. এবং সাহাবিগণ যে একটিমাত্র ডিজাইনের পোশাক পরতেন এমন নয় ।
হাদিস শাস্ত্র অধ্যয়ন করলে আমরা অনেক ধরনের পোশাকের নাম দেখতে পাই । যেমন
কামিস (জামা), কাবা বা কোর্তা (কোট জাতীয় জামা), ইজার (সেলাইবিহীন
লুঙ্গি). রিদা (চাদর), তুব্বান (হাফ প্যান্ট বা হাফ পায়জামা, জাঙ্গিয়া),
জুব্বা, সারাবিল (পায়জামা, ফুলপ্যান্ট, সালোয়ার), খিমার (ওড়না), জেলবাব
ইত্যাদি । রাসুল সা. নিজেও যুদ্ধে, সফরে, অনুষ্ঠানে, ঈদগাহ, মেহমানদের
সাথে সাক্ষাতের সময় সুবিধাজনক পোশাক পরিধান করেছেন ।
তবে দৈনন্দিন জীবনে রাসুল সা. প্রায় সময় ইজার (সেলাইবিহীন লুঙ্গি) এবং
রিদা (চাদর) পরিধান করতেন । আবু বুরদাহ রা. বর্ণনা করেছেন, আয়েশা রা.
একখানা চাদর ও মোটা কাপড়ের একটি ইজার নিয়ে আমাদের নিকট এলেন এবং বললেন,
যখন নবী স. ওফাত যান, তখন এ দু’টি পোশাক তার পরিধানে ছিল । সহি বুখারি
বিভিন্ন বর্ণনা থেকে এটা খুবই স্পষ্ট যে, রাসুলল্লাহ সা. তত্কালীন আরব
দেশের পোশাককে বাতিল না করে প্রথমত ইসলামী আকিদার আলোকে সংশোধন বা
সংস্কার করেছেন । দ্বিতীয়ত.বৈসাদৃশ্য সৃষ্টির মৌলিক নীতির ভিত্তিতে
বিশ্বব্যাপী সব সম্প্রদায় থেকে মুসলমানদের পোশাককে পৃথক করেছেন ।
যে ব্যক্তি রাসুলকে মেনে চলল, সে মূলত আল্লাহরই আনুগত্য করল - নিসা : ৮০
। তাই রাসুলুল্লাহর স . নির্দেশ অবশ্য পালনীয় । পরিভাষায় ওয়াজিব বা
সুন্নাতে মুয়াক্কাদা যাই বলা হোক না কেন, যে বিষয়ে রাসুলের স . সুস্পষ্ট
নির্দেশ আছে, সেটি অমান্য করার কোনো সুযোগ নেই ।

রাসুল সা. কর্তৃক নির্দেশিত পোশাকের আবশ্যিক বিধান :

১ . পোশাক-পরিচ্ছদ টাইট বা আঁটসাঁট হওয়া চলবে না : অর্থাৎ পোশাক হতে হবে
ঢিলে ঢালা । এমন পোশাক পরিধান করা যাবে না, যে পোশাক পরিধান করার পরও
লজ্জাস্থানের অবয়ব বোঝা যায় । রাসূলুল্লাহ সা : ওই সব লোকদের অভিসম্পাত
করেছেন যারা পোশাক পরার পরও উলঙ্গ থাকে । পোশাক টাইট, ফিট হতে পারবে না ।
২ . এমন পাতলা বা ফিনফিনে কাপড় পড়া যাবে না যে কাপড় পরার পরও
লজ্জাস্থান দেখা যায় :
হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, যেসব মহিলা অত্যন্ত পাতলা কাপড় পরিধান করেন,
কাপড়ের ওপর দিয়ে শরীর দেখা যায় তারা জাহান্নামের কঠোর শাস্তি ভোগ করবেন ।
কাপড় পরিধান করা সত্ত্বেও তারা উলঙ্গ । সুতরাং এ ধরনের কাপড় পরিধান করলে
উলঙ্গ ও বেপর্দা থাকার গোনাহ হবে । আর এ ধরনের কাপড় পরে নামাজ পড়লে নামাজ
সহি হবে না । শামি ২/৭৭, আহসানুল ফাতাওয়া ৩/৪০৩ পোশাক পাতলা হতে পারবে না

৩ . নারী-পুরুষের এবং পুরুষ-নারীর পোশাক পরিধান করা যাবে না : এখন অনেক
ছেলেদের দেখা যায় যারা হাতে বিভিন্ন রকমের বালা পরিধান করে,কানে দুল
দেয়,গলায় মালা বা চেইন পরে, পাঞ্জাবির সাথে ওড়না পরে ইত্যাদি । অন্য
দিকে মেয়েরা তাদের নিজস্ব পোশাক পরিধানের পরিবর্তে জিন্সের প্যান্ট,
টিশার্ট, স্কিন টাইট গেঞ্জি, পাঞ্জাবি ইত্যাদি পরিধান করছে । রাসূলুল্লাহ
সা: ওই সব পুরুষকে লা’নত করেছেন যারা নারীর বেশ ধারণ করে এবং ওই সব
নারীকে লা’নত করেছেন যারা পুরুষের বেশ ধারণ করে ।
মহিলাদের পোশাক পা পর্যন্ত ঢাকা হবে । সর্বোপরি পুরুষ এবং মহিলার পোশাক
পৃথক বৈশিষ্ট্যের হতে হবে ।
৪ . পুরুষের স্বর্ণের অলঙ্কার পরা যাবে না : স্বর্ণ পুরুষের জন্য হারাম ।
অনেক ছেলেদের দেখা যায় গলায় স্বর্ণের চেইন ব্যবহার করে । হাতে স্বর্ণের
আংটি পরে । বিশেষ করে বিয়েতে মেয়ে পক্ষ ছেলেকে স্বর্ণের আংটি ও গলার
চেইন দেয় । হজরত আবু হুরাইয়া রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল সা:
পুরুষকে স্বর্ণের আংটি পরতে নিষেধ করেছেন । শুধু আংটি নয়, পুরুষের জন্য
স্বর্ণের যেকোনো অলঙ্কার হারাম ।
৫ . পুরুষের রেশমি কাপড় পরিধান করা যাবে না : এটা পুরুষের জন্য হারাম ।
রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি দুনিয়াতে রেশমি কাপড় পরিধান
করবে আখেরাতে তার জন্য কোনো অংশ নেই । অন্য একটি হাদিসে ইরশাদ হয়েছে,
রেশমি কাপড় দুনিয়াতে কাফেরদের জন্য আর মুমিনদেরজন্য পরকালে । তাই কোনো
মুসলিম পুরুষ রেশমী পোশাক পরিধান করতে পারবে না ।
৬ . বিজাতীয় পোশাক পরিধান করা যাবে না : অন্য ধর্মাবলম্বীদের নির্ধারিত
ধর্মীয় প্রতীক ব্যবহার করে এমন পোশাক পরিধান করা জায়েজ নেই । যেমন
খ্রিষ্টানদের ক্রুশ অঙ্কিত পোশাক, হিন্দুদের মতো উল্কি আঁকা, সিঁদুর পরা
ইত্যাদি । রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি অন্য কোনো জাতির
অনুসরণ করবে সে সেই জাতির উম্মত হিসেবে গণ্য হবে । রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ
করেছেন, লা’নত বর্ষিত হোক সেই সব নারীর ওপর যারা উল্কি এঁকে নেয় এবং
যারা উল্কি আঁকায়, যারা চুল উঠিয়ে ফেলে, ভ্র প্লাক করে, সৌন্দর্য
বৃদ্ধির জন্য দাঁত কেটে চিকন করে, দাঁতের মধ্যে ফাঁক সৃষ্টি করে যা
আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে পরিবর্তন এনে দেয় । এক কথায় অন্য ধর্মের ধর্মীয়
পোশাক পরিধান করা যাবে না । অন্য ধর্মের ধর্মীয় পোশাক নয় এমন যে, কোনো
পোশাক ইসলামের বিধান মেনে পরিধান করা জায়েজ আছে । যেমন : শাট,প্যান্ট,
কোট , কমপিলিট ডেরেছ ইত্যাদি ।
৭ . বেশি চাকচিক্য পোশাক পরিধান করা যাবে না, যাতে বিপরীত লিঙ্গকে আকৃষ্ট
করে : নারী-পুরুষ উভয়ই পর নারী বা পর পুরুষকে আকৃষ্ট করার জন্য বেশি
চাকচিক্য পোশাক পরিধান করা যাবে না । বিশেষ করে নারীরা এ ব্যাপারে সতর্ক
থাকবে । মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘তারা যেন (নারীরা) যা সাধারণত
প্রকাশমান এমন সৌন্দর্য ছাড়া অতিরিক্ত সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে বেড়ায়
।’ আল-কুরআন পোশাক এমন হবে না যে ইবাদতের সময় মনোযোগ আকর্ষণ করে । কাপড়ে
কোনো প্রাণীর ছবি রাখা যাবে না ।
৮ . পুরুষের টাকনুর নিচে পোশাক পরিধান করা যাবে না : আজকাল অধিকাংশ
পুরুষকে দেখা যায় তারা তাদের প্যান্ট পায়ের পাতা পর্যন্ত ঝুল দেয় । এর
মধ্যে যারা নামাজি তারা নামাজের সময় তাদের প্যান্ট টাকনু পর্যন্ত
গুছিয়ে নেয় । আসলে টাকনু পর্যন্ত কাপড় পরা পুরুষদের সব সময়ের জন্য
আবশ্যক, শুধু নামাজের সময় নয় । রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেছেন, ‘যেসব
পুরুষ অহঙ্কারের (ফ্যাশনের) জন্য টাকনুর নিচে কাপড় পরে মহান আল্লাহ
কিয়ামতের দিন তাদের দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না ।’ সহী বুখারী
পুরুষের পোশাক পায়ের গিরার নিচে ঝুলানো যাবে না । পুরুষদের পোশাক পায়ের
গিরার নিচে ঝুলিয়ে পরার ক্ষেত্রে অহংকারকে অনেকে শর্ত হিসেবে মনে করেন ।
বলা হয়ে থাকে, অহংকার না থাকলে ঝুলিয়ে পরা যাবে । কিন্তু বহু হাদিস আছে,
যেখানে অহংকারকে শর্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি ।
পূর্বোক্ত পোশাকের নীতিমালা মেনে চললে বর্তমানে দেশে বিরাজমান অস্থিরতা
অনেকাংশে কমবে । টিনেজার ও যুব সমাজকে তাদের সঠিক পথে চালনা করা সহজ হবে
। তাদেরকে চারিত্রিক অবক্ষয়, ঝরে পড়া সর্বোপরি নেশা থেকে বাঁচানোর
সম্ভব হবে । তা ছাড়া আমরা আমাদের জাতি সত্তা ও ধর্মীয় সংস্কৃতি রক্ষা
করতে পারব । নচেৎ আমাদের ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণুর জন্য অপেক্ষা করতে হবে । অধিক
অস্থিরতার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ।
মহান আল্লাহ সূরা আ’রাফের ২৬ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেছেন, ‘হে বনি-আদম !
আমি তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জা স্থান আবৃত করে
এবং অবতীর্ণ করেছি সাজ সজ্জার বস্ত্র এবং পরহেজগারির পোশাক, এটি
সর্বোত্তম ।’ অন্য দিকে বেহায়াপনা, বেল্লাপনা ও উলঙ্গপনাকে হারাম করা
হয়েছে । একই সূরার ৩৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘আপনি বলে দিন,
আমার পালনকর্তা প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীল বিষয়গুলো হারাম করেছেন । এটি
আল্লাহর কুদরতের অন্যতম নিদর্শন, যাতে তারা চিন্তা ভাবনা করে ।

কোর্ট ও টাই পড়ার হুকুম :

যদি বুখারী বা মুসলিম শরীফের পোষাক পরিচ্ছেদ অধ্যায় পড়েন তাহলে দেখবেন
কোর্ট পোষাক হিসাবে ব্যবহার করা যাবে । আর যারা বলছেন কোট পড়া যাবে না
তারা যদি বুখারি বা মুসলিম শরীফের পোষাক পরিচ্ছেদ অধ্যায় পড়েন দেখবেন
তাদের মা বোনেরা বিপদে পরে গেছেন কারন ঐ পোষাক পরিচ্ছেদ অধ্যায় এর সাথে
শাড়ী কোন ভাবে মিলাতে পারবেন না । আর সৌদি আরবে জুব্বা পরে বালুর কারনে
– (নবী সাঃ এর সময়) বালির মধ্য নামায পড়ে নামায শেষে জুব্বা ঝারা দিলে
বালু নিমিষেই চলে যেত । টাই সর্বপ্রথম ব্যাবহিত হয় চায়না ও রোমে ।
১৬১৮ – ১৬৪৮ সালে Croatian Military Frontier ফ্রান্সে এইটা ব্যবহার করা
হয় যাতে করে তারা তাদের সৈন্য চিনতে পারে । যা আজ মানুষ পোশাক হিসেবে
ব্যবহার করছে । তাই ইসলাম যে পোশাকের মূলনীতি দিয়েছে তা মেনে কোর্ট ও টাই
পড়া যায়েজ ।

পুরুষের শিরোভূষণ পাগড়ি :

বুখারী ও মুসলিমসহ বিভিন্ন হাদীছগ্রন্থের সহীহ হাদীছসমূহের আলোকে
নিশ্চিতরূপে জানা যায়, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও
তাঁর সঙ্গী-সাহাবীরা সভা-সমাবেশ, যুদ্ধকাল ও ওয়াজ-নসীহতের সময় পাগড়ি
পরিধান করতেন । ঐতিহাসিক মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাথায় শোভা পাচ্ছিল পাগড়ি । সাহাবী জাবির ইবন
আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- دَخَلَ مَكَّةَ دَخَلَ
يَوْمَ فَتْحِ مَكَّةَ - وَعَلَيْهِ عِمَامَةٌ سَوْدَاءُ بِغَيْرِ
إِحْرَامٍ.
‘রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিজয়ের দিন ইহরাম ছাড়া
মক্কায় প্রবেশ করেন তখন তাঁর মাথায় ছিল একটি কালো পাগড়ি।’ মুসলিম : ৩৩৭৫
খুতবা প্রদানকালে তিনি পাগড়ি পরতেন । সাহাবী আমর ইবন হুরাইস রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু বলেন,

كَأَنِّى أَنْظُرُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- عَلَى
الْمِنْبَرِ وَعَلَيْهِ عِمَامَةٌ سَوْدَاءُ قَدْ أَرْخَى طَرَفَيْهَا
بَيْنَ كَتِفَيْهِ.

‘আমি যেন রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখতে পাচ্ছি,
তিনি মিম্বরে বসে খুতবা দিচ্ছেন আর তাঁর মাথায় শোভা পাচ্ছে একটি কালো
পাগড়ি, যার দুই প্রান্ত তিনি তাঁর দুই কাঁধে ঝুলিয়ে দিয়েছেন ।’ মুসলিম :
২/৯৯০
আরেক হাদীসে আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,

خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم - وَعَلَيْهِ مِلْحَفَةٌ ،
مُتَعَطِّفًا بِهَا عَلَى مَنْكِبَيْهِ ، وَعَلَيْهِ عِصَابَةٌ دَسْمَاءُ
حَتَّى جَلَسَ عَلَى الْمِنْبَرِ

‘রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদের উদ্দেশে ঘর থেকে
বেরিয়ে এলেন, তখন তাঁর গায়ে জড়ানো ছিল একটি চাদর যা দিয়ে তাঁর দু’কাঁধ
পেচিয়ে ছিল আর তাঁর মাথায় ছিল কালো কাপড়ের ইসাবাহ (এক ধরনের পাগড়ি) ।
এভাবেই তিনি মিম্বারে উপবিষ্ট হয়ে খুতবা প্রদান করলেন ।’ বুখারী : ৩৮০০
সাধারণ সময়ও তাঁর মাথায় সৌন্দর্য বর্ধন করত এই পাগড়ি । সালাতের
প্রস্তুতিপর্বে যখন অজু করতেন তখনও এটি তার মাথায় লেপ্টে থাকত । সাহাবী
মুগিরা ইবন শু‘বা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,

أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَوَضَّأَ فَمَسَحَ
بِنَاصِيَتِهِ وَعَلَى الْعِمَامَةِ وَعَلَى الْخُفَّيْنِ

‘নবী ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম অজু করলেন, এতে কপালের উর্ধ্বাংশে
এবং পাগড়ি ও মোজার ওপর মাসেহ করলেন ।’ মুসলিম : ৪১২
শুধু নিজেই পরেননি, সাহাবীদের তিনি বিভিন্ন সময় পাগড়ি পরিয়েও দিয়েছেন ।
বিশেষত কাউকে সেনাপতি বা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণকালে তিনি তাকে
নিজ হাতে পাগড়ি পরিয়ে দিয়েছেন বলে একাধিক সহীহ হাদীসে উল্লেখ রয়েছে ।
সাহাবায়ে কেরামের পাগড়ি : সাহাবায়ে কেরামের পাগড়ি পরিধান সম্পর্কেও বহু
হাদীছ বর্ণিত হয়েছে । প্রখ্যাত তাবেঈ আবদুল্লাহ ইবন দিনার রহ. বলেন,

أَنَّ رَجُلاً مِنَ الأَعْرَابِ لَقِيَهُ بِطَرِيقِ مَكَّةَ فَسَلَّمَ
عَلَيْهِ عَبْدُ اللَّهِ وَحَمَلَهُ عَلَى حِمَارٍ كَانَ يَرْكَبُهُ
وَأَعْطَاهُ عِمَامَةً كَانَتْ عَلَى رَأْسِهِ فَقُلْنَا لَهُ أَصْلَحَكَ
اللَّهُ إِنَّهُمُ الأَعْرَابُ وَإِنَّهُمْ يَرْضَوْنَ بِالْيَسِيرِ.
فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ إِنَّ أَبَا هَذَا كَانَ وُدًّا لِعُمَرَ بْنِ
الْخَطَّابِ وَإِنِّى سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم-
يَقُولُ « إِنَّ أَبَرَّ الْبِرِّ صِلَةُ الْوَلَدِ أَهْلَ وُدِّ أَبِيهِ
».

একবার হজের সফরে মক্কার পথে এক বেদুঈন আবদুল্লাহ ইবন ওমর রাদিয়াল্লাহু
‘আনহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন । আবদুল্লাহ তাঁকে সালাম দেন এবং তাকে নিজের
বাহন গাধার পিঠে বসিয়ে নেন । আরনিজ মাথা থেকে পাগড়ি খুলে তাকে দিয়ে দেন ।
আমরা তাঁকে বললাম, এরা তো বেদুঈন, এরা তো অল্পতেই খুশি হয় (এত বড় উপহার
দেয়ার কী দরকার ছিল ?) । আবদুল্লাহ বললেন, এর বাবা আমার পিতা উমর ইবন
খাত্তাবের বন্ধুদের অন্যতম ছিলেন । আমি রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, “পিতার সেবাযত্নের পদ্ধতি হলো, পিতার প্রিয়
মানুষদের সেবাযত্ন করা ।”’ মুসলিম : ৬৬৭৭
এছাড়া ঈদের দিনে সাহাবায়ে কেরাম সবিশেষ পাগড়ি পরতেন বলে কোনো কোনো হাদীসে
বিশেষভাবে উল্লেখ রয়েছে । মুসান্নাফ ইবন আবী শায়বা : ৫/১৭৮; বাইহাকী :
৫/১৭৪
যেভাবে পাগড়ি পরতেন :তাবেঈ আবু আবদুস সালাম রহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘আমি
আবদুল্লাহ ইবন উমরকে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কিভাবে পাগড়ি পরিধান করতেন ? তিনি বললেন, “পাগড়ি তিনি মাথায়
পেচিয়ে নিতেন, পেছন দিক থেকে গুজে দিতেন এবং প্রান্তদ্বয় উভয় কাঁধের মাঝ
বরারব ঝুলিয়ে দিতেন ।”’ মাজমাউয-যাওয়ায়েদ : ৫/১২০; হাদীছটির সূত্র
গ্রহণযোগ্য
পাগড়ির রঙ : উপর্যুক্ত মুসলিম ও বুখারীর বর্ণনাসহ অধিকাংশ হাদীসে দেখা
যায়, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায়, সফরে ও
যুদ্ধেক্ষেত্রে কালো রঙের পাগড়ি পরেছেন । কালো রঙ ছাড়া হলুদ রঙের পাগড়ি
পরেছেন বলেও কিছু দুর্বল সূত্রের হাদীছ উল্লেখ রয়েছে । তবে সাহাবায়ে
কেরামের মধ্যে হলুদ পাগড়ির প্রচলন ছিল । বদরের যুদ্ধে তাঁরা ফেরেশতাদের
মাথায় হলুদ পাগড়ি দেখেছেন বলেও গ্রহণযোগ্য সূত্রে বর্ণিত হয়েছে ।
সাহাবীদেরকে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাদা রঙের
পাগড়ি পরিয়েছেন এবং একে সমর্থন করেছেন বলেও হাদীছ বর্ণিত হয়েছে । আবদুর
রহমান ইবন আউফ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে সেনাপতি বানানোর সময় তিনি সাদা পাগড়ি
পরিয়েছেন । মুসনাদ আহমদ : ৪/৫৮৩
এছাড়া সাহাবায়ে কেরাম সবুজ ও লাল রঙের পাগড়ি পরেছেন বলেও হাদীসে উল্লিখিত হয়েছে ।
পাগড়ির ফযীলত সম্পর্কে বিশেষত নামাজের জন্য পাগড়ির ব্যবহার সম্পর্কে কোনো
গ্রহণযোগ্য সনদের হাদীছ পাওয়া যায় না । কিন্তু যেহেতু রাসূলুল্লাহ
ছাল্লাল্লাহু‘আলাইহিওয়াসাল্লাম নিজে পাগড়ি পরেছেন, অন্যদের পরিয়েছেন এবং
সাহাবায়ে কেরাম ও সবযুগের পুণ্যবানরা পাগড়ি পরেছেন তাই এবং নামাজে আল্লাহ
তায়ালা যে সৌন্দর্য অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেন তার অংশ হিসেবে পাগড়ি
ব্যবহার করা হলে তা অবশ্যই কাম্য ও উত্তম বলে গণ্য হবে । এ কথা
বলাবাহুল্য যে একজন আল্লাহর প্রতি সমর্পিত ও তাঁর রাসূল ছাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রকৃত অনুসারীর বেলায় পাগড়ি ব্যবহার ও এতে উৎসাহিত
হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে তার প্রিয় রাসূল এটি পরেছেন এবং অন্যদের
পরিয়েছেন আর তাঁর প্রকৃষ্ট অনুসারী শ্রেষ্ঠ মানুষদের কাফেলা সাহাবায়ে
কেরামও তার অনুকরণ করেছেন ।
তবে এটাকে মুত্তাকী বা পরহেজগারদের মাপকাঠি বানিয়ে ফেলা বা ইমাম-খতীবের
মাথায় পাগড়ি না দেখে ভৎসনা করা উচিত নয় । তাকওয়ার আসল পরিচয় পোশাকে নয়;
আল্লাহর ভয়ে গুনাহ বর্জনের মাধ্যমেই তাকওয়ার প্রকাশ ঘটে । ব্যক্তিগত
অভিজ্ঞতায় দেখেছি বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলেই এমন ঘটনার অবতারণা করা হয়ে
থাকে । কারণ, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাগড়ি পরেছেন
এবং পরিয়েছেন আরবীয় পোশাক ও ঐতিহ্য হিসেবে । তিনি এর জন্য কাউকে নির্দেশ
দেননি বা তার থেকে কোনো ফযীলতের বর্ণনা সঠিকভাবে প্রমাণিত নয় । আল্লাহ
আমাদেরকে শরীয়তের সব বিষয়ে সঠিক অবস্থান ও আমল করার তাওফীক দান করুন ।
আমীন

তাই দেখা যাচ্ছে, একটিমাত্র ডিজাইনের পোশাক সবার জন্য হবে, এমনটি নয় ।
বরং বলা যায়, বিশ্বের সব প্রান্তের পোশাকই ইসলামী পোশাক, যদি তা ইসলামী
আকিদার সাথে সাংঘর্ষিক না হয় পোশাকটি যদি কুরআন এবং সুন্নাহ বর্ণিত সীমা
অতিক্রম না করে এবং পোশাক পরিধান করলে অন্য কোনো সম্প্রদায়ের সদস্য
হিসেবে মনে না হয় । আমরা আমাদের পোশাক দিয়ে ইসলামী সংস্কৃতির
প্রতিনিধিত্ব করতে না পারলে, আমাদের স্বকীয়তা রক্ষায় ব্যর্থ হওয়ার
সম্ভাবনা প্রবল হতে বাধ্য । অতএব আমাদের পোশাক অন্তত এতটুকু অবশ্যই হতে
হবে, যেন আপনাকে-আমাকে দেখে অন্য সম্প্রদায়ের লোক মনে না হয় ।

লেখকঃ মুহাম্মদ হামিদুল ইসলাম আজাদ

mdhamidulislamazad@gmail.com

দাঈ, বাংলাদেশ ইসলামী দাওয়াহ সেনটার

মোবাইলঃ 01773268684

10 comments:

  1. তুমি আহ্লে খবিস । ১৮৮৫ সালে কাফেরের থেকে পয়দা হওয়া ভ্রান্ত দল আহ্লে খবিস।এই কারন মুহাম্মাদ(সঃ) জানিয়ে দিয়ে গেছে এই উম্মতের একটা বাড়তি পথভ্রষ্ট,জাহান্নামী দল হবে।এই পথভ্রষ্ট,জাহান্নামী দল হলো আহ্লে খবিশ ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনি হাদিসের উপর কেমন পটু তা কমেন্টস থেকে বুঝা যায়। ১ টা দল জান্নাতী হবে ৭২ দল জাহান্নামি। আর আপনি রাছুল (ছাঃ) এই কথা উল্টা করে ফেতনা ছড়াচ্ছেন

      Delete
  2. বাতিল বিনাশে সদা তৎপর
    Sunday, August 9, 2015
    আহলে হাদীসদের মতবাদ হল কুরআন ও সহীহ হাদীস মানা। তাহলে আপনারা তাদের বিরোধিতা করেন কেন? তাদের মতবাদে কুরআন হাদীস বিরোধী কোন মতবাদ আছে কি?
    আহলে হাদীসদের মতবাদ হল কুরআন ও সহীহ হাদীস মানা। তাহলে আপনারা তাদের
    বিরোধিতা করেন কেন? তাদের মতবাদে কুরআন হাদীস বিরোধী কোন মতবাদ আছে কি?
    জবাব
    ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ
    আমাদের দেশের নামধারী আহলে হাদীসরা যদি সত্যিই কুরআন ও হাদীসের উপর আমল করতো, তাহলে
    আমাদের তাদের বিরোধিতা করার কোন প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু তারা নাম কুরআন হাদীসের নিলেও
    অনুসরণ করে মূলত তাদের নফসের। কুরআন ও হাদীসের নয়। এর অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে।
    নিম্নের
    তাদের কয়েকটি মতবাদ উপস্থাপন করা হল, যার পক্ষে কুরআন ও সহীহ হাদীসের কোন দলিল
    তাদের কাছে নেই। কুরআন হাদীস বিরোধী আহলে হাদীস মতাদর্শের কিছু নমুনা
    নিচে উপস্থাপন করা হল–
    .মতবাদ–১
    গায়রে মুকল্লিদদের নিকট কাফেরদের জবাই করা পশু হালাল। আর তা খাওয়া জায়েজ। (নাউযুবিল্লাহ)
    {গায়রে মুকাল্লিদ আলেম নওয়াব সিদ্দিক হাসান খান সাহেব রচিত দলীলুত তালেব–৪১৩,
    গায়রে মুকাল্লিদ আলেম নূরুল হাসান খান রচিত উরফুর জাদী–২৪৭,
    নিজেদের আহলে হাদীস দাবী করে কুরআন হাদীসের রেফারেন্স না দিয়ে এখানে তারা আল্লামা শাওকানী অন্ধ
    তাকলীদ করেছেন। এ কুরআন হাদীসের দলিল ছাড়া এ তাকলীদ কি[কথিত আহলে হাদীসদের
    বক্তব্য অনুসারে] শিরকনয়?
    .মতবাদ–২
    একই সময়ে যতজন মহিলাকে ইচ্ছে বিয়ে করা জায়েজ। চার জনই হতে হবে এর কোন
    সীমা নেই। (নাউযুবিল্লাহ) {গায়রে মুকাল্লিদ আলেম নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান রচিত যফরুল লাজী–১৪১,
    ১৪২, এবং উরফুল জাদী– ১১৫}
    এ মতবাদটি সরাসরি কুরআনের আয়াত বিরোধী।
    এখানে ও কথিত আহলে হাদীসরা কুরআন হাদীস ছেড়ে আল্লামা শাওকানী এর অন্ধ তাকলীদের
    পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেছেন।
    মতবাদ–৩
    স্থলভাগের ঐ সকল প্রাণী হালাল, যার শরীরে রক্ত নেই। (নাউযুবিল্লাহ)
    {গায়রে মুকাল্লিদ আলেম নওয়াব সিদ্দীক হাসান রচিত বুদূরুল আহিল্লাহ–৩৪৮}
    এ বক্তব্যটির পক্ষে কথিত আহলে হাদীসদের পক্ষে কুরআন হাদীসের কী দলিল আছে?
    কোত্থেকে নাজীল হল এ মতবাদ?
    .মতবাদ–৪
    মৃত প্রাণী পাক, নাপাক নয়। (নাউযুবিল্লাহ) {দলীলুত তালেব–২২৪}
    কুরআন বা হাদীসের কোন বর্ণনার উপর ভিত্তিশীল এ বানানো মতবাদ?
    .মতবাদ–৫
    নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান সাহেব লিখেন-
    “শুকর নাপাক হওয়ার উপর আয়াত দিয়ে দলিল দেয়া গ্রহণযোগ্য নয়।
    বরং তা পাক হওয়াকেই বুঝায়। (নাউযুবিল্লাহ) {বুদূরুল আহিল্লাহ–১৫, ১৬}
    তাহলে কথিত আহলে হাদীসদের মতে শুকর পাক? এ মতবাদ কোত্থেকে আমদানী হল?
    .
    মতবাদ–৬
    হায়েজ নেফাসের রক্ত ছাড়া মানুষ ও সকল প্রাণীর রক্ত পাক। (নাউযুবিল্লাহ)
    {দলীলুত তালেব–২৩০, বুদুরুল আহিল্লাহ–১৮, উরফুল জাদী–১০}
    কুরআনের কোন আয়াত বা কোন হাদীসের ভিত্তিশীল এ উদ্ভট মতবাদ?
    .মতবাদ–৭
    ব্যবসায়িক সম্পদে কোন জাকাত নেই। {বুদুরুল আহিল্লাহ–১০২}
    কুরআনের কোন আয়াত বা কোন হাদীসের ভিত্তিশীল এ মতবাদ?
    .মতবাদ–৮
    হাদীসে বর্ণিত ছয়টি বস্তু ছাড়া বাকি সকল বস্তুতে সুদ নেয়া জায়েজ।
    {দলীলুত তালেব, উরফুল জাদী, আল বুনয়ানুল মারসূস, বুদূরুল আহিল্লাহ ইত্যাদি গ্রন্থ।
    কুরআনের কোন আয়াত বা হাদীস দ্বারা এ মতবাদ প্রমাণিত?
    .মতবাদ–৯
    গোসল ছাড়াই নাপাক ব্যক্তি কুরআন কারীম স্পর্শ করা, উঠানো, রাখা, হাত লাগানো জায়েজ। (নাউযুবিল্লাহ)
    {দলীলুত তালেব–২৫২, উরফুল জাদী, আল বুনইয়ানুল মারসূস}
    এ মতবাদের পক্ষে কী দলিল আছে?
    মতবাদ–১০
    স্বর্ণ রোপার অলংকারে যাকাত আবশ্যক নয়।
    {বুদুরুল আহিল্লাহ–১০১}
    কুরআন হাদীসের কোথায় আছে এ মতবাদ?
    মতবাদ–১১
    মদ নাপাক ও অপবিত্র নয়, বরং তা পাক। (নাউযুবিল্লাহ )
    {বুদূরুল আহিল্লাহ–১৫, দলীলুত তালেব–৪০৪, উরফুর জাদী–২৪৫}
    কী দলিল আছে এ মতবাদের?
    .
    মতবাদ–১২
    স্বর্ণ রোপার অলংকারে কোন সূদ নেই। তাই যেভাবে ইচ্ছে কম–বেশি করে তা ক্রয়–বিক্রয় জায়েজ।
    {দলীলুত তালেব–৫৭৫}
    কি দলিল আছে এ মতবাদের?
    মতবাদ–১৩
    বীর্য পাক। (নাউযুবিল্লাহ ) {বুদূরুল আহিল্লাহ–১৫}
    কুরআনে কারীমের কোন আয়াত বা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত এ মতবাদ?
    .মতবাদ–১৪
    সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে পড়ার আগেই জুমআর নামায পড়া জায়েজ। {বুদূরুল আহিল্লাহ–৭১}
    কোন স্থানে রাসূল সাঃ বলেছেন যে, সূর্য হেলার আগেই জুমআর নামায পড়া জায়েজ?
    এ ব্যাপারে কোন সহীহ হাদীস আছে কি?
    .মতবাদ–১৫
    জুমআর নামাযের জন্য জামাত হওয়া জরুরী নয়। যদি দুইজন ব্যক্তিও হয়,
    তাহলে একজন খুতবা পড়বে, তারপর উভয়ে মিলে জুমআর নামায পড়েনিবে।
    {বুদূরুল আহিল্লাহ– ৭২}
    কুরআন হাদীসের কোন দলিলের ভিত্তিতে এ মতবাদ প্রতিষ্ঠিত?
    .
    এছাড়াও অসংখ্য মতবাদ রয়েছে এ নামধারী আহলে হাদীসদের। যার পক্ষে কুরআন হাদীসের
    কোন দলিল তাদের কাছে নেই। অচিরেই তা বড় কলেবরে প্রকাশ করা হবে ইনশাআল্লাহ।

    ReplyDelete
  3. টাই হচ্ছে বিধর্মীদের ঐতিহ্যগত ভূষণ। ইউরোপে ছড়িয়ে পড়া তাদের এ ঐতিহ্যগত কালচারের মূলে রয়েছে থার্টি ইয়ার্স ওয়ার-এর সময় (1618-1648) যখন ক্রোয়েশীয় সেনাবাহিনী সীমান্ত থেকে তাদের ঐতিহ্যগত গ্রন্থিবদ্ধ টাই গলায় ধারণ করে–সেই থেকে তার ব্যাপক প্রচলন হয়। তা ছাড়া রাজা চতুর্দশ লুই (1646) ফরাসি আভিজাত্যের ফ্যাশন হিসেবে গলায় নেকটাই ঝুলান। তার অনুকরণে তখন থেকে তার ব্যবহার ব্যাপকতা পায়। আর ক্রমে তা ইউরোপে একটি ফ্যাশন উন্মত্ততার রূপ ধারণ করে। বিস্তারিত দেখুন উইকিপিডিয়ার নিম্নোক্ত লিঙ্কে–
    https://en.wikipedia.org/wiki/Necktie

    বলা বাহুল্য, মুসলমানদের কালচারকে বিধর্মীদের কালচারের সাথে পর্যবসিত করতে হাদীস শরীফে নিষেধ করা হয়েছে। তাই মুসলমানদের জন্য বিজাতীয় কালচারের টাই ব্যবহার বিধেয় নয়।

    আবার অনেক মুহাক্কিক টাইকে খৃস্টানদের ক্রুশের প্রতীক সাব্যস্ত করেছেন। তারা বলেন–যেমনভাবে খৃস্টানরা যীশুর শূলীবিদ্ধ হওয়ার কল্পিত বিশ্বাসকে ধারণ করে তার প্রতীকরূপে গলায় ত্রিমাথা বিশিষ্ট ক্রশপ্রতীক ধারণ করেন, তেমনি পোশাক-আভিজাত্যে তার প্রতীকী প্রতিফলনরূপে তাদের মধ্যে টাইয়ের উদ্ভব হয়েছে।

    সে হিসেবে টাই বা নেকটাইকে খৃষ্টীয় ক্রুশ প্রতীকের স্তাবক-চিহ্ন ও খৃষ্টানদের ধর্মীয় কালচার বলা যায়। এ ব্যাপারে ঐতিহাসিক বহু দলীল-প্রমাণও তারা পেশ করেন। নিম্নে তার কিছু দলীল-প্রমাণ উদ্ধৃত করা হলো–

    █ প্রখ্যাত মুসলিম লেখক কুরাইশী সাবেরী ক্রুশ প্রতীক সম্পর্কে ঐতিহাসিক ডকুমেন্ট প্রকাশ করে বলেন, “উনিশ শতাব্দীর শেষের দিকে ইউরোপীয়রা তাদের ডিকশনারী ও এনসাইক্লোপিডিয়া থেকে প্রাথমিক যে সকল বিষয় (খৃষ্টীয় জাতিসত্তার পরিচয় বহন করে এমন) বাদ দিয়েছিল, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘টাই ক্রুশের প্রতীক’-এর দলীল। ১৮৯৮ সালের পূর্বে প্রিন্টকৃত এনসাইক্লোপিডিয়ার একটি পৃষ্ঠায় বিষয়টি স্পষ্ট হয়। উক্ত পৃষ্ঠার আলোকচিত্র নিম্নে লিঙ্কে দেখুন–
    http://www.taajushshariah.com/Fatawa/tie.html

    █ টাই-এর ইতিহাস ঘেটে জানা যায়–ক্রুশের চিহ্নরূপে টাই ধর্মীয় পরিচয় হিসেবে খৃষ্টানদের মধ্যে প্রচলন লাভ করে। এরই ধারাবাহিকতায় ষোড়শ শতাব্দীর কিছু আগে ক্রুশের চিহ্ন টাইকে প্রাতিষ্ঠানিকতা দিয়ে চীন ও রোমান সেনাদের সামরিক ইউনিফর্মে অন্তর্ভূক্ত করে দেয়া হয়। তেমনিভাবে ১৬১৮ সালে অটোম্যান সাম্রাজ্য বিজয়ের পর ক্রোয়েশিয়ান সামরিক ফ্রন্টিয়ার প্যারিস পরিদর্শনে রাজা লুই চতুর্দশের সামনে ক্রুশের স্মারক-চিহ্ন টাই পরে নিজেদেরকে উপস্থাপন করেন।

    ইতিহাসের এ পরম্পরায় ১৭৯০ সালে পোপের পক্ষ থেকে সকল খৃষ্টানকে ক্রুশের প্রতীকরূপে টাই পরিধান করার জন্য বিশেষ তাকীদ দেয়া হয়। অতঃপর ১৮৫০ সালের মধ্যে সকল খৃষ্টানজাতি বিষয়টি গ্রহণ করে এবং এ ব্যাপারে পোপের আদেশ জারি করে দেয়।”

    (বিস্তারিত দেখুন : http://www.taajushshariah.com/Fatawa/tie.html)

    উল্লিখিত বর্ণনার দ্বারা স্পষ্টরূপে বুঝা যাচ্ছে–খৃষ্টানদের ধর্মীয় চিহ্ন রূপেই তাদের মধ্যে টাইয়ের প্রচলন হয়েছে। টাই পরা খৃষ্টানদের আবহমান কাল ধরে চলে আসা ধর্মীয় ঐতিহ্য। তা ছাড়া টাই যে ইউরোপে ব্যাপকভাবে প্রচলিত বিজাতীয় ভূষণ-কালচার এতে কোন সন্দেহ নেই। তাই মুসলমানদের জন্য টাই ব্যবহারকে কোনভাবেই জায়িয বলা যায় না।

    ReplyDelete
    Replies
    1. জাযাকুমুল্লাহু খায়র rid mir ভাই

      Delete
  4. তথাকথিত আহলে হাদীসদের গোড়ার কথাঃ
    “ সাইয়্যেদ আহমদ শহীদ, মাওলানা ইসমাইল শহীদ ও মাওলানা আব্দুল হাই (রহঃ) পাঞ্জাবে আগমন করার পরপরই কতিপয় বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারীর সমন্বয়ে চার মায্হাবের ইমামগণের তাক্বলীদ অস্বীকারকারী নতুন ফিরক্বাটির সূত্রপাত লক্ষ্য করা যায়, যারা হযরত সাইয়্যেদ আহমাদ শহীদ (রহঃ) এর মুজাহিদ বাহিনীর বিদ্রোহী গ্রুপের সদস্য ছিল, এদের মূখপাত্র ছিল মৌলভী আব্দুল হক্ব বেনারসী (মৃত-১২৭৫হিঃ)। তার এ ধরণের অসংখ্য ভ্রান্ত কর্মকান্ডের কারণে সাইয়্যেদ আহমদ শহীদ (রহঃ) ১২৪৬ হিজরীতে তাকে মুজাহিদ বাহিনী থেকে বহিষ্কার করেন। তখনই গোটা ভারতবর্ষের সকল ধর্মপ্রাণ জনগণ, বিশেষ করে সাইয়্যেদ আহমাদ শহীদ (রহঃ) এর খলিফা ও মুরীদগণ হারামাইন শরীফাইনের তদানীন্তন উলামায়ে কিরাম ও মুফতীগণের নিকট এ ব্যাপারে ফত্ওয়া তলব করেন। ফলে সেখানকার তৎকালীন চার মায্হাবের সম্মানীত মুফতীগণ ও অন্যান্য উলামায়ে কেরাম সর্বসম্মতিক্রমে মৌঃ আব্দুল হক্ব ও তার অনুসারীদেরকে পথভ্রষ্ট ও বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী ফিরক্বা বলে অভিহিত করেন এবং মৌঃ আব্দুল হক্বকে ক্বতল (হত্যা) করার নির্দেশ প্রদান করেন।
    (এ ফতওয়া ১২৫৪ হিজরীতে তান্বীহুদ্দাল্লীন নামে প্রকাশ করা হয়, এখনো দেশের বিশিষ্ট লাইব্রেরীতে এর কপি সংরক্ষিত রয়েছে।)
    মৌঃ আব্দুল হক্ব বেনারস পলায়ন করতঃ কোনভাবে আত্নরক্ষা পায়। সেখানে গিয়ে তার নবাবিষ্কৃত দলের প্রধান হয়ে সরলমনা জনসাধারণের মধ্যে তার বিষাক্ত মতবাদ ছড়াতে থাকে।”
    (তুহ্ফাতুল আরব ওয়াল আযমঃ পৃঃ ১৬ খঃ ২, আল-নাজাতুল কামেলাঃ পৃঃ ২১৪, তান্বীহুদ্দাল্লীন, পৃঃ ৩১)
    উপরোক্ত বিবরণ থেকে এ কথাই প্রতীয়মান হয় যে, মৌঃ আব্দুল হক্ব বেনারসী কর্তৃক ১২৪৬ হিজরীতে ভারতবর্ষে গাইরে মুক্বাল্লিদ তথা লা-মায্হাবী নামক নতুন ফিরক্বাটির সূত্রপাত হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে সে “ ওহ্হাবী ” হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু সে নিজেকে “ মুহাম্মদী ” বলে প্রচার করতো। পরবর্তীতে “ ইংরেজের বিরুদ্ধে জিহাদ করা হারাম ” এ মর্মে ফত্ওয়া দিয়ে ইংরেজের দালাল হিসেবে চিহ্নিত হয়। এবং এ সুযোগে সে সরকারী কাগজ-পত্র থেকে “ ওহ্হাবী ” নাম রহিত করে আহ্লে হাদীস নাম বরাদ্দ করতে সক্ষম হয়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, নবোদ্ভাসিত এ ফিরক্বাটিই আজ নিজেদের ব্যতীত অন্যান্য সবাইকে নবোদ্ভাসিত বা বিদ্য়া’তী বলে অপবাদ দিয়ে যাচ্ছে। এটা সত্যিই দুঃখজনক নয় কি !
    ২।
    এ মর্মে তাদের আহ্লে খবীশ দলেরই অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ও পরিচালক নবাব ছিদ্দীক্ব হাসান খানের কয়েকটি উক্তি আমাদের বক্তব্যের পক্ষে সাক্ষ্য বহন করে, যেমন তার রচিত গ্রন্থ “ তরজমানে ওহ্হাবিয়্যায় ” তিনি লিখেনঃ
    “ আমাদের নতুন মায্হাবে আযাদী (অর্থাৎ তাক্বলীদ না করা) বৃটিশ সরকারী আইনেরই চাহিদা মোতাবেক। ”
    (তরজমানে ওহ্হাবিয়্যায়ঃ পৃঃ ২/৩)

    ৩।
    আহলে হাদীস দলের একাংশের নাম “ গুরাবা আহলে হাদীস ”। এ অংশের নেতা মুহাম্মাদ মুবারকের উক্তি হলঃ
    “ গুরাবা আহলে হাদীসের ভিত্তি হযরত মুহাদ্দিসীনদের সঙ্গে মতানৈক্য করার জন্যেই রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয় বরং সাইয়্যেদ আহমদ শহীদ (রহঃ) এর বিরুদ্ধাচরণ করে ইংরেজদেরকে খুশী করাই ছিল এর বিশেষ উদ্দেশ্য। ”
    (উলামায়ে আহ্নাফ আওর তাহরীকে মুজাহিদীনঃ পৃঃ ৪৮)
    ৪।
    ভারতবর্ষে গাইরে মুক্বাল্লিদ্দের প্রধান মূখপাত্র মিঞা নযীর হুসাইনের অন্যতম শিষ্য অকীলে আহলে হাদীস্ মোলভী মুহাম্মদ হুসাইন বাটালভী লিখেনঃ
    “ ঐ আহলে হাদীস দল বৃটিশ সরকারের কল্যাণপ্রত্যাশী, চুক্তি রক্ষাকারী ও অনুগত হওয়ার অত্যন্ত উজ্জ্বল ও বলিষ্ঠ প্রমাণ হলঃ তারা বৃটিশ সরকারের অধীনে থাকা, কোন ইসলামী রাষ্ট্রের অধীনের থাকার চেয়েও উত্তম মনে করে।”
    (আল-হায়াত বা’দা্ল মামাতঃ পৃঃ ৯৩
    ৫।
    তথাকথিত সেই মোলভী মুহাম্মাদ হুসাইন ইংরেজের বিরুদ্ধে জিহাদ করার বিপক্ষে “ আল-ইক্বতিছাদ-ফী মাসাইলিল জিহাদ ” নামক গ্রন্থ রচনা করে, যাতে সে জিহাদ “ মান্ছুখ ” বা রহিত বলে ঘোষণা করে। এর ফলশ্রুতিতে সে ইংরেজের বিশ্বস্ত ও ভাড়াটে গোলামে গণ্য হয়। আর লাভ করে টাকা-পয়সার বিরাট অংক।
    (হিন্দুস্থান কী পহলী ইসলামী তাহরীকঃ পৃঃ ২১২, আহলে হাদীস আওর ইংরেজঃ পৃঃ ৮৭)
    ৬।
    তাইতো মোলভী মুহাম্মদ হুসাইন বাটালভীরই বিশিষ্ট শিষ্য মৌলভী আলতাফ হুসাইন লিখেনঃ
    “ হিন্দুস্তানে ইংরেজী গভার্মেন্ট আমরা মুসলমানদের জন্য খোদার রহমত। ”
    (আল-হায়াত বা’দাল মামাতঃ পৃঃ ৯৩)

    ReplyDelete
  5. বর্তমানে অবশ্য গাইরে মুক্বাল্লিদরা ওহ্হাবী বা সালাফী নামে আত্নপ্রকাশ করে সউদী রিয়াল, দিনার, দিরহাম উপার্জনের মোহে ব্যতিব্যস্ত। কিন্তু ১২৪৬ হিজরীতে, তাদের উদ্ভবের সূচনালগ্নে যখন তেল পেট্রোলের পয়সার জমজমাট ছিল না, ওহ্হাবীদেরই যখন দুর্দিন দুর্ভিক্ষ চলছিল, বিশেষ করে ভারতবর্ষে ইংরেজ-বিরোধী ও ইংরেজ বিতাড়নের জিহাদে যারা অংশ নিয়েছিলেন তাদেরকে ইংরেজ সরকার ওহ্হাবী বলে আখ্যায়িত করেছিল, তখন গাইরে মুক্বাল্লিদরা ওহ্হাবী নামের আখ্যা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে মরিয়া হয়ে উঠেছিল। তাই তারা তখন নিজেদের জন্য “ মুহাম্মদী ” এবং পরবর্তীতে “ আহলে হাদীস ” নাম বরাদ্দ করার সম্ভাব্য সকল অপতৎপরতা চালিয়ে গিয়েছিল। এরই অংশ হিসেবে গাইরে মুক্বাল্লিদ্দের তৎকালীন অন্যতম মুখমাত্র মৌলভী মুহাম্মদ হুসাইন বাটালভী লাহোরী বৃটিশ সরকারের প্রধান কার্যালয় এবং পাঞ্জাব, সি-পি, ইউ-পি, বোম্বাই, মাদ্রাজ ও বাঙ্গালসহ বিভিন্ন শাখা অফিসে ইংরেজ প্রশাসনের আনুগত্যতা ও বশ্যতা স্বীকার করত: তাদের জন্য “ আহ্লে হাদীস ” নাম বরাদ্দ দেয়ার দরখাস্ত পেশ করেন। এ দরখাস্তগুলোর প্রতি উত্তর সহ তারই সম্পাদনায় প্রকাশিত তৎকালীন “ এশায়াতুস সুন্নাহ ” পত্রিকায়ও প্রকাশ করা হয় যা পরে সাময়ীক নিবন্ধ আকারেও বাজারজাত করা হয়।
    ( এশায়াতুস সুন্নাহঃ পৃ: ২৪-২৬, সংখ্যা: ২, খ: ১১)
    তাদের মানসিকতা ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কিছুটা আঁচ করার জন্য পাঠক সমীপে তন্মধ্য হতে একটি দরখাস্তের অনুবাদ নিম্নে পেশ করছিঃ
    “বখেদমতে জনাব গভার্মেন্ট সেক্রেটারী,
    আমি আপনার খেদমতে লাইন কয়েক লেখার অনুমতি এবং এর জন্য ক্ষমাও পার্থনা করছি। আমার সম্পাদিত মাসিক “ এশায়াতুস সুন্নাহ ” পত্রিকায় ১৮৮৬ ইংরেজিতে প্রকাশ করেছিলাম যে, ওহ্হাবী শব্দটি ইংরেজ সরকারের নিমক হারাম ও রাষ্ট্রদ্রোহীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। সুতরাং এ শব্দটি হিন্দুস্তানের মুসলমানদের ঐ অংশের জন্য ব্যবহার সমীচিন হবে না, যাদেরকে “ আহ্লে হাদীস ” বলা হয় এবং যারা সর্বদা ইংরেজ সরকারের নিমক হালালী, আনুগত্যতা ও কল্যাণই প্রত্যাশা করে, যা বার বার প্রমাণও হয়েছে এবং সরকারী চিঠি প্রত্রে এর স্বীকৃতিও রয়েছে।
    অতএব, এ দলের প্রতি ওহ্হাবী শব্দ ব্যবহারের জোর প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে এবং সাথে সাথে গভার্মেন্টের বরাবর অত্যন্ত আদব ও বিনয়ের সাথে আবেদন করা যাচ্ছে যে, সরকারীভাবে এ ওহ্হাবী শব্দ রহিত করে আমাদের উপর এর ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হোক এবং এ শব্দের পরিবর্তে “ আহ্লে হাদীস ” সম্বোধন করা হোক।
    আপনার একান্ত অনুগত খাদেম
    আবু সাঈদ মুহাম্মদ হুসাইন
    সম্পাদক, এশায়াতুস সুন্নাহ
    দরখাস্ত মুতাবেক ইংরেজ সরকার তাদের জন্যে “ ওহ্হাবী ” শব্দের পরিবর্তে “ আহলে হাদীস ” নাম বরাদ্দ করেছে। এবং সরকারী কাগজ-চিঠিপত্র ও সকল পর্যায়ে তদের “ আহ্লে হাদীস ” সম্বোধনের নোটিশ জারি করে নিয়মতান্তিকভাবে দরখাস্তকারীকেও লিখিতভাবে মঞ্জুরী নোটিশে অবহিত করা হয়।
    সর্বপ্রথম পাঞ্জাব গভার্মেন্ট সেক্রেটারী মি: ডাব্লিউ, এম, এন (W.M.N) বাহাদুর চিঠি নং-১৭৫৮ এর মাধ্যমে ৩রা ডিসেম্বর ১৮৮৬ ইংরেজিতে অনুমোদনপত্র প্রেরণ করেন। অতপর ১৪ই জুলাই ১৮৮৮ইং সি,পি গভার্মেন্ট চিঠি নং-৪০৭ এর মাধ্যমে এবং ২০শে জুলাই ১৮৮৮ইং ইউ,পি গভার্মেন্ট চিঠি নং-৩৮৬ এর মাধমে এবং ১৪ই আগষ্ট ১৮৮৮ইং বোম্বাই গভার্মেন্ট চিঠি নং-৭৩২ এর মাধ্যমে এবং ১৫ই আগষ্ট ১৮৮৮ মাদ্রাজ গভার্মেন্ট চিঠি নং-১২৭ এর মাধ্যমে এবং ৪ঠা মার্চ ১৮৯০ইং বাঙ্গাল গভার্মেন্ট চিঠি নং-১৫৫ এর মাধ্যমে দরখাস্তকারী মৌলভী আবু সাইদ মুহাম্মদ হুসাইন বাটালভীকে অবহিত করা হয়।
    ( এশায়াতুস সুন্নাহঃ পৃ: ৩২-৩৯, সংখ্যা: ২, খ: ১১)
    কোন মুসলিম জামাতের নাম অমুসলিম, মুসলামানদের চিরশত্রু খৃষ্টান নাছারাদের মাধ্যমে বরাদ্দ করার ঘটনা ইসলামী ইতিহাসের পৃষ্ঠায় বিরল। যা কেবল হিন্দুস্তানী গাইরে মুক্বাল্লিদদেরই গৌরব ও সৌভাগ্যের বিষয় (!) তাই তারা এ ইতিহাসটা অত্যন্ত গৌরবের সহিত নিজেরদের পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ করে তৃপ্তি লাভ করেছেন।
    যেখানেই হাদীসের ব্যখ্যা সমূহে আহলে হাদীস এসেছে সেখা আহলে হাদীস মানে ব্রিটিশদের বানানো নামধারী আহলে হাদীস নয় বরং আহলে হাদীস মানে মুহাদ্দিসীন, হাদীস বিসারদ, হাদীস গবেষক। দেখুন-
    মুসনাদে আহমদ : আকসামুল আহাদীস, ১/৬৮,
    মিনহাজুততাহক্বীক, ১/১৪৮,
    মাসনাদে আবুবকর, ১/২১৪,
    মাসনাদে জোবায়ের ইবনুল আওয়াম, ৩/৪১,
    মাসনাদে আবি ইসহাক সাআদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস, ৩/৫৪,
    মাসনাদে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস, ৪/৩৩৮,
    মাসনাদে আবি হোরায়রা, ১৫/৪৫৫,
    মাসনাদে আবি সাঈদিনিল খুদরী, ১৭/৭,
    মাসনাদে আনাসবিন মালেক, ১৯/৩৫১,
    সুনানে তিরমিযি, ১/১৫, ১/১৭, ১/৪১, ১,৭৩, ১/৮৪, ১/৮৬
    সুনানে কোবরা লিল নেসাঈ, ১/৪, ১/৬৩২
    আল মুয়াত্তা, রাওয়াতে মুহাম্মদ ইবনে হাসান, ১/৯, ১/১২/, ১/১৫
    উমদাতুল ক্বারী সরহে বোখারী, ১/৫৬, ১/৮১, ১,১০৩
    মিরকাত সরহে মিশকাত, ১/২৩, ১/২৫, ৪/৪৯৩

    ReplyDelete
  6. তাদের কথিত হাদিসই আমাদের মানতে হবে কেন??? কুরআন ও হাদিসের সাথে যেটা মিলবে শুধু সেটাই আমরা আমল করব...বাতিলটা বাদ দিব।। নিজেকে সঠিক রাখব...

    ReplyDelete
  7. জাংগিয়া না পরা কি হারাম?????

    ReplyDelete