কালেমার মর্মকথা : কালেমার ফজিলত

            কালেমার মর্মকথা : কালেমার ফজিলত


কালিমার ফজিলত
এ কালেমার অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে এবং আল্লাহর নিকট এর বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। তন্মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য :

এক. যে ব্যক্তি সত্য-সত্যিই কায়মনোবাক্যে এ কালেমা পাঠ করবে আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আর যে ব্যক্তি মিছেমিছি এ কালেমা পাঠ করবে তা দুনিয়াতে তার জীবন ও সম্পদের হেফাজত করবে বটে, তবে তাকে এর হিসাব আল্লাহর নিকট দিতে হবে।
দুই. এটি একটি সংক্ষিপ্ত বাক্য, হাতেগোনা কয়েকটি বর্ণ এবং শব্দের সমারোহ মাত্র, উচ্চারণেও অতি সহজ কিন্তু কেয়ামতের দিন পাল্লায় হবে অনেক ভারী।
তিন. ইবনে হিববান এবং আল হাকেম আবু সাইদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘মূসা (আ.) একদা আল্লাহ তাআলাকে বললেন, ‘হে রব, আমাকে এমন একটি বিষয় শিক্ষা দান করুন যা দ্বারা আমি আপনাকে স্মরণ করব এবং আপনাকে আহবান করব।’ আল্লাহ বললেন, ‘হে মুসা বলো, " لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ " আল্লাহ ব্যতীত সত্যিকার কোন মাবুদ নেই।’ মুসা (আ.) বললেন, ‘এতো আপনার সকল বান্দাই বলে থাকে।’ আল্লাহ বললেন, ‘হে মুসা, আমি ব্যতীত সপ্তাকাশ ও এর মাঝে অবস্থানকারী সকল কিছু এবং সপ্ত জমিন যদি এক পাল্লায় রাখা হয় আর " لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ " এক পাল্লায় রাখা হয় তা হলে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর পাল্লা ভারী হবে। (হাকেম বলেন, হাদিসটি সহিহ)। অতএব এ হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণ পাওয়া গেল যে," لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ " হলো সবচেয়ে উত্তম জিকির।
চার. আব্দুল্লাহ বিন ওমর থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সব চেয়ে উত্তম দোয়া আরাফাত দিবসের দোয়া এবং সবচেয়ে উত্তম কথা যা আমি এবং আমার পূর্ববতী নবিগণ বলেছেন, তা হলো,
( لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ ، لَهُ الـمُـلْكُ وَ لَهُ الحَمْدُ وَ هُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ )
অর্থাৎ, ‘‘আল্লাহ ছাড়া আর কোন সত্যিকার মাবুদ নেই, তিনি একক তাঁর কোন শরীক নেই। রাজত্ব একমাত্র তাঁরই জন্য এবং প্রশংসা একমাত্র তাঁরই জন্য, তিনি সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান।’’ (তিরমিযি, কিতাবুদ দাওয়া, হাদিস নং-২৩২৪)
পাচ. এ কালেমা যে সমস্ত কিছু থেকে গুরুত্বপূর্ণ ও ভারী তার আরেকটি প্রমাণ হলো, আবদুল্লাহ বিন আমর থেকে অপর একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘কেয়ামতের দিন আমার উম্মতের এক ব্যক্তিকে সকল মানুষের সামনে ডাকা হবে, তার সামনে নিরানববইটি (পাপের) পুস্তক রাখা হবে এবং একেকটি পুস্তকের পরিধি হবে চক্ষু দৃষ্টির সীমারেখার সমান। এর পর তাকে বলা হবে, এই পুস্তকে যা কিছু লিপিবদ্ধ হয়েছে তা কি তুমি অস্বীকার কর? উত্তরে ঐ ব্যক্তি বলবে, হে রব আমি তা অস্বীকার করি না। তারপর বলা হবে, এর জন্য তোমার কোন আপত্তি আছে কিনা? অথবা এর পরিবর্তে তোমার কোন নেক কাজ আছে কিনা? তখন সে ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় বলবে, না তাও নেই। অতঃপর বলা হবে, আমার নিকট তোমার কিছু পুণ্যের কাজ আছে এবং তোমার উপর কোন প্রকার অত্যাচার করা হবে না, অতঃপর তার জন্য একখানা কার্ড বের করা হবে তাতে লেখা থাকবে,
" أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ وَ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَ رَسُوْلُهُ "
অর্থাৎ, ‘‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন সত্য মাবুদ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছ যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল।’’ তখন ঐ ব্যক্তি বিস্ময়ের সাথে বলবে, ‘হে আমার রব, এই কার্ড খানা কি নিরানববইটি পুস্তকের সমতুল্য হবে?’ তখন বলা হবে, ‘তোমার উপর কোন প্রকার অত্যাচার করা হবে না। এরপর ঐ নিরানববইটি পুস্তক এক পাল্লায় রাখা হবে এবং ঐ কার্ড খানা এক পাল্লায় রাখা হবে তখন ঐ পুস্তকগুলোর ওজন কার্ড খানার তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য হবে এবং কার্ডের পাল্লা ভারী হবে। (আত তিরমিযি, হাদিস নং ২৬৪১। আল হাকেম ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৫-৬)
ছয়. এ মহামূল্যবান কালেমার আরো ফজিলত সম্পর্কে হাফেজ ইবনে রজব তাঁর ‘কালেমাতুল ইখলাছ’ নামক গ্রন্থে দলিল প্রমাণ সহকারে বলেন, এই কালেমা হবে জান্নাতের মূল্য, কোন ব্যক্তি যদি জীবনের শেষ মূহুর্তেও এ কালেমা পাঠ করে ইন্তেকাল করলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এটাই জাহান্নাম থেকে মুক্তির একমাত্র পথ এবং আল্লাহর নিকট থেকে ক্ষমা পাওয়ার একমাত্র সম্বল। সমস্ত পুণ্য কাজগুলোর মধ্যে এ কালেমাই শ্রেষ্ঠ। এটি পাপ পঙ্কিলতাকে দূর করে, হৃদয় মনে ঈমানের বিষয়গুলোকে সজীব করে। স্ত্তপকৃত পাপ রাশির উপর এ কালেমা ভারী হবে। আল্লাহকে পাওয়ার পথে যতসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে সব কিছুকে এ কালেমা ছিন্ন-ভিন্ন করে আল্লাহর নিকট পৌঁছে দেবে। এ কালেমার স্বীকৃতি দানকারীকে আল্লাহ সত্যায়িত করবেন। নবিদের কথার মধ্যে উত্তম কথা হলো এটাই। সব চেয়ে উত্তম জিকির এটাই। এটি যেমনি উত্তম কথা তেমনি এর ফলাফল হবে অনেক বেশি। এটি গোলাম আজাদ করার সমতুল্য। শয়তান থেকে রক্ষা কবচ। কবর ও হাশরের বিভীষিকাময় অবস্থার নিরাপত্তা দানকারী। কবর থেকে দন্ডায়মান হওয়ার পর এ কালেমার মাধ্যমেই ‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎
সাত. কালেমার ফজিলতের মধ্যে আরো হচ্ছে, এই কালেমার স্বীকৃতি দানকারীর জন্য জান্নাতের আটটি দ্বার খুলে দেয়া হবে এবং সে ইচ্ছা মত যে কোন দ্বার দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে। এ কালেমার সাক্ষ্য দানকারী এর দাবি অনুযায়ী পূর্ণভাবে কাজ না করার ফলে এবং বিভিন্ন অপরাধের ফল স্বরূপ জাহান্নামে প্রবেশ করলেও অবশ্যই কোন এক সময় জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে।
ইবনে রজব (রহ) তাঁর বইতে এই কালেমার এ সব ফজিলতের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন এবং এর দলিল প্রমাণাদি পেশ করেছেন।
মুহাম্মদ মতিউল ইসলাম বিন আলী আহমদ 

No comments:

Post a Comment