এপ্রিল ফুল : ইসলাম কী বলে ?
কোন রকম চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই পশ্চিমাদের অন্ধ অনুকরণের উদগ্র বাসনা মুসলিম সমাজে যে সমস্ত প্রথার প্রচলন ঘটিয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো ‘এপ্রিল ফুল’। এই প্রথা পালনার্থে এপ্রিলের প্রথম তারিখে মিথ্যা বলে কারো সাথে প্রতারণা করা এবং ধোকা দিয়ে তাকে বোকা বানানো শুধু বৈধই মনে করা হয় না,বরং রীতিমত একে একটি পারদর্শিতা এবং কুশলতা মনে করা হয়। অন্যকে যে যত বেশী ধোকা দিয়ে বোকা বানাতে পারবে তাকে তত বেশী প্রশংসার যোগ্য ও পহেলা এপ্রিলের ইতিহাস থেকে যথাযথ শিক্ষা গ্রহণকারী ও তা বাস্তবায়নকারী গণ্য করা হয়। মানুষকে ধোকা দেওয়ার এই রুচি-যাকে কুরুচিই বলা উচিৎ-বিনা কারণে কত মানুষের যে জানমালের ক্ষতি করেছে তার ইয়ত্তা নেই।
অনেক সময় এর পরিণতিতে প্রাণনাশ পর্যন্ত হয়েছে। কারণ কখনো কোন ব্যক্তিকে এমন মিথ্যা সংবাদ দেওয়া হয়েছে ,যা শুনে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে সে ইন্তেকাল করেছে। এ প্রথার সুচনা কিভাবে হল,এব্যাপারে ঐতিহাসিকদের বর্ণনা নানারকম। কতক গ্রন্থকারের বক্তব্য হল সপ্তদশ খৃস্টাব্দের পূর্বে ফ্রান্সে বছর গণনা শুরু হত জানুয়ারির পরিবর্তে এপ্রিল থেকে। রোমানরা এই মাসকে তাদের দেবী ভেনাসের সাথে সম্পৃক্ত মনে করত। গ্রীক ভাসায় ভেনাস শব্দের অর্থ অ্যাফ্রোদিতি। সম্ভবত গ্রীক ভাষার এই শব্দ থেকেই এপ্রিল শব্দটি উদ্ভাবন করা হয়েছে। (ব্রিটানিকা/পঞ্চদশ সংস্করণ-৮:২৯২)
এজন্য কতক গ্রন্থকারের বক্তব্য হল যেহেতু ১লা এপ্রিল ছিল বছরের প্রথম তারিখ এবং এর সাথে মূর্তিপূজার ভক্তি-বিশ্বাসও জড়িত ছিল তাই এই দিনকে মানুষ আনন্দ দিবস হিসাবে উদযাপন করত। হাসি ঠাট্ট করাও ছিল তাদের আনন্দের অংশ যা ক্রমশ উন্নতি করতে করতে এপ্রিল ফুলের রূপ ধারণ করেছে। কেউ কেউ বলে আনন্দ করার জন্য এদিনে একে অপরকে উপহার দিত। একবার জৈনিক ব্যক্তি উপহার দেওয়ার নামে ঠাট্টা করে। অবশেষে তা অন্যদেও মাঝেও ছড়িয়ে পড়ে। উনিশ শতকের বিখ্যাত ইনসাইক্লোপিডিয়া ‘লারুস’এ তৃতীয় একটি কারণ বর্ণিত হয়েছে। এবং এর যথার্থ কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কারণটি হল ইয়াহুদি ও খৃস্টানদের বর্ণনা মতে ১লা এপ্রিল সেই তারিখ যে তারিখে রোমান ও ইয়াহুদিরা হযরত ঈসা (আ) কে উপহাস ও বিদ্রুপের পাত্র বানায়। এসম্পর্কে লুকা এর ইঞ্জিলের ভাষ্য এই- ‘এবং যে ব্যক্তি তাকে (ঈসা আ. কে) বন্দি করে রেখেছিল, সে তার সংগে উপহাস করত এবং তাকে এভাবে জিজ্ঞাসা করত যে নবুওত দ্বারা বল তোকে কে মেরেছে। এমনি বিদ্রুপ করে সে তার বিরুদ্ধে অনেক কথা বলত।(লুকা-২২:৬৩-৬৫)
ইঞ্জিলসমূহের মধ্যে একথাও বর্ণিত আছে যে প্রথমে হযরত ঈসা (আ) কে ইহুদীদের সর্দার ও আইনবিদদের উচ্চ আদালতে পেশ করা হয়। তারপর তাকে পিলাতিসের আদালতে এ উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয় যে তাঁর ফয়সালা সেখানেই হবে। তারপর পিলাতিস তাকে হিরোডিসের আদালতে পাঠিয়ে দেয়। অবশেষে হিরোডিস আবারো তাঁকে বিচারের জন্য পিলাতিসের আদালতে পাঠিয়ে দেয়। লারুসের বক্তব্য হল হযরত ঈসা (আ) কে এক আদালত থেকে আরেক আদালতে পাঠানোর উদ্দেশ্য হল তাকে কষ্ট দেয়া। তার সাথে ঠাট্টা উপহাস করা।আর হযরত ঈসা (আ) ওে সাথে এই ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটে এপ্রিলের প্রথম তারিখে। এজন্য এপ্রিল ফুল মূলত এই লজ্জাজনক ঘটনারই স্মৃতি। এপ্রিল ফুল পালন করতে গিয়ে যাকে নির্বোধ বানানো হয় তাকে ফরাসী ভাষায় পইজন ডাভিল বলা হয় ইংরেজিতে যার অর্থ হল এপ্রিল মৎস। (বৃটানিকা-১:৪৯৬)
এর অর্থ যেন এই যে পহেলা এপ্রির যাকে বোকা বানানো হল স যেন এপ্রিলের সূচনায় শিকারকৃত প্রথম মাছ। তবে লারুস তার উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে একথাও পেশ করেছে যে ফরাসী পইজন শব্দটি ততসদৃশ অপর একটি ফরাসী শব্দের বিকৃত রূপ। যে শব্দটির অর্থ হল কষ্ট দেয়া ও শাস্তি দেয়া। সুতরাং এপ্রিল ফুলের প্রথাটি মূলত খৃস্টানদের বিশ্বাস মতে হযরত ঈসা (আ) কে যে কষ্ট ও শাস্তিদেয়া হয়েছিল তার স্মৃতিস্বরূপ উদযাপিত হয়। তাদের একথা সঠিক হলে প্রবল ধারণা এই যে, প্রথাটি ইহুদিরাই চালু করেছে। তাদের উদ্দেশ্য হযরত ঈসা (আ) কে বিদ্রুপ ও তাচ্ছিল্য করা। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল ঈসা (আ) এর সাথে বিদ্রুপ করার উদ্দেশ্যে ইহুদিদের প্রচলনকৃত এই প্রথা খৃস্টান সম্প্রদায় যে নির্বিবাদে গ্রহণ করেছে শুধু তাই নয়, তারাই অত্যন্ত আগ্রহের সাথে এটি উদযাপন করে এবং তারাই এই দিবসের অধিক প্রচারকারী। এর একটি কারণ এটাা হতে পারে যে তারা এ প্রথার মূল উৎস সম্পর্কে অনবগত। ফলে কোনরূপ চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই তারা এটা উদযাপন করে থাকে। অথবা খৃস্টানদের এই প্রথা পালন করার কারণ এও হতে পারে যে এ বিষয়ে তাদের চিন্তা ও রুচি উদ্ভট ও বিস্ময়কর। তাদের ধারণা মতে যে ক্রশে হযরত ঈস কে বিদ্ধ করা হয়েছিল তা তাদেও দৃষ্টিতে সবচেয়ে ঘৃণ্য বস্তু হওয়ার কথা ছিল। কারণ তার মাধ্যমে তাদের শ্রদ্ধেয় নবীকে কষ্ট দেয়া হয়েছে এবং অপদস্থ করা হয়েছে। তবে বিস্ময়ের ব্যাপার হল খৃস্ট ধর্মের অনুসারীরা ক্রুশকে পবিত্র বস্তুর মর্যাদা দিচ্ছে এবং ক্রুশকে বর্তমানে খৃস্টধর্মে সবচেয়ে পবিত্র ও মর্যাদার প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়।
উপরোক্ত বিস্তারিত বর্ণনার দ্বারা একথা অত্যন্ত স্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয় যে, এপ্রিল ফুলের প্রথাটি ভেনাস নামক দেবীর সাথে সপৃক্ত হোক বা হযরত ঈসা (আ) এর সাথে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করার সাথে স¤পৃক্ত হোক, সর্বাবস্থায় এই প্রথার সম্পর্ক কোন না কোন অলীক পূজা বা ধৃষ্টতাপূর্ণ মতবাদের সাথে। তাছাড়া ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে উক্ত প্রথাটি নিম্নোক্ত পাপসমূহের সমষ্টিÑ
১) মিথ্যা বলা ২) ধোকা দেওয়া ৩) অপরকে কষ্ট দেওয়া ৪) এমন একটি ঘটনার স্মৃতি উদযাপন করা যার সম্পর্ক কোন অলীক পূজা বা একজন মহান পয়গম্বরের সাথে মন্দ আচরণ ও তাকে ঠাট্টা-বিদ্রুপের সাথে জড়িত। এখন মুসলমানদের নিজেদেরই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত যে তাদের এই প্রথা পালন করে এ কুপ্রথার প্রচলন করা কি ঠিক হবে!!
১) মিথ্যা বলা ২) ধোকা দেওয়া ৩) অপরকে কষ্ট দেওয়া ৪) এমন একটি ঘটনার স্মৃতি উদযাপন করা যার সম্পর্ক কোন অলীক পূজা বা একজন মহান পয়গম্বরের সাথে মন্দ আচরণ ও তাকে ঠাট্টা-বিদ্রুপের সাথে জড়িত। এখন মুসলমানদের নিজেদেরই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত যে তাদের এই প্রথা পালন করে এ কুপ্রথার প্রচলন করা কি ঠিক হবে!!
মূল : আল্লামা তাকি উসমানি
অনুবাদ : আব্দুল্লাহ তালহা
অনুবাদ : আব্দুল্লাহ তালহা
No comments:
Post a Comment