তাওহিদের বিশ্বাসসমূহ : ২৬ : গণকের কথাকে সত্য বলে বিশ্বাস করা এবং চল্লিশ দিন পর্যন্ত নামাজ কবুল না হওয়া প্রসঙ্গে
গণকের কথাকে সত্য বলে বিশ্বাস করা এবং চল্লিশ দিন পর্যন্ত নামাজ কবুল না হওয়া প্রসঙ্গে
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর এক স্ত্রী থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
من أتى عرافا فسأله عن شيئ فصدقه لم تقبل له صلاة أربعين يوما
‘‘যে ব্যক্তি কোন গণকের কাছে আসল, তারপর তাকে [ভাগ্য সম্পর্কে] কিছু জিজ্ঞাসা করলো, অতঃপর গণকের কথাকে সত্য বলে বিশ্বাস করল, তাহলে চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার নামাজ কবুল হবে না। (মুসলিম)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
من أتى كاهنا فصدقه بما يقول كفر بما أنزل على محمد. # رواه ابو داود
‘‘যে ব্যাক্তি গণকের কাছে আসলো, অতঃপর গণক যা বললো তা সত্য বলে বিশ্বাস করলো, সে মূলতঃ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর উপর যা নাজিল করা হয়েছে তা অস্বীকার করলো। (সহিহ বুখারি ও মুসলিমের শর্ত মোতাবেক হাদিসটি সহিহ। আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসায়ি, ইবনে মাজা ও হাকিম এ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন)।
আবু ইয়ালা ইবনে মাসউদ থেকে অনুরূপ একটি মাউকুফ হাদিস বর্ণনা করেছেন।
ইমরান বিন হুসাইন থেকে মারফু হাদিসে বর্ণিত আছে,
ليس منا من تطير أو تطير له، أوتكهن أو تكهن له أو سحر أو سحرله ومن أتى كاهنا فصدقه بما يقول فقد كفر بما أنزل على محمد صلى الله عليه وسلم. # رواه البزار بإسناد جيد
‘‘যে ব্যক্তি পাখি উড়িয়ে ভাগ্যের ভাল-মন্দ যাচাই করলো, অথবা যার ভাগ্যের ভাল-মন্দ যাচাই করার জন্য পাখি উড়ানো হল, অথবা যে ব্যক্তি ভাগ্য গণনা করলো, অথবা যার ভাগ্য গণনা করা হলো, অথবা যে ব্যক্তি জাদু করলো অথবা যার জন্য জাদু করা হলো অথবা যে ব্যক্তি কোন গণকের কাছে আসলো অতঃপর সে [গণক] যা বললো তা বিশ্বাস করলো সে ব্যক্তি মূলতঃ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর উপর যা নাজিল করা হয়েছে তা [কোরান] অস্বীকার করল। (বায্যার)
[ইমাম তাবারানিও এ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। তবে ومن أتى থেকে হাদিসের শেষ পর্যন্ত ইমাম তাবারানি কর্তৃক বর্ণিত ইবনে আববাসের হাদিসে উল্লেখ নেই।]
ইমাম বাগাবি (রহ.) বলেন عراف [গণক] ঐ ব্যক্তিকে বলা হয় যে ব্যক্তি চুরি যাওয়া জিনিস এবং কোন জিনিস হারিয়ে যাওয়ার স্থান ইত্যাদি বিষয় অবগত আছে বলে দাবী করে। এক বর্ণনায় আছে যে, এ ধরনের লোককেই গণক বলা হয়। মূলতঃ গণক বলা হয় এমন ব্যক্তিকে যে ভবিষ্যতের গায়েবি বিষয় সম্পর্কে সংবাদ দেয় [অর্থাৎ যে ভবিষ্যতবানী করে]। আবার কারো মতে যে ব্যক্তি ভবিষ্যতের গোপন খবর বলে দেয়ার দাবী করে তাকেই গণক বলা হয়। কারো মতে যে ব্যক্তি দিলের (গোপন) খবর দেয়ার দাবী করে, সেই গণক।
আবুল আববাস ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেছেন كاهن [গণক], منجم [জ্যোতির্বিদ], এবং رمال [বালির উপর রেখা টেনে ভাগ্য গণনাকারী] এবং এ জাতীয় পদ্ধতিতে যারাই গায়েব সম্পর্কে কিছু জানার দাবী করে তাদেরকেই আররাফ [عراف] বলে। আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রা.) বলেছেন, এক কওমের কিছু লোক আরবি أباجاد লিখে নক্ষত্রের দিকে দৃষ্টি দেয় এবং তা দ্বারা ভাগ্যের ভাল-মন্দ যাচাই করে। পরকালে তাদের জন্য আল্লাহর কাছে কোন ভাল ফল আছে বলে আমি মনে করি না।
এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়
১। গণনাকারীকে সত্য বলে বিশ্বাস করা এবং কোরানের প্রতি ঈমান রাখা, এ দুটি বিষয় একই ব্যক্তির অন্তরে এক সাথে অবস্থান করতে পারে না।
২। ভাগ্য গণনা করা কুফরি হওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট ঘোষণা।
৩। যার জন্য গণনা করা হয়, তার উল্লেখ।
৪। পাখি উড়িয়ে ভাগ্য পরীক্ষাকারীর উল্লেখ।
৫। যার জন্য জাদু করা হয়, তার উল্লেখ।
৬। ভাগ্য গণনা করার ব্যাপারে যে ব্যক্তি ‘‘আবাজাদ’’ শিক্ষা করেছে তার উল্লেখ্য।
৭। ‘কাহেন, [كاهن] এবং ‘আররাফ’ [عراف] এ মধ্যে পার্থক্য।
১। গণনাকারীকে সত্য বলে বিশ্বাস করা এবং কোরানের প্রতি ঈমান রাখা, এ দুটি বিষয় একই ব্যক্তির অন্তরে এক সাথে অবস্থান করতে পারে না।
২। ভাগ্য গণনা করা কুফরি হওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট ঘোষণা।
৩। যার জন্য গণনা করা হয়, তার উল্লেখ।
৪। পাখি উড়িয়ে ভাগ্য পরীক্ষাকারীর উল্লেখ।
৫। যার জন্য জাদু করা হয়, তার উল্লেখ।
৬। ভাগ্য গণনা করার ব্যাপারে যে ব্যক্তি ‘‘আবাজাদ’’ শিক্ষা করেছে তার উল্লেখ্য।
৭। ‘কাহেন, [كاهن] এবং ‘আররাফ’ [عراف] এ মধ্যে পার্থক্য।
রচয়িতা : মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহহাব
No comments:
Post a Comment