তাওহিদের বিশ্বাসসমূহ : ১৭ : শাফাআত বা সুপারিশ প্রসঙ্গ
শাফাআত বা সুপারিশ
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরানে ইরশাদ করেছেন,
وَأَنْذِرْ بِهِ الَّذِينَ يَخَافُونَ أَنْ يُحْشَرُوا إِلَى رَبِّهِمْ لَيْسَ لَهُمْ مِنْ دُونِهِ وَلِيٌّ وَلَا شَفِيعٌ
‘‘তুমি কোরানের মাধ্যমে সে সব লোকদের ভয় দেখাও, যারা তাদের রবের সামনে উপস্থিত হওয়াকে ভয় করে। সেদিন তাদের অবস্থা এমন হবে যে, আল্লাহ ছাড়া তাদের কোন সাহায্যকারী বন্ধু এবং কোন শাফাআতকারী থাকবে না। (আনআমঃ ৫১)
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরানে আরো ইরশাদ করেন,
قُلْ لِلَّهِ الشَّــفَاعَةُ جَمــِيعًا #الزمر: 44
‘‘বলুন, সমস্ত শাফাআত কেবলমাত্র আল্লাহরই ইখতিয়ার ভুক্ত। (ঝুমার: ৪৪)
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরানের অন্য আয়াতে ইরশাদ করেছেন,
مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ #البقرة: 255
‘‘তাঁর [আল্লাহর] অনুমতি ব্যতীত তাঁর দরবারে কে শাফাআত [সুপারিশ] করতে পারে? (বাকারাহ . ২৫৫)
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরানের অন্যত্র ইরশাদ করেছেন,
وَكَمْ مِنْ مَلَكٍ فِي السَّمَاوَاتِ لَا تُغْنِي شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا إِلَّا مِنْ بَعْدِ أَنْ يَأْذَنَ اللَّهُ لِمَنْ يَشَاءُ وَيَرْضَى #ألنجم:26
‘‘আকাশ মন্ডলে কতইনা ফিরিস্তা রয়েছে। তাদের শাফাআত কোন কাজেই আসবে না, তবে হ্যাঁ, তাদের শাফাআত যদি এমন কোন ব্যক্তির পক্ষে হয় যার আবেদন শুনতে তিনি ইচ্ছা করবেন এবং তা পছন্দ করবেন। (নাজমঃ ২৬)
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরানে আরো ইরশাদ করেন,
قُلِ ادْعُوا الَّذِينَ زَعَمْتُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ لَا يَمْلِكُونَ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ فِي السَّمَاوَاتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ (سبأ: 22
‘‘[হে মুহাম্মদ, মুশরিকদেরকে] বলো, তোমরা তোমাদের সেই সব মাবুদদেরকে ডেকে দেখো, যাদেরকে তোমরা আল্লাহ ব্যতীত নিজেদের মাবুদ মনে করে নিয়েছো, তারা না আকাশের, না যমীনের এক অনু পরিমাণ জিনিসের মালিক। (সাবাঃ ২২)
আবুল আববাস ইবনে তাইমিয়াহ র. বলেন, মুশরিকরা আল্লাহ ছাড়া যার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেছে, তার সবই আল্লাহ তাআলা অস্বীকার করেছেন। গাইরুল্লাহর জন্য রাজত্ব অথবা আল্লাহর ক্ষমতায় গাইরুল্লাহর অংশীদারিত্ব অথবা আল্লাহর জন্য কোন গাইরুল্লাহ সাহায্যকারী হওয়ার বিষয়কে তিনি অস্বীকার করেছেন। বাকী থাকলো শাফাআতের বিষয়। এ ব্যাপারে কথা হচ্ছে এই যে, ‘‘আল্লাহ তাআলা শাফাআত [সুপারিশ] এর জন্য যাকে অনুমতি দিবেন তার ছাড়া আর কারো শাফাআত কোন কাজে আসবে না।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরানে ইরশাদ করেছেন,
وَلَا يَشْفَعُونَ إِلَّا لِمَنِ ارْتَضَى #الأنبياء: 28
‘‘তিনি [আল্লাহ] যার ব্যাপারে সন্তুষ্ট হবে, কেবলমাত্র তার পক্ষেই তারা শাফাআত [সুপারিশ] করবে। (আম্বিয়াঃ ২৮)
মুশরিকরা যে শাফাআতের আশা করে, কেয়ামতের দিন তার কোন অস্তিত্বই থাকবে না। কুরআনে কারীমও এধরনের শাফাআতকে অস্বীকার করেছে। নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানিয়েছেন,
إنه يأتي فيسجد لربه ويحمده لا يبدأ بالشفاعة أولا ثم يقال له: ارفع رأسك، وقل تسمع وسل تعط واشقع تشفع.
‘‘তিনি অর্থাৎ নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হবেন। অতঃপর তাঁর রবের উদ্দেশ্যে তিনি সেজদায় লুটিয়ে পড়বেন এবং আল্লাহর প্রশংসায় মগ্ন হবেন। প্রথমেই তিনি শাফাআত বা সুপারিশ করা শুরু করবেন না। অতঃপর তাঁকে বলা হবে, ‘‘হে মুহাম্মদ, তোমার মাথা উঠাও। তুমি তোমার কথা বলতে থাকো, তোমার কথা শ্রবন করা হবে। তুমি চাইতে থাকো, তোমাকে দেয়া হবে। তুমি সুপারিশ করতে থাকো, তোমার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।
আবু হুরাইয়ারা রা. রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনার শাফাআত লাভে সবচেয়ে সৌভাগ্যবান ব্যক্তি কে? নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জবাবে বললেন, ‘যে ব্যক্তি খালেস দিলে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে।
এ হাদিসে উল্লেখিত শাফাআত [বা সুপারিশ] আল্লাহ তাআলার অনুমতি প্রাপ্ত এবং নেককার মুখলিস বান্দাদের জন্য নির্দিষ্ট। আল্লাহর সাথে যে ব্যক্তি কাউকে শরিক করবে তার ভাগ্যে এ শাফাআত জুটবে না। এ আলোচনার মর্মার্থ হচ্ছে এই যে, আল্লাহ তাআলা মুখলিস বান্দাগণের প্রতি অনুগ্রহ করবেন এবং শাফাআতের জন্য অনুমতি প্রাপ্ত ব্যক্তিদের প্রার্থনায় তাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, শাফাআতকারীকে সম্মানিত করা এবং মাকামে মাহমূদ অর্থাৎ প্রশংসিত স্থান দান করা।
কোরানে কারিম যে শাফাআতকে অস্বীকার করেছে, তাতে শিরক বিদ্যমান রয়েছে। এ জন্যই আল্লাহ তাআলার অনুমতি সাপেক্ষে শাফাআত এর স্বীকৃতির কথা কুরআনে বিভিন্ন জায়গায় এসেছে। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেছেন যে, শাফাআত একমাত্র তাওহীদবাদী নিষ্ঠাবানদের জন্যই নির্দিষ্ট।
এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয় গুলো জানা যায়
১। উল্লেখিত আয়াতসমূহের তাফসির।
২। যে শাফাআতকে অস্বীকার করা হয়েছে তার প্রকৃতি।
৩। স্বীকৃত শাফাআতের গুণ ও বৈশিষ্ট্য।
৪। সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ শাফাআতের উল্লেখ। আর তা হচ্ছে ‘‘মাকামে মাহমুদ
৫। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম [শাফাআতের পূর্বে] যা করবেন তার বর্ণনা। অর্থাৎ তিনি প্রথমেই শাফাআতের কথা বলবেন না, বরং তিনি সেজদায় পড়ে যাবেন। তাঁকে অনুমতি প্রদান করা হলেই তিনি শাফাআত করতে পারবেন।
৬। শাফাআতের মাধ্যমে সবচেয়ে সৌভাগ্যবান ব্যক্তির উল্লেখ।
৭। আল্লাহর সাথে শিরককারীর জন্য কোন শাফাআত গৃহীত হবে না।
১। উল্লেখিত আয়াতসমূহের তাফসির।
২। যে শাফাআতকে অস্বীকার করা হয়েছে তার প্রকৃতি।
৩। স্বীকৃত শাফাআতের গুণ ও বৈশিষ্ট্য।
৪। সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ শাফাআতের উল্লেখ। আর তা হচ্ছে ‘‘মাকামে মাহমুদ
৫। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম [শাফাআতের পূর্বে] যা করবেন তার বর্ণনা। অর্থাৎ তিনি প্রথমেই শাফাআতের কথা বলবেন না, বরং তিনি সেজদায় পড়ে যাবেন। তাঁকে অনুমতি প্রদান করা হলেই তিনি শাফাআত করতে পারবেন।
৬। শাফাআতের মাধ্যমে সবচেয়ে সৌভাগ্যবান ব্যক্তির উল্লেখ।
৭। আল্লাহর সাথে শিরককারীর জন্য কোন শাফাআত গৃহীত হবে না।
রচয়িতা : মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহহাব
No comments:
Post a Comment