কালেমার মর্মকথা : কালেমার অর্থ ও দাবি : পর্ব- ০২

   কালেমার মর্মকথা : কালেমার অর্থ ও দাবি : পর্ব- ০২


" لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ " -এর অর্থ ও দাবি : পর্ব- ০২ 
" لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ এর আরো দাবি হলো আল্লাহর যত গুণবাচক নাম ও তাঁর নিজ সত্তার যে সমস্ত নাম আছে, যেগুলোকে তিনি নিজেই বর্ণনা করেছেন অথবা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেছেন, সে সব গুণাবলিকে বিশ্বাস করা।

আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلِلّهِ الأَسْمَاء الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا وَذَرُواْ الَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِي أَسْمَآئِهِ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُواْ يَعْمَلُونَ
আল্লাহর জন্য রয়েছে সবচেয়ে উত্তম নামসমূহ, কাজেই সে সকল নাম ধরেই তাঁকে ডাক আর তাদেরকে বর্জন কর যারা তাঁর নামের ব্যাপারে বাঁকা পথে চলে। তারা নিজেদের কৃতকর্মের ফল অবশ্যই পাবে।’’ (সূরা আলআরাফ-১৮০)
ফাতহুল মজীদ কিতাবের লেখক বলেন, আরবদের ভাষায় প্রকৃত ( إِلْحَاد) ইল্হাদ বলতে বুঝায়, সঠিক পথ পরিহার করে বক্র পথ অনুসরণ করা এবং বক্রতার দিকে ঝুঁকে পড়ে পথভ্রষ্ট হওয়া।
আল্লাহর সমস্ত নাম এবং গুণবাচক নামের মধ্যেই তাঁর পরিচয় এবং কামালিয়াত ফুটে উঠে বান্দার নিকট। লেখক আরো বলেন, অতএব আল্লাহর নামসমূহের বিষয়ে বক্রতা অবলম্বন করা মানে ঐ সমস্ত নামকে অস্বীকার করা, অথবা ঐ সমস্ত নামের অর্থকে অস্বীকার বা অপ্রয়োজনীয় বা অপ্রাসঙ্গিক মনে করা, অথবা অপ-ব্যাখ্যার মাধ্যমে এর সঠিক অর্থকে পরিবর্তন করে দেয়া। অথবা আল্লাহর ঐ সমস্ত নাম দ্বারা তাঁর মাখলুকাতকে বিশেষিত করা। যেমন ওহদাতুল ওয়াজুদ পন্থীরা স্রষ্টা ও সৃষ্টিকে এক করে সৃষ্টির ভাল-মন্দ অনেক কিছুকেই আল্লাহর নামে বিশেষিত করেছে।১.
অতএব যে ব্যক্তি মু’তাযিলা সম্প্রদায় বা জাহমিয়া ও আশায়েরাদের অনুরূপ আল্লাহর নামসমূহের ও গুণাবলির অপ-ব্যাখ্যা করল, অথবা সেগুলোকে অপ্রয়োজনীয় ও অর্থ-সারশূন্য মনে করল, অথবা সেগুলোর অর্থ বোধগম্য নয় বলে মনে করল এবং এসব নাম ও গুণাবলির সুমহান অর্থের উপর বিশ্বাস আনল না সে মূলত আল্লাহর নাম ও গুণাবলিতে বক্রতার পথ অবলম্বন করল এবং লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর অর্থ ও উদ্দেশ্যেরই বিরোধিতা করল। কেন না ইলাহ’ হলেন তিনি, যাকে তার নাম ও সিফাতের মাধ্যমে ডাকা হয় এবং তাঁর নৈকট্য লাভ করা হয়।
আল্লাহ বলেন,
( فَادْعُوْهُ بِهَا )
ঐ সমস্ত নামের মাধ্যমে তাঁকে ডাক।’’ আর যার কোন নাম বা সিফাত নেই সে কীভাবে ইলাহ’ বা উপাস্য থেকে পারে এবং কিসের মাধ্যমে তাকে ডাকা হবে?
ইমাম ইবনুল কাইয়িম রহ. বলেন, শরীয়াতের বিভিন্ন হুকুম আহ্কামের বিষয়ে মানুষ বিতর্কে লিপ্ত হলেও সিফাত সংক্রান্ত আয়াতসমূহে বা এ সম্পর্কে যে সংবাদ এসেছে তাতে কেউ বিতর্কে লিপ্ত হয়নি। বরং সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেয়ীগণ এ বিষয়ে একমত হয়েছেন যে, আল্লাহর এ সকল আসমায়ে হুসনা এবং সিফাতের প্রকৃত অর্থ বুঝার পর ঠিক যেভাবে তা বর্ণিত হয়েছে, কোন অপ-ব্যাখ্যা ছাড়া তা ঐ ভাবেই মেনে নিতে হবে এবং স্বীকৃতি দান করতে হবে। এখানে প্রমাণিত হলো যে, আল্লাহর আসমায়ে হুসনা এবং সিফাতের বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রদান করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ তাওহীদ ও রেসালাতকে দৃঢ়ভাবে প্রতিপন্ন করার এটাই মূল উৎস এবং তাওহীদের স্বীকৃতির জন্য এ সমস্ত আসমায়ে হুসনার স্বীকৃতি এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এজন্যই আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন যাতে কোন প্রকার সংশয়ের অবকাশ না থাকে।
হুকুম আহকামের আয়াতগুলো বিজ্ঞ ব্যক্তিগণ ব্যতীত সবার জন্য বুঝে উঠা একটু কঠিন কাজ, কিন্তু আল্লাহর সিফাত সংক্রান্ত আয়াত সমূহের সাধারণ অর্থ সব মানুষই বুঝতে পারে। অর্থাৎ, তাঁর সত্তা ও আকৃতি বুঝা ব্যতীত আসল অর্থ সকলেই বুঝতে পারে।
লেখক আরো বলেন, এটি এমন একটি বিষয় যা সহজাত প্রবৃত্তি, সুস্থ মস্তিষ্ক এবং আসমানি কিতাবসমূহের মাধ্যমে বুঝতে পারা যায় যে, যার মধ্যে পূর্ণতা অর্জনের সমস্ত গুণাবলি থাকে না সে কিছুতেই ইলাহ বা মা’বুদ, উদ্ভাবক ও প্রতিপালক থেকে পারে না। সে হবে নিন্দিত ক্রটিপূর্ণ ও অপরিপক্ব এবং পূর্বাপর কোন অবস্থায় সে প্রশংসিত থেকে পারে না। সর্বাবস্থায় প্রশংসিত হবেন তিনিই যাঁর মধ্যে কামালিয়াত বা পূর্ণতা অর্জনের সমস্ত গুণাবলি বিদ্যমান থাকে। এ জন্যই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের পূর্বের মনিষীগণ আল্লাহর সিফাত সম্পর্কে- যেমন, তিনি সকল সৃষ্টির ঊর্ধ্বে, তাঁর কথোপকথন ইত্যাদি বিষয়ে- যে সমস্ত বই পুস্ত্তক রচনা করেছেন সে সকল বইয়ের নামকরণ করেছেন আত্তাওহীদ’’ নামে। কারণ এ সমস্ত গুণাবলিকে অগ্রাহ্য বা অস্বীকার করা এবং এর সাথে কুফরী করার অর্থ হলো সৃষ্টিকর্তাকে অস্বীকার করা এবং তাঁকে না মানা। আর আল্লাহর একত্ববাদের অর্থ হচ্ছে তার সমস্ত কামালিয়াতের সিফাতকে মেনে নেয়া। সমস্ত দোষত্রুটি ও অন্য কিছুর সাথে তুলনীয় হওয়া থেকে তাঁকে পবিত্র মনে করা।
একজন ব্যক্তির জন্য কখন " لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ " এর স্বীকৃতি ফলদায়ক হবে আর কখন এর স্বীকৃতি নিষ্ফল হবে ?
আমরা পূর্বেই বলেছি যে, " لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ " এর স্বীকৃতির সাথে এর অর্থ বুঝা এবং এর দাবি অনুযায়ী কাজ করাটা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কিন্তু কোরআন হাদীসে এমন কিছু উদ্ধৃতি আছে যা থেকে সনেদহের উদ্ভব হয় যে, শুধুমাত্র লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ মুখে উচ্চারণ করলেই যথেষ্ট। মূলত: কিছু লোক এ ধারণাই পোষণ করে। অতএব সত্য সন্ধানীদের জন্য এ সন্দেহের নিরসন করে দেয়া একান্তই প্রয়োজন মনে করি।
ইতবান (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে বলবে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ আল্লাহ তার উপর জাহান্নামের আগুনকে হারাম করে দেবেন (বুখারী ১১ খন্ড ২০৬ পৃ: মুসলিম: ৩৩ নং)
এই হাদীসের আলোচনায় শেখ সুলায়মান বিন আব্দুল্লাহ বলেন, মনে রাখবেন অনেক হাদীসের বাহ্যিক অর্থ দেখলে মনে হবে যে, কোন ব্যক্তি তাওহীদ এবং রেসালাতের শুধুমাত্র সাক্ষ্য দান করলেই জাহান্নামের জন্য সে হারাম হয়ে যাবে যেমনটি উপরোল্লেখিত হাদীসে বলা হয়েছে। এমনিভাবে আনাছ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদীসেও এসেছে তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং মুআজ (রা.) একবার সাওয়ারীর পিঠে আরোহণ করে কোথাও যাচেছন এমন সময় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুআজকে ডাকলেন। তিনি বললেন, লাববাইকা ওয়া সায়াদাইকা ইয়া রাসূলুল্লাহ। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে মুআজ, যে বান্দাই এ সাক্ষ্য প্রদান করবে যে, আল্লাহ ব্যতীত সত্যিকার কোন মাবুদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল’ আল্লাহ তাকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দেবেন। (বুখারী ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ১৯৯)
ইমাম মুসলিম উবাদাহ (রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ব্যতীত সত্যিকার কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দাহ এবং তাঁর রাসূল, আল্লাহ তাকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দেবেন।’ (সহিহ মুসলিম ১ম খন্ড পৃষ্ঠা ২২৮ - ২২৯)
এছাড়া অনেকগুলো হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি তাওহীদ ও রেসালাতের স্বীকৃতি দান করবে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, তবে জাহান্নাম তার জন্য হারাম করা হবে এমন কোন উল্লেখ তাতে নেই।
তাবুক যুদ্ধকালের একটি ঘটনা। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ব্যতীত সত্যিকার কোন মাবুদ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল। আর সংশয়হীনভাবে এই কালেমা পাঠকারী আল্লাহর সাথে এমন অবস্থায় মিলিত হবে যে, জান্নাত ও তার মধ্যে কোন প্রতিবন্ধকতা থাকবে না।
লেখক আরো বলেন, শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) এবং অন্যান্য প্রমুখ ওলামায়ে কেরাম এ বিষয়ে যে ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন তা অত্যন্ত চমৎকার।
ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, এ সমস্ত হাদীসের অর্থ হচ্ছে, যে ব্যক্তি এ কালেমা পাঠ করে এর উপর মৃত্যুবরণ করবে - যেভাবে নির্দিষ্ট সীমা রেখায় বর্ণিত হয়েছ - এবং এই কালেমাকে সংশয়হীনভাবে একেবারে নিরেট আল্লাহর ভালোবাসায় হৃদয়-মন থেকে এর স্বীকৃতি দেবে সেই জান্নাতে প্রবেশ করবে। কেননা প্রকৃত তাওহীদ হচ্ছে সার্বিকভাবে আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করা এবং আকৃষ্ট হওয়া। আর ইখলাছ হচ্ছে আল্লাহর প্রতি ঐ আকর্ষণের নাম, যে আকর্ষণ বা আবেগের ফলে আল্লাহর নিকট বান্দা সমস্ত পাপের জন্য খালেছ তওবা করবে এবং যদি এ অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করে তবেই জান্নাত লাভ করতে পারবে। কারণ অসংখ্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, যে ব্যক্তি বলবে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ সে ব্যক্তি জাহান্নাম থেকে বেরিয়ে আসবে যদি তার মধ্যে অণু পরিমাণও ঈমান বিদ্যমান থাকে। এছাড়া অসংখ্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, অনেক লোক লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার পরেও জাহান্নামে প্রবেশ করবে এবং কৃতকর্মের শাস্তি ভোগ করার পর সেখান থেকে বেরিয়ে আসবে। ‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎ পড়ে ঐ চিহ্নকে জাহান্নাম কখনো স্পর্শ করতে পারবে না।
এতে বুঝা গেল ঐ ব্যক্তিরা নামাজ পড়ত এবং আল্লাহর জন্য সিজদা করত। আর অনেকগুলো হাদীসে এভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, যে ব্যক্তি বলবে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এবং এই সাক্ষ্য দান করবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্যিকার মাবুদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল, তার উপর জাহান্নামকে হারাম করা হবে। তবে একথা এমনিতে মুখে উচ্চারণ করলে হবে না, এর সাথে সম্পর্ক রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ এমন কিছু নির্দিষ্ট কাজ যা অবশ্যই করণীয়। অধিকাংশ লোক মুখে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ উচ্চারণ করলেও তারা জানে না ইখলাছ এবং ইয়াকীন বা দৃঢ় প্রত্যয় বলতে কি বুঝায়। আর যে ব্যক্তি এ বিষয়গুলো সম্পর্কে অবহিত থাকবে না, মৃত্যুর সময় এ কারণে তার ফিতনার সম্মুখীন হওয়াটাই স্বাভাবিক এবং ঐ সময় হয়তো তার মাঝে এবং কালেমার মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি থেকে পারে। অনেক লোক এ কালেমা অনুকরণমূলক বা সামাজিক প্রথা অনুযায়ী পাঠ করে। অথচ তাদের সাথে ঐকান্তিকভাবে ঈমানের কোন সম্পর্কই থাকে না। আর মৃত্যুর সময়ও কবরে ফিতনার সম্মুখীন যারা হবে তাদের অধিকাংশই এই শ্রেণির মানুষ।
হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, এ ধরনের লোকদের কবরে প্রশ্ন করার পর উত্তরে বলবে, মানুষকে এভাবে একটা কিছু বলতে শুনেছি এবং আমিও তাদের মত বুলি আওড়িয়েছি মাত্র’। তাদের অধিকাংশ কাজ কর্ম এবং আমল তাদের পূর্বসূরিদের অনুকরণেই হয়ে থাকে। আর এ কারণে তাদের জন্য আল্লাহর এ বাণীই শোভা পায়।
إِنَّا وَجَدْنَا آبَاءنَا عَلَى أُمَّةٍ وَإِنَّا عَلَى آثَارِهِم مُّهْتَدُونَ
আমরা আমাদের বাপ-দাদাদের এই পথের পথিক হিসাবে পেয়েছি এবং আমরা তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলেছি।’’ (সূরা আয্যুখরুফ-২৩)
এই দীর্ঘ আলোচনার পর বলা যায় যে, এ প্রসঙ্গে বর্ণিত হাদীসগুলোর মধ্যে কোন প্রকার বিরোধিতা নেই। অতএব কোন ব্যক্তি যদি পূর্ণ ইখলাছ এবং ইয়াকীনের সাথে এ কালেমা পাঠ করে থাকে তা হলে কোন মতেই সে কোন পাপ কাজের উপর অবিচলিত থাকতে পারে না। কারণ তার বিশুদ্ধ ইসলাম বা সততার কারণে আল্লাহর ভালোবাসা তার নিকট সকল কিছুর ঊর্ধ্বে স্থান পাবে। অতএব এ কালেমা পাঠ করার পর আল্লাহর হারামকৃত বস্ত্তর প্রতি তার হৃদয়ের মধ্যে কোন প্রকার আগ্রহ বা ইচ্ছা থাকবে না এবং আল্লাহ যা আদেশ করেছেন সে সম্পর্কে তার মনের মাঝে কোন প্রকার দ্বিধা- সংকোচ বা ঘৃণা থাকবে না। আর এ ধরনের ব্যক্তির জন্যই জাহান্নাম হারাম হবে, যদিও তার নিকট থেকে এর পূর্বে কিছু গুনাহ হয়ে থাকে। কারণ তার এ ঈমান, ইখলাছ, ভালোবাসা এবং ইয়াকীনই তার সমস্ত পাপকে এভাবে মুছে দেবে যেভাবে দিনের আলো রাতের অন্ধকারকে দূরীভূত করে দেয়।
শেখ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহাব (রহ.) বলেন, এই প্রসঙ্গে তাদের আরেকটি সংশয় এই যে তারা বলে, উসামা (রা.) এক ব্যক্তিকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার পরেও হত্যা করার কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এ কাজকে নিন্দা করেছেন এবং উসামা (রা.) কে জিজ্ঞাসা করেছেন, তুমি কি তাকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’ বলার পর হত্যা করেছ?’
এ ধরনের আরো হাদীস আছে যাতে কালেমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পাঠকারীর নিরাপত্তা সম্পর্কে বলা হয়েছে। এ থেকে এ সকল মূর্খরা বলতে চায় যে, কোন ব্যক্তি এ কালেমা পড়ার পর যা ইচ্ছা করতে পারে কিন্তু এ কারণে আর কখনো কাফের হয়ে যাবে না এবং তার জীবনের নিরাপত্তার জন্য এটাই যথেষ্ট। এ সমস্ত অজ্ঞদের বলতে হয় যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়াহুদীদের সাথে জিহাদ করেছেন এবং তাদের বন্দী করেছেন অথচ তারা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এ কথাকে স্বীকার করত। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবাগণ হানিফা গোত্রের সাথে জিহাদ করেছেন অথচ তারা স্বীকার করত যে, আল্লাহ এক এবং মুহাম্মাদ -সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ এবং তারা নামাজ পড়ত ও ইসলামের দাবিদার ছিল। এভাবে আলী (রা.) যাদেরকে জ্বালিয়ে মেরেছিলেন তাদের কথাও উল্লেখ করা যায়।
এ সমস্ত অজ্ঞরা এ বিষয় স্বীকৃতি দান করে যে, যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার পর পুনরুত্থানকে অবিশ্বাস করবে, সে কাফের ও মুরতাদ হয়ে যাবে এবং মুরতাদ হওয়ার কারণে তাকে হত্যা করা হবে। এছাড়া যে ব্যক্তি ইসলামের স্তম্ভগুলোর কোন একটিকে অস্বীকার করবে তাকে কাফের বলা হবে এবং মুরতাদ হওয়ার কারণে তাকে হত্যা করা হবে, যদিও সে মুখে " لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ " এ কালেমা উচ্চারণ করে থাকে।
তা হলে বিষয়টা কেমন হলো? আংশিক দীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বক্রতার পথ গ্রহণ করলে যদি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা কোন উপকারে না আসে তা হলে রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনীত দীনের মূল বিষয় তাওহীদের সাথে কুফরী করার পর কীভাবে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ শুধু মুখে উচ্চারণ করাটা তার উপকার সাধন করতে পারে? মূলত আল্লাহ দ্রোহীরা এই সমস্ত হাদীসের অর্থ বুঝতে পারেনি।১.
উসামা (রা.) এর হাদীসের ব্যাখ্যায় তিনি আরো বলেন, উসামা (রা.) ঐ ব্যক্তিকে হত্যা করেছেন এই মনে করে যে, ঐ ব্যক্তি মুসলমান হওয়ার দাবি করেছে শুধু তার জীবন ও সম্পদ রক্ষার ভয়ে। আর ইসলামের নীতি হচ্ছে কেউ ইসলাম গ্রহণ করলে ঐ পর্যন্ত তার ধন-সম্পদ ও জীবনের নিরাপত্তা প্রদান করা হবে যে পর্যন্ত ইসলামের পরিপন্থী কোন কাজ সে না করে।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ إِذَا ضَرَبْتُمْ فِي سَبِيلِ اللّهِ فَتَبَيَّنُواْ
হে ঈমানদারগণ তোমরা যখন আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য বের হও তখন যাচাই করে নিও।’’ (সূরা আন্ নিসা-৯৪)
এই আয়াতের অর্থ হলো এই যে, কোন ব্যক্তির ইসলাম গ্রহণের পর ঐ পর্যন্ত তার জীবনের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে যে পর্যন্ত ইসলাম পরিপন্থী কোন কাজ তার নিকট থেকে প্রকাশ না পায়। আর যদি এর বিপরীত কোন কাজ করা হয় তাহলে তাকে হত্যা করা যাবে। কেননা আয়াতে বলা হয়েছে, তোমরা অনুসন্ধানের মাধ্যমে নিরূপণ কর। আর যদি তাই না হতো তাহলে এখানে {فَتَبَيَّنُواْ } অর্থাৎ, যাচাই কর, এ শব্দের কোন মূল্যই থাকে না। এভাবে অন্যান্য হাদীসসমূহ যার আলোচনা পূর্বে বর্ণনা করেছি অর্থাৎ, যে ব্যক্তি ইসলাম এবং তাওহীদের স্বীকৃতি দান করল এবং এরপর ইসলাম পরিপন্থী কাজ থেকে বিরত থাকল তার জীবনের নিরাপত্তা বিধান করা ওয়াজিব। আর একথার দলীল হলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উসামাকে বললেন, তুমি কি তাকে " لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ " বলার পর হত্যা করেছ?
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, আমি মানুষের সাথে জিহাদ করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি যে পর্যন্ত না তারা সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন সত্য মাবুদ নেই।’ আবার তিনিই খারেজীদের সম্পর্কে বলেন, তোমরা যেখানেই তাদের দেখা পাও সেখানেই তাদেরকে হত্যা কর, আমি যদি তাদেরকে পেতাম তাহলে আদ জাতির হত্যার মত তাদেরকে হত্যা করতাম।’ অথচ এরাই ছিল তখনকার সময় সবচেয়ে বেশি আল্লাহর মহত্ত্ব বর্ণনাকারী। এমন কি সাহাবায়ে কেরাম এ দিক থেকে এ সমস্ত লোকদের তুলনায় নিজদেরকে খুব খাট মনে করতেন, যদিও তারা সাহাবায়ে কেরামদের নিকট শিক্ষা গ্রহণ করত। এদের নিকট থেকে ইসলাম বহির্ভূত কাজ প্রকাশ পাওয়ায় এদের লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা বা এর প্রচার করা এবং ইবাদত করা ও মুখে ইসলামের দাবি করা কোন কিছুই তাদের কাজে আসল না। এভাবে ইয়াহুদীদের সাথে যুদ্ধ করা এবং সাহাবাদের বনু হানিফা’ গোত্রের সাথে যুদ্ধ করার বিষয়গুলোও এখানে উল্লেখ যোগ্য।
এ প্রসঙ্গে হাফেজ ইবনে রজব তাঁর কালেমাতুল ইখলাছ’ নামক গ্রন্থে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীস আমি আদিষ্ট হয়েছি মানুষের সাথে জিহাদ করার জন্য যে পর্যন্ত না তারা সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্যিকার মাবুদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল’ এর ব্যাখ্যায় বলেন, উমার এবং একদল সাহাবা বুঝে ছিলেন যে, যে ব্যক্তি শুধুমাত্র তাওহীদ ও রিসালাতের সাক্ষ্য দান করবে একমাত্র এর উপর নির্ভর করে তাদের দুনিয়াবী শাস্তি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে। এ জন্যই তাঁরা যাকাত প্রদান করতে যারা অস্বীকার করেছে তাদের সাথে যুদ্ধের ব্যাপারে দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েছেন এবং আবু বকর (রা.) বলেছিলেন যে, ঐ পর্যন্ত তাদেরকে যুদ্ধ থেকে অব্যাহতি দেয়া যাবে না যে পর্যন্ত তারা যাকাত প্রদানে স্বীকৃতি না দেবে। কেননা; রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যারা তাওহীদ ও রিসালাতের’ সাক্ষ্য দেবে তারা আমার নিকট থেকে তাদের জীবনকে হেফাজত করবে তবে কোন অপরাধের কারণে ইসলামি দন্ডে মৃত্যুদন্ডের উপযুক্ত হলে তা প্রয়োগ করা হবে এবং তাদের হিসাবের দায়িত্ব আল্লাহর উপর বর্তাবে।’’
লেখক আরো বলেন, যাকাত হচ্ছে সম্পদের হক এবং আবুবকর (রা.) এটাই বুঝে ছিলেন।রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ইবনে উমার, আনাস ও অন্যান্য অনেক সাহাবা (রা.) বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমি মানুষের সাথে জিহাদ করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি যে পর্যন্ত না তারা বলবে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন সত্য মাবুদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর রাসূল এবং নামাজ প্রতিষ্ঠিত করবে ও যাকাত প্রদান করবে।’’ আল্লাহ তাআলার বাণীগুলোও এ অর্থই বহন করে।
তিনি বলেন,
فَإِن تَابُواْ وَأَقَامُواْ الصَّلاَةَ وَآتَوُاْ الزَّكَاةَ فَخَلُّواْ سَبِيلَهُمْ
তারা যদি তওবা করে এবং নামাজ প্রতিষ্ঠা করে ও যাকাত দান করে তাহলে তাদের পথ ছেড়ে দাও।’’ (সূরা আত তাওবা, আয়াত ৫)
আল্লাহ আরো বলেন,
فَإِن تَابُواْ وَأَقَامُواْ الصَّلاَةَ وَآتَوُاْ الزَّكَاةَ فَإِخْوَانُكُمْ فِي الدِّينِ
তারা যদি তাওবা করে নামাজ কায়েম করে ও যাকাত দান করে তাহলে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই।’’ (সূরা আত তাওবা, আয়াত ১১) এ থেকে প্রমাণিত হলো যে, কোন ব্যক্তির সাথে দ্বীনি ভ্রাতৃত্ব ঐ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত হবে না যে পর্যন্ত না সে তাওহীদের স্বীকৃতির সাথে সাথে সমস্ত ফরজ ওয়াজিব আদায় করবে। আর শিরক থেকে তওবা করা ঐ পর্যন্ত প্রমাণিত হবে না, যে পর্যন্ত তাওহীদের উপর অবিচল না থাকবে।
আবু বকর (রা.) যখন সাহাবাদের জন্য এটাই নির্ধারণ করলেন তখন তাঁরা এ রায়ের প্রতি ফিরে আসলেন এবং তাঁর সিদ্ধান্তই সঠিক মনে করলেন। এতে বুঝা গেল যে, দুনিয়ার শাস্তি থেকে শুধুমাত্র এই কালেমা পাঠ করলেই রেহাই পাওয়া যাবে না বরং ইসলামের কোন বিধান লঙ্ঘন করলে দুনিয়াতে যেমন শাস্তি ভোগ করতে হবে, তেমনি আখেরাতেও শাস্তি ভোগ করতে হবে।
লেখক আরো বলেন, আলেমদের মধ্যে অন্য একটি দল বলেন, এই সমস্ত হাদীসের অর্থ হচ্ছে " لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ " মুখে উচ্চারণ করা জান্নাতে প্রবেশ এবং জাহান্নাম থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার একটা প্রধান উপকরণ এবং এর দাবি মাত্র। আর এ দাবির ফলাফল সিদ্ধি হবে শুধুমাত্র তখনই যখন প্রয়োজনীয় শর্তগুলো আদায় করা হবে এবং এর প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করা হবে। আর ঐ লক্ষ্যে পৌঁছার শর্তগুলো যদি অনুপস্থিত থাকে, অথবা এর পরিপন্থী কোন কাজ পাওয়া যায়, তাহলে এ কালেমা পাঠ করা এবং এর লক্ষ্যে পৌঁছার মাঝে অনেক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে।
হাসান আল বসরী এবং ওয়াহাব বিন মোনাববিহ্ও এই মতই ব্যক্তি করেছেন এবং এ মতই হলো অধিক স্পষ্ট। হাসান আল বসরী (রহ.) থেকে আরো বর্ণিত হয়েছে, ফারাজদাক নামক কবি তার স্ত্রীকে দাফন করার সময় হাসান আল বসরী বলেন, এ দিনের - কিয়ামতের - জন্য কি প্রস্ত্ততি গ্রহণ করেছ? উত্তরে ফারাজদাক বললেন, সত্ত্বর বৎসর যাবৎ কালেমা " لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ " এর যে স্বীকৃতি দিয়ে আসছি সেটাই আমার সম্বল। হাসান আল বসরী বললেন, বেশ উত্তম প্রস্ত্ততি! কিন্তু এই কালেমার কতগুলো শর্ত রয়েছে তা কি তুমি জান? তুমি অবশ্যই সতী-সাধ্বী নারীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করে কবিতা লেখা থেকে নিজকে বিরত রাখবে। হাসান আল বসরীকে প্রশ্ন করা হলো, কিছু সংখ্যক মানুষ বলে থাকে যে, যে ব্যক্তি বলবে, " لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ " সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তখন তিনি বললেন, যে ব্যক্তি বলবে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’ এবং এর ফরজ ওয়াজিব আদায় করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এক ব্যক্তি ওয়াহাব বিন মোনাব্বিহকে বললেন,লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’ কি বেহেস্তের কুঞ্জি ?
তিনি বললেন, হাঁ, তবে প্রত্যেক চাবির মধ্যে দাঁত (কাটা) থাকে তুমি যে চাবি নিয়ে আসবে তাতে যদি দাঁত থাকে তবেই তোমার জন্য জান্নাতের দরজা খোলা হবে, নইলে না। লেখক বলেন, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এই কালেমা পাঠ করলেই জান্নাতে প্রবেশ করবে এর দাবি অনুযায়ী কাজ করা হোক বা নাই হোক অথবা যারা মনে করে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বললেই আর কখনো তাদেরকে কাফের বলা যাবে না, চাই মাজার পূজা ও পীর পূজার মাধ্যমে যত বড় শিরকের চর্চাই তারা করুক না কেন, তাদের কথা ঠিক নয়। এ সমস্ত শিরক মিশ্রিত কর্মকান্ড যে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর একেবারেই পরিপন্থী এ সন্দেহের অবসান করার জন্য আমি আহলে ইলমদের কথা থেকে যতটুকু এখানে উপস্থাপন করেছি তাই যথেষ্ট বলে মনে করি।
যারা কোরআন ও হাদীসের সংক্ষিপ্ত উদ্ধৃতি সমূহকে বিশদ ব্যাখ্যা দ্বারা না বুঝে ভাসা- ভাসা অর্থ গ্রহণ করে এবং এরপর এটাকে তাদের পক্ষের দলিল হিসাবে প্রমাণ করে, আর বিস্তারিত ব্যাখ্যাকারী উদ্ধৃতিসমূহকে উপেক্ষা করে, এটা হচ্ছে মূলত: পথ ভ্রষ্টকারীদের কাজ। এদের অবস্থা হলো ঐ সমস্ত লোকদের মত যারা কোরআনের কিছু অংশে বিশ্বাস করে আর কিছু অংশের সাথে কুফরি করে।
এদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,
هُوَ الَّذِيَ أَنزَلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ مِنْهُ آيَاتٌ مُّحْكَمَاتٌ هُنَّ أُمُّ الْكِتَابِ وَأُخَرُ مُتَشَابِهَاتٌ فَأَمَّا الَّذِينَ في قُلُوبِهِمْ زَيْغٌ فَيَتَّبِعُونَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ ابْتِغَاء الْفِتْنَةِ وَابْتِغَاء تَأْوِيلِهِ وَمَا يَعْلَمُ تَأْوِيلَهُ إِلاَّ اللّهُ وَالرَّاسِخُونَ فِي الْعِلْمِ يَقُولُونَ آمَنَّا بِهِ كُلٌّ مِّنْ عِندِ رَبِّنَا وَمَا يَذَّكَّرُ إِلاَّ أُوْلُواْ الألْبَابِ رَبَّنَا لاَ تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ رَبَّنَا إِنَّكَ جَامِعُ النَّاسِ لِيَوْمٍ لاَّ رَيْبَ فِيهِ إِنَّ اللّهَ لاَ يُخْلِفُ الْمِيعَادَ
তিনিই আপনার প্রতি কিতাব নাজিল করেছেন এতে কিছু সংখ্যক আয়াত রয়েছে সুস্পষ্ট, সেগুলো কিতাবের আসল অংশ। আর অন্যগুলো অস্পষ্ট। সুতরাং যাদের অন্তরে কুটিলতা রয়েছে তারা ফিতনা বিস্তার ও অস্পষ্ট আয়াতগুলোর অপ-ব্যাখ্যার অনুসরণ করে। মূলত সেগুলোর ব্যাখ্যা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। আর যারা জ্ঞানে সুগভীর তারা বলে, আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি, এসব আমাদের পালন-কর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। জ্ঞানী লোকেরা ছাড়া অন্য কেউ উপদেশ গ্রহণ করে না। হে আমাদের পালন-কর্তা! তুমি আমাদের সরল পথ প্রদর্শনের পর আমাদের অন্তরকে সত্য লঙ্ঘনে প্রবৃত্ত করো না এবং তোমার নিকট থেকে অনুগ্রহ দান কর, তুমিই সব কিছুর দাতা। হে আমাদের পালন-কর্তা! তুমি একদিন মানব জাতিকে অবশ্যই একত্রিত করবে, এতে কোন সন্দেহ নেই। নিশ্চয়ই আল্লাহ তার ওয়াদা ভঙ্গ করেন না।’’ (সূরা আলে ইমরান-৭-৯)
মুহাম্মদ মতিউল ইসলাম বিন আলী আহমদ 

No comments:

Post a Comment