তাওহিদের বিশ্বাসসমূহ : ১৯ : নেককার পীর-বুজুর্গ লোকদের ব্যাপারে সীমা লংঘন করা
নেককার পীর-বুজুর্গ লোকদের ব্যাপারে সীমা লংঘন করা আদম সন্তানের কাফের ও বেদ্বীন হওয়ার অন্যতম কারণ
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন,
يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لَا تَغْلُوا فِي دِينِكُمْ. # ألنساء: 171
‘‘হে আহলে কিতাব, তোমরা তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে সীমা লংঘন করো না। (নিসা . ১৭১)
সহিহ হাদিসে ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ তাআলার বাণী
وَقَالُوا لَا تَذَرُنَّ آَلِهَتَكُمْ وَلَا تَذَرُنَّ وَدًّا وَلَا سُوَاعًا وَلَا يَغُوثَ وَيَعُوقَ وَنَسْرًا # نوح: 23
‘‘কাফেররা বললো, ‘তোমরা নিজেদের মাবূদগুলোকে পরিত্যাগ করোনা। বিশেষ করে ‘ওয়াদ, ‘সুআ, ‘ইয়াগুছ ‘ইয়াঊক এবং ‘নসর কে কখনো পরিত্যাগ করোনা। (নূহঃ ২৩)- এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘এগুলো হচ্ছে নূহ (আ.) এর কওমের কতিপয় নেককার ও বুজুর্গ ব্যক্তিদের নাম, তারা যখন মৃত্যু বরণ করলো, তখন শয়তান তাদের কওমকে কুমন্ত্রণা দিয়ে বললো, ‘যেসব জায়গায় তাদের মজলিস বসতো সে সব জায়গাগুলোতে তাদের [বুজুর্গ ব্যক্তিদের] মুর্তি স্থাপন করো এবং তাদের সম্মানার্থে তাদের নামেই মুর্তিগুলোর নামকরণ করো। তখন তারা তাই করলো। তাদের জীবদ্দশায় মুর্তির পূজা করা হয়নি ঠিকই; কিন্তু মূর্তি স্থাপন কারীরা যখন মৃত্যু বরণ করলো এবং মুর্তি স্থাপনের ইতিকথা ভুলে গেলো, তখনই মুর্তিগুলোর ইবাদত শুরু হলো।
ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) বলেন, একাধিক আলেম ব্যক্তি বলেছেন, ‘যখন নেককার ও বুজুর্গ ব্যক্তিগণ মৃত্যু বরণ করলেন, তখন তাঁদের কওমের লোকেরা তাঁদের কবরের পাশে ধ্যান-মগ্ন হয়ে বসে থাকতো। এরপর তারা তাঁদের প্রতিকৃতি তৈরী করলো। এভাবে বহুদিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর তারা তাঁদের ইবাদতে লেগে গেলো।
ওমর (রা.) থেকে বর্নিত হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
لا تطروني كما أطرت النصارى ابن مريم، إنما أنا عبده فقولوا عبد الله ورسوله # أخرجاه
‘‘তোমরা আমার মাত্রাতিরিক্ত প্রশংসা করোনা যেমনিভাবে প্রশংসা করেছিলো নাসারারা মরিয়ম তনয় ঈসা (আঃ) এর। আমি আল্লাহ তাআলার বান্দা মাত্র। তাই তোমরা আমাকে আল্লাহর বান্দা এবং তাঁরই রাসূল বলবে। (বুখারি ও মুসলিম)
ওমর (রা.) আরো বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
إياكم والغلو فإنما أهلك من كان قبلكم الغلو
‘‘তোমরা বাড়া-বাড়ি ও সীমা অতিক্রমের ব্যাপারে সাবধান থাকো। কেননা, তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিগুলো (দ্বীনের ব্যাপারে) সীমা লংঘন করার ফলে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।
মুসলিম শরীফে ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্নিত এক হাদীসে, রাসূল ইরশাদ করেছেন,
هلك المتنطعون قالها ثلاثا
‘‘দ্বীনের ব্যাপারে সীমা লংঘন কারীরা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। এ কথা তিনি তিনবার বলেছেন।
এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়
১। যে ব্যক্তি এ অধ্যায়টি সহ পরবর্তী দুটি অধ্যায় উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে, ইসলাম সম্পর্কে মানুষ কতটুকু অজ্ঞ, তার কাছে তা সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে। সাথে সাথে আল্লাহ তাআলার কুদরত এবং মানব অন্তরের আশ্চর্য জনক পরিবর্তন ক্ষমতা লক্ষ্য করতে পারবে।
২। পৃথিবীতে সংঘটিত প্রথম শিরকের সূচনা, যা নেককার ও বুজুর্গ ব্যক্তিদের প্রতি সংশয় ও সন্দেহ থেকে উৎপত্তি হয়েছে।
৩। সর্বপ্রথম যে জিনিসের মাধ্যমে নবিগণের দ্বীনে পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল এবং এর কারণ সম্পর্কে জ্ঞান লাভের সাথে সাথে একথাও জেনে নেয়া যে, আল্লাহ তাআলাই তাদেরকে [দ্বীন কায়েমের জন্য] পাঠিয়েছেন।
৪। ‘শরীয়ত এবং ফিতরাত ‘বিদআতকে প্রত্যাখ্যান করা সত্তেও বেদআত গ্রহণ করার কারণ সম্পর্কে অবগতি লাভ।
৫। উপরোক্ত সকল গোমরাহীর কারণ হচ্ছে, হকের সাথে বাতেলের সংমিশ্রন, এর প্রথমটি হচ্ছে, সালেহীন বা নেককার ও বুজুর্গ লোকদের প্রতি [মাত্রাতিরিক্ত] ভালবাসা। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, কতিপয় জ্ঞানী ধার্মিক ব্যক্তিদের এমন কিছু আচরণ, যার উদ্দেশ্য ছিল মহৎ, কিন্তু পরবর্তীতে কিছু লোক উক্ত কাজের উদ্দেশ্য ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে ‘বেদআত ও শিরকে লিপ্ত হয়।
৬। সূরা নূহের ২৩ নং আয়াতের তাফসির।
৭। মানুষের অন্তরে হকের প্রতি ঝোক প্রবণতার পরিমাণ কম। কিন্তু বাতিলের প্রতি ঝোক প্রবণতার পরিমাণ অপক্ষোকৃত বেশী।
৮। কোন কোন সালাফে-সালেহীন থেকে বর্ণিত আছে যে, বেদআত হচ্ছে কুফরীর কারণ। তাছাড়া ইবলিস অন্যান্য পাপের চেয়ে এটাকেই বেশী পছন্দ করে। কারণ পাপ থেকে তওবা করা সহজ হলেও বেদআত থেকে তওবা করা সহজ নয়। [কারণ বিদয়াত তো সওয়াবের কাজ মনে করে করা হয় বলে পাপের অনুভূতি থাকে না, তাই তাওবারও প্রয়োজন অনুভুত হয় না]
৯। আমলকারীর নিয়ত যত মহৎই হোক না কেন, বিদআতের পরিণতি কি, তা শয়তান ভাল করেই জানে। এ জন্যই শয়তান আমল কারীকে বিদআতের দিকে নিয়ে যায়।
১০। ‘‘দ্বীনের ব্যাপারে সীমা লংঘন করা না করা এ নীতি সম্পর্কে এবং সীমা লংঘনের পরিণতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা।
১১। নেক কাজের নিয়তে কবরের পাশে ধ্যান-মগ্ন হওয়ার ক্ষতি সম্পর্কে অবগত হওয়া।
১। যে ব্যক্তি এ অধ্যায়টি সহ পরবর্তী দুটি অধ্যায় উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে, ইসলাম সম্পর্কে মানুষ কতটুকু অজ্ঞ, তার কাছে তা সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে। সাথে সাথে আল্লাহ তাআলার কুদরত এবং মানব অন্তরের আশ্চর্য জনক পরিবর্তন ক্ষমতা লক্ষ্য করতে পারবে।
২। পৃথিবীতে সংঘটিত প্রথম শিরকের সূচনা, যা নেককার ও বুজুর্গ ব্যক্তিদের প্রতি সংশয় ও সন্দেহ থেকে উৎপত্তি হয়েছে।
৩। সর্বপ্রথম যে জিনিসের মাধ্যমে নবিগণের দ্বীনে পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল এবং এর কারণ সম্পর্কে জ্ঞান লাভের সাথে সাথে একথাও জেনে নেয়া যে, আল্লাহ তাআলাই তাদেরকে [দ্বীন কায়েমের জন্য] পাঠিয়েছেন।
৪। ‘শরীয়ত এবং ফিতরাত ‘বিদআতকে প্রত্যাখ্যান করা সত্তেও বেদআত গ্রহণ করার কারণ সম্পর্কে অবগতি লাভ।
৫। উপরোক্ত সকল গোমরাহীর কারণ হচ্ছে, হকের সাথে বাতেলের সংমিশ্রন, এর প্রথমটি হচ্ছে, সালেহীন বা নেককার ও বুজুর্গ লোকদের প্রতি [মাত্রাতিরিক্ত] ভালবাসা। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, কতিপয় জ্ঞানী ধার্মিক ব্যক্তিদের এমন কিছু আচরণ, যার উদ্দেশ্য ছিল মহৎ, কিন্তু পরবর্তীতে কিছু লোক উক্ত কাজের উদ্দেশ্য ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে ‘বেদআত ও শিরকে লিপ্ত হয়।
৬। সূরা নূহের ২৩ নং আয়াতের তাফসির।
৭। মানুষের অন্তরে হকের প্রতি ঝোক প্রবণতার পরিমাণ কম। কিন্তু বাতিলের প্রতি ঝোক প্রবণতার পরিমাণ অপক্ষোকৃত বেশী।
৮। কোন কোন সালাফে-সালেহীন থেকে বর্ণিত আছে যে, বেদআত হচ্ছে কুফরীর কারণ। তাছাড়া ইবলিস অন্যান্য পাপের চেয়ে এটাকেই বেশী পছন্দ করে। কারণ পাপ থেকে তওবা করা সহজ হলেও বেদআত থেকে তওবা করা সহজ নয়। [কারণ বিদয়াত তো সওয়াবের কাজ মনে করে করা হয় বলে পাপের অনুভূতি থাকে না, তাই তাওবারও প্রয়োজন অনুভুত হয় না]
৯। আমলকারীর নিয়ত যত মহৎই হোক না কেন, বিদআতের পরিণতি কি, তা শয়তান ভাল করেই জানে। এ জন্যই শয়তান আমল কারীকে বিদআতের দিকে নিয়ে যায়।
১০। ‘‘দ্বীনের ব্যাপারে সীমা লংঘন করা না করা এ নীতি সম্পর্কে এবং সীমা লংঘনের পরিণতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা।
১১। নেক কাজের নিয়তে কবরের পাশে ধ্যান-মগ্ন হওয়ার ক্ষতি সম্পর্কে অবগত হওয়া।
রচয়িতা : মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহহাব
No comments:
Post a Comment