ইসলামের দৃষ্টিতে অর্থ উপার্জন

ইসলামের দৃষ্টিতে অর্থ উপার্জন

ওয়লিউল্লাহ সিরাজ

ইসলামের দৃষ্টিতে অর্থ উপার্জন
ইসলাম পরিপূর্ণ এক জীবন ব্যবস্থার নাম। এতে মানবজীবনের ব্যক্তিগত পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল সহ যাবতীয় সকল বিষয়ের সমাধান রয়েছে।  মানুষের জাগতিক জীবনে চাহিদার কোনো শেষ নেই।
মানুষ নিজের সামর্থ্য ও যোগ্যতানুযায়ী নিজেই প্রয়োজনীয় অর্থ-সম্পদ উপার্জন করবে এটা তার সৃষ্টিগত অধিকার। কিন্তু অর্থ-সম্পদ উপার্জন সে সকল পথ ও পন্থা অবশ্যই বৈধ হতে হবে। হাদিস শরিফে নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছলাল্লাম উত্তম উপার্জন সম্পর্কে বলেছেন,  “অর্থ ‘মানুষের দুই হাতের কাজ ও হালাল ব্যবসায় উপার্জন (মিশকাত)।” ইসলামে ব্যবসায়-বাণিজ্য করা একটি উত্তম ও বৈধ কাজ।
এই পৃথিবীতে মানবজাতির হেদায়েতের জন্য আল্লাহ তায়ালা বহু নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন । এবং তাঁরা সকলেই নিজ হাতে কিভাবে প্রয়োজনীয় অর্থ-সম্পদ উপার্জন করবে সে পন্থাও শিখিয়ে দিয়েছেন।  কোন কোন নবী-রাসূল ছাগল, মেষ ও ভেড়া চরিয়ে অর্থ উপার্জন করেছেন। কেউ কেউ ব্যবসা-বাণিজ্য করে অর্থ উপার্জন করেছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারায় ইরশাদ করেছেন, অর্থ- “আল্লাহ তায়ালা ক্রয়-বিক্রয় হালাল (বৈধ) করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন” (সূরা বাকারা : ২৭৫)।
মানবজীবনে অর্থনীতির গুরুত্ব অপরিসীম। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা, মানুষের মৌলিক অধিকার। এগুলোর যোগান দিতে মানুষকে অর্থ উপার্জনের না পন্থা বেছে নিতে হয়। অর্থ উপার্জনে ও জীবিকা নির্বাহের জন্য মানুষ স্বাভাবিক ভাবে দু-ধরণের পেশা অবলম্বন করে। চাকরি বা ব্যবসায় । তবে সেই চাকরি ও ব্যাসায়কেও হতে হবে বৈধ। আর এদুটোই হচ্ছে অর্থ উপার্জনের বৈধ পন্থা । অর্থ উপার্জনের মাধ্যম ছাড়া কারো পক্ষেই এসব মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ করা সম্ভব নয় ।
অর্থনীতি মানুষের জীবন নির্বাহের অন্যতম চালিকা শক্তি হিসেবে সমাদৃত।  মানব জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে পরিগণিত। তাই আল্লাহ তা‘আলা ফরয ইবাদত সমাপনান্তে জীবিকা নির্বাহে উপার্জন করার লক্ষ্যে যমিনে ছড়িয়ে পড়তে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি ইরশাদ করেছেন: অর্থ- ‘‘সালাত সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান কর, এবং আল্লাহকে অধিক স্মরন করবে যাতে তোমরা সফলকাম হও।” (জুমুয়া ১০)
তাছাড়া ব্যক্তি জীবনে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হওয়ার ব্যাপারে বিশ্বনবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনভাবে উৎসাহিত করেছেন যে,  ভিক্ষাবৃত্তিকে তিনি নিন্দা করেছেন। এ মর্মে যুবাইর ইবনে ‘আউয়াম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: অর্থ- “তোমাদের কেউ তার রশি নিয়ে চলে যাক, পিঠে কাঠের বোঝা বহন করে এনে বিক্রয় করুক এবং তার চেহারাকে আল্লাহর আযাব থেকে বাঁচিয়ে রাখুক, এটা তার জন্য মানুষের নিকট ভিক্ষা করা, চাই তাকে দান করুক বা না করুক তার চাইতে উত্তম।”
সুতরাং সক্ষম ও কর্মক্ষম প্রত্যেক মানুসেরই উচিত  বেঁচে থাকার তাগিদে ও আর্থিক ভাবে সাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করা।

No comments:

Post a Comment