মাওলানা মিরাজ রহমান
ইসলাম যে সব হক বা অধিকারের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো-এক মুসলমান ভাইয়ের ওপর অন্য মুসলমান ভাইয়ের হক বা অধিকার। পবিত্র কোরানে ইরশাদ হয়েছে, নিশ্চয় মুমিনরা পরস্পর ভাই-ভাই। কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপস-মীমাংসা করে দাও। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, আশা করা যায় তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হবে। [সুরা আল হুজুরাত : ১০] ইসলামি ভ্রাতৃত্ব আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া একটি মহামূল্যবান নিয়ামত।
মহাকবি আল্লামা শেখ সাদি [রহ.] তার কবিতায় গোটা মুসলিম জাতিকে একটি মানব শরীর বলেছেন। আমাদের সবার উচিত যে কোনো মূল্যে অপর মুসলমান ভাইয়ের হক বা অধিকার আদায় করার মাধ্যমে এই ভ্রাতৃত্ববোধের ফল্গুধারাকে অব্যাহত রাখার সর্বাÍক চেষ্টা করা। এক মুসলমানের ওপর অন্য মুসলমান ভাইয়ের সর্বপ্রথম হক হলো একমাত্র আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করার উদ্দেশ্যে তাকে ভালোবাসা।
হজরত আনাস [রা.] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল [সা.] বলেছেন, তিনটি গুণ যার মধ্যে রয়েছে, সে ইমানের স্বাদ অনুভব করবে। ১. আল্লাহ ও তার রাসুল তার কাছে গোটা সৃষ্টিজগৎ অপেক্ষা অধিক প্রিয় হওয়া। ২. মানুষকে ভালোবাসলে একমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালোবাসা। ৩. কুফরিতে ফিরে যাওয়া তার কাছে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মতোই অপছন্দনীয় হওয়া।
মুসলিম শরিফের একটি সহিহ হাদিসে এক মুসলমানের প্রতি অন্য মুসলমানের সুনির্দিষ্ট ছয়টি হকের আলোচনা এসেছে। হকগুলো হলো-১. তুমি যখন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, তাকে সালাম দেবে। ২. সে যখন তোমাকে দাওয়াত করবে তখন তা গ্রহণ করবে। ৩. সে যখন তোমার কাছে পরামর্শ চাইবে, তখন তুমি তাকে পরামর্শ প্রদান করবে। ৪. যখন সে হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলবে, তখন তুমি ইয়ারহামুকাল্লাহ বলবে। ৫. যখন সে অসুস্থ হবে, তখন তাকে দেখতে যাবে। ৬. যখন সে মারা যাবে, তখন তার জানাজা ও দাফন-কাফনে অংশগ্রহণ করবে। এক মুসলমানের ওপর অন্য মুসলমানের আরেকটি হক হলো, তার সম্পর্কে মনে কোনো হিংসা-বিদ্বেষ পুষে না রাখা। কারণ মুমিন হবে পরিষ্কার মনের অধিকারী। তার অন্তর হবে অনাবিল-শুদ্ধ। তার হৃদয় হবে কোমল ও দয়ার্দ্র। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে অপর মুসলিম ভাইয়ের হক বা অধিকারগুলোকে যথাযথভাবে আদায় করার মাধ্যমে ইসলামি ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠা করার তওফিক দান করুন। আমিন।
No comments:
Post a Comment