হাফেজ মাওলানা সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর
আমাদের উপমহাদেশের মুসলিমরাও খুব ঘটা করে এপ্রিল ফুলের বেদনাবহ স্মরণদিবস পালন করেন। ইসলামি ঘরানার ম্যাগাজিন, পত্র-পত্রিকা, প্রতিষ্ঠান তো বটেই আমাদের অনেক জাতীয় দৈনিকও দিবসটি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের হামদর্দি প্রকাশ করে কলাম বা আবেগী লেখা ছাপে। ইদানীং ফেসবুক, ব্লগ, টুইটারসহ অনলাইনের হেন কোনো মাধ্যম নেই যেখানে এপ্রিল ফুল নিয়ে অতি আবেগী মুসলমানরা হামদর্দিতে আহা-উহু করেন না। কী কারণে ?
কারণ, এপ্রিলের ১ লা তারিখে মুসলমানদের করতল থেকে সম্মিলিত আক্রমণের মাধ্যমে স্পেনের তৎকালীন রাজধানী গ্রানাডা দখল করে নেন পার্শ্ববর্তী অ্যারাগোন রাজ্যের রাজা ফার্ডিন্যান্ড এবং ক্যাস্টিলের রানি ইসাবেলা।কিন্তু এটা ইতিহাসের কত খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত হয়েছিলো? সেটা কি এপ্রিল মাসে হয়েছিলো নাকি অন্য কোনো মাসে ? এখানেই আসল রহস্য। চলুন আমরা আলোচনার গভীরে প্রবেশ করি এবং জানতে চেষ্ঠা করি একটি ইতিহাস বদলের ইতিহাসকে…
৩০ এপ্রিল ৭১১ খ্রিস্টাব্দ
মুসলিম সেনাপতি তারিক বিন জিয়াদ জাবালুত্তারিক (জিব্রাল্টার) বন্দরে অবতরণ করেন এবং ক্রমান্বয়ে স্পেন দখল করেন। এরপর ৭১১ খ্রিস্টাব্দ থেকে শুরু করে ৭৮০ বছর পর্যন্ত মুসলিমরা স্পেন শাসন করে। কিন্তু শেষদিকে অর্থাৎ ১৪০০ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে মুসলিম শাসকদের নৈতিক অধঃপতন শুরু হলে স্পেনের ভাগ্যাকাশেও দেখা দেয় দুর্যোগের ঘনঘটা। আশপাশের খ্রিস্টান রাজারা ক্রমাগত আক্রমণ করতে থাকে স্পেনের মুসলিম রাজ্যসমূহে। ফলশ্রুতিতে ১৪৯২ খ্রিস্টাব্দের ২ রা জানুয়ারি গ্রানাডার তৎকালীন মুসলিম শাসক আবু আব্দুল্লাহ (পাশ্চাত্যে তাকে ববডিল নামে ডাকা হয়) রাজা ফার্ডিন্যান্ড এবং রানি ইসাবেলার সঙ্গে এক চুক্তির মাধ্যমে পরাজয় স্বীকার করে নেন।
গ্রানাডার সর্বশেষ মুরিস শাসক (Moorsih king) ছিলেন নাসরিদ বংশীয় আবু আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ (Abu Abdullah Muhammad XII)। বিলাস-ব্যসনে মত্ত ও উচ্ছন্নে যাওয়া আবু আব্দুল্লাহ ছিলেন গ্রানাডার তাইফার সুলতান আবুল হাসানের ছেলে। ছেলের ষড়যন্ত্র ও কুচক্রের কারণে অনেকটা সিরাজুদ্দৌলার মতোই বাবা আবুল হাসান পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। মির জাফরের মতো আবু আব্দুল্লাহকে বানানো হয় নামকাওয়াস্তে সুলতান। এই পুতুল সুলতানের কাছেও ১৪৮৯ সালে ফার্ডিন্যান্ড ও ইসাবেলার কাছ থেকে চূড়ান্তরূপে নিঃশর্তভাবে আত্মসমর্পণের নির্দেশনা আসে এবং স্মরণ করিয়ে দেয়া হয় অস্বীকারের ভয়াবহ পরিণতির কথাও।
বিভিন্ন এনসাইক্লোপিডিয়ার ইতিহাস অনুযায়ী আবু আব্দুল্লাহ উপায়ান্তর না দেখে গ্রানাডা সম্পূর্ণভাবে হস্তান্তর করতে বাধ্য হন ১৪৯২ সালের ২ রা জানুয়ারিতে। একটি উদাহরণ পাওয়া যেতে পারে এম বি সিঞ্জ (M B Synge) তার দ্যা বাল্ডউইন্স প্রজেক্ট (The Baldwins Project) প্রকাশিত ‘সাহসী মানুষদের সাহসী কাজ’ (Brave Men and Brave Deeds)’ নামক আর্টিকেলে। তিনি লিখেছেন, December had nearly passed away. The famine became extreme, and Boabdil determined to surrender the city on the second of January.
“ডিসেম্বর শেষ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। দুর্ভিক্ষ চরম আকার ধারণ করেছে। আর ববডিল (আবু আব্দুল্লাহ) গ্রানাডা আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নিলেন ২ রা জানুয়ারি।” এখানে উল্লেখ্য যে, খ্রিস্টান বাহিনী কয়েক মাস ধরে গ্রানাডার চারপাশে অবস্থান নিয়ে এ নগরীকে অবরোধ করে রেখেছিলো। ফলে সেখানে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়।
স্পেন থেকে মুসলমানদেরকে ১৪৯২ সালেই বের করে দেয়া হয়নি। শাসক আবু আব্দুল্লাহর সাথে ইসাবেলা আর ফার্ডিন্যান্ডের যে চুক্তি হয়েছিলো তাতে গ্রানাডার মুসলমানদের পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু পরবর্তীকালে মুসলমানদের হয় ক্যাথলিক নয়তো স্পেন ছাড়ার পছন্দ দেয়া হয়েছিলো। যারা স্পেন ছাড়েনি তারা ক্যাথলিক ছদ্মবেশে মুসলিমই থেকে যান। খ্রিস্টানরাও জানতো তারা মুসলমান। আর এদেরকেই তারা মরিস্কো উপাধি দেয়। মরিস্কোদের পুরোপুরি স্পেন থেকে বহিষ্কার করা হয় ১৬০৯ থেকে ১৬১৪ সালের মধ্যে। এটাও করা হয়েছিলো; রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা হারানো মরিস্কোদের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য বিদ্রোহ করার পর।
এই হলো স্পেনে মুসলমানদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। আমার এই আলোচনায় ১৪৯২ সালের ২ রা জানুয়ারি তারিখটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা আমাদের মাঝে প্রচলিত আছে যে, মুসলমানদের সঙ্গে চুক্তি করার নামে খ্রিস্টান বাহিনী ষড়যন্ত্র করে রাতের আঁধারে গ্রানাডায় ঢুকে পড়ে এবং শহরবাসীকে নিরাপত্তার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে মসজিদে ঢুকিয়ে সেগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। পুড়িয়ে মারা হয় হাজার হাজার মুসলিম শহরবাসীকে। আর এই তারিখটি ছিলো এপ্রিলের ১ লা তারিখ। যেহেতু মুসলমানদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বোকা বানিয়ে অগ্নিদগ্ধ করে মারা হয় তাই খ্রিস্টানরা বলতে থাকে ওরা এপ্রিলের বোকা- ‘এপ্রিল ফুলস’ (April Fools)। সেখান থেকেই এপ্রিল ফুল বিষয়টি এসেছে এবং মুসলমানদের মাঝে তা আবেগতাড়িত বেদনায় পালিত হয়।
আসল ঘটনা এই এপ্রিল ফুলকে নিয়েই
আসল ঘটনা এই এপ্রিল ফুলকে নিয়েই। ইতিহাসে আমরা দেখতে পাচ্ছি, মুসলমানদের পরাজয়ের দিনটি ছিলো ১৪৯২ সালের ২ রা জানুয়ারি। এপ্রিলের ১ তারিখ বা এপ্রিল মাসেও নয়। তদুপরি এটা কতো সালের এপ্রিল মাসের ঘটনা সে বিষয়েও কেউ সঠিক কোনো তথ্য দিতে পারেন না। এটা যদি ১৪৯২ খ্রিস্টাব্দের ১ লা এপ্রিল হয়ে থাকে তবে সম্পূর্ণই মিথ্যা একটি রটনা ছাড়া কিছুই নয়। কেননা ইতিহাসের সমস্ত দলিল-প্রমাণে খুব স্পষ্ট করেই লেখা রয়েছে যে, স্পেনে মুসলিমদের পরাজয়ের দিনটি ছিলো ২ রা জানুয়ারি ১৪৯২ এবং এর আগে ‘ট্রিটি অব গ্রানাডা’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যে চুক্তিনামায় খ্রিস্টানদের হাতে গ্রানাডার কর্তৃত্ব তুলে দেয়া সংক্রান্ত শর্তাদি লেখা ছিলো। তাহলে এপ্রিল ফুলের বিষয়টি এলো কোথা থেকে? যেখানে পরাজয় ঘটেছে জানুয়ারি মাসের ২ তারিখে সেখানে এপ্রিলের ১ লা তারিখ কেনো আসবে তা কিছুতেই বোধগম্য নয়। নারকীয় হত্যাকাণ্ড যদি ঘটে থাকে তবে তাতো শহরে ঢোকার দিনই ঘটার কথা এবং আমাদের মাঝে প্রচলিত ইতিহাসও তাই বলে। কিন্তু আমরা সব ইতিহাসের দলিল-প্রমাণে দেখতে পাচ্ছি সেটি জানুয়ারির ২ তারিখ। তাহলে ১ লা এপ্রিলের বিষয়টি কোত্থেকে এলো?
যা হোক, এ ব্যাপারে আমরা কয়েকটি প্রামাণ্য দলিল পেশ করতে পারি। তাহলে হয়তো আমরা আমাদের এতোদিনকার বোকামিটা ধরতে পারবো।
প্রামাণ্য দলিল-১
স্পেনে মুসলমানদের পরাজয়ের ঘটনার কয়েক দশক পরে আলজেরিয়ায় জন্ম নেয়া বিখ্যাত ইতিহাসবিদ আবুল আব্বাস আহমাদ ইবনে মোহাম্মদ আল মাকারি (১৫৭৮-১৬৩২) স্পেনে মুসলমানদের আগমন, শাসন এবং পতন নিয়ে রচনা করেন The history of the Mohammedan Dynasties in Spain (extracted from the Nafhu-t-Tib Min Ghosni-l-Andalusi-r-Rattib. Volume 2) (মূল আরবি বইয়ের ইংরেজি অনুবাদ) ‘দ্য হিস্ট্রি অব দ্য মোহাম্মাদান ডাইনেস্টি ইন স্পেন’। এ গ্রন্থে তিনি অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী ভাষায় ধারাবাহিক বর্ণনায় স্পেনে মুসলমানদের পরাজয়ের বিষয়গুলো লিপিবদ্ধ করেছেন। কিন্তু কোথাও তিনি এপ্রিল ফুল জাতীয় কোনো ঘটনার কথা উল্লেখ করেননি।
উল্লিখিত গ্রন্থের ৪৪ নং পৃষ্ঠায় তিনি The End of Islamic Garnata ‘ইসলামি গ্রানাডার সমাপ্তি’ শিরোনামে একটি অনুচ্ছেদে পরাজয়ের ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন এবং পরাজয় পরবর্তী সময়ে মুসলমানদের সঙ্গে খ্রিস্টান শাসকরা কেমন আচরণ করেছেন সে বিষয়েও আলোকপাত করেছেন।
ঘটনার এতো নিকটবর্তী সময়ের একজন সমসাময়িক মুসলিম ঐতিহাসিক এমন বীভৎস ঘটনা ঘটে থাকলে তা উল্লেখ করবেন না- এমনটি ভাবা মূর্খতা। তার ওপর তার পূর্বপুরুষরাও ছিলেন স্পেনীয়। তিনিও বাস করতেন স্পেনের পার্শ্ববর্তী রাজ্যে। সুতরাং তার ইতিহাসগ্রন্থে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বাদ যাবে- তা হতে পারে না।
তিনি তার গ্রন্থের ৪৪ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন- After a series of negotiations and assurances that the Christians would safeguard the agreement that was about to be signed, the Garnata Capitulations were signed in 1491, (otherwise known as The Treaty of Garnata), and in 1492 the Christian forces took over the city, and thus Islamic rule of Andalus ended after almost 780 years of continuous rule. Albeit this did not mean that 1492 marked the end of the Muslim presence in Andalus...
পুরো অনুচ্ছেদে মুসলমানদের মসজিদে ঢুকিয়ে আগুনে পুড়িয়ে মারার কোনো তথ্যই নেই বা এই জাতীয় কোনো ঘটনার কথাও বলা হয়নি। তাহলে বিশ্বাসযোগ্য সত্যটি আসলে কী? সে বিষয়ে আমরা একটু পরেই আলোকপাত করবো। তবে কেউ পুরো বইটি পড়তে চাইলে এই ওয়েবঠিকানায় [www.islamguiden.com] ঢুঁ মেরে দেখতে পারেন। এছাড়াও বিশিষ্ট মুসলিম ইতিহাসবিদ এস. এম. ইমামুদ্দিন রচিত A political history of Muslim Spain গ্রন্থেও আলোচিত এপ্রিল ফুল জাতীয় কোনো ঘটনার উল্লেখ নেই।
প্রামাণ্য দলিল-২
১৪৯২ সালের ২ রা জানুয়ারি, আমেরিকা মহাদেশ আবিষ্কারক পর্তুগিজ নাবিক ক্রিস্টোফার কলম্বাস সেদিন উপস্থিত ছিলেন সেই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে। তিনি পর্তুগালের লোক ছিলেন এবং সমুদ্রযাত্রা করার জন্য গ্রানাডা অবস্থান করছিলেন। তিনিও অত্যন্ত বেদনাহত ভাষায় মুসলমানদের পরাজয়ের ব্যাপারটি বর্ণনা করেছেন। তিনি তার ডায়েরিতে সেদিনের সে ঘটনাটি খুব নিপুণভাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি লিখেছেন-... This present year of 1492, after Your Highnesses had brought to an end the war with the Moors who ruled in Europe and had concluded the war in the very great city of Granada, where this present year on the second day of the month of January I saw the Royal Standards of Your Highnesses placed by force of arms on the towers of the Alhambra, which is the fortress of the said city; and I saw the Moorish King come out to the gates of the city and kiss the Royal Hands of Your Highnesses and of the Prince my Lord;(E. G. Bourne, ed., The Northmen, Columbus and Cabot (New York, 1906)
কলম্বাস বলছেন, ‘১৪৯২ সালে মহামান্য রানি গ্রানাডা শহর দখলের মাধ্যমে ‘মুর’দের হাত থেকে যুদ্ধ করে ছিনিয়ে আনেন বিজয়। মহামান্য রানি কর্তৃক মুরদের কাছ থেকে গ্রানাডা দখলের পর আমি শহরের দুর্গ আলহামরার চূড়ায় রাজকীয় পতাকা উড়তে দেখেছি। ...এবং আমি দেখলাম মুরদের রাজা (আবু আব্দুল্লাহ) শহর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় রানি এবং রাজকুমারের হাতে চুমু খেলেন...।’ কলম্বাসের ডায়েরিতেও পরাজয়ের দিন মসজিদে ঢুকিয়ে পুড়িয়ে মারার কোনো তথ্য নেই। পরবর্তী কয়েকমাসের দিনপঞ্জিও পাওয়া গেছে তবে সেগুলোর মধ্যেও এধরনের কোনো ঘটনার উল্লেখ নেই। এ বছরের অক্টোবর মাসেই ক্রিস্টোফার কলম্বাস ভারত উপমহাদেশ আবিস্কারের উদ্দেশে সমুদ্রযাত্রা শুরু করেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে যদিও তিনি ভারত আবিস্কার না করে আবিস্কার করেন আমেরিকা মহাদেশ। সুতরাং এ বছরটি ইতিহাসে খুবই গুরুত্ব বহন করে। তাই স্বভাবতই যেকোনো ইতিহাসবিদ কলম্বাসের প্রথম সমুদ্রযাত্রার পূর্বাপর পরিস্থিতি এবং সময়ক্রম বর্ণনা করবেন, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কলম্বাসের জীবনীর কোথাও ১ এপ্রিলের কোনো ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায় না। অথচ পহেলা এপ্রিল তিনি গ্রানাডায় উপস্থিত ছিলেন। সে সময় উল্লেখযোগ্য কোনো ঘটনা ঘটলে তার মতো একজন সত্যানুসন্ধানী ব্যক্তি তা এড়িয়ে যাবেন বলে মনে করাটা বোকামি।অনেকেই বলতে পারেন, খ্রিস্টানদের দ্বারা লিখিত ইতিহাস মেনে নেয়া যায় না। তাদের জন্য আল-মাকারির উদ্ধৃতি এবং সে সময়কার অন্যান্য মুসলিম ঐতিহাসিকদের রচনা পড়ার পরামর্শ থাকবে। সেগুলোর কোনোটিতেই এপ্রিল ফুল বা এপ্রিলের ১ লা তারিখের কোনো ঘটনার উল্লেখ নেই। যা আমরা আগেই উল্লেখ করেছি।
হ্যাঁ, একথা সত্য যে, পরবর্তী সময়ে স্পেনের খ্রিস্টান শাসকরা মুসলমানদের ওপর বহুবিধ নির্যাতন চালিয়েছে। এমনকি গ্রানাডায় মুসলমানদের পরাজয়ের কয়েক বছর পর যেসব মুসলমান তখনও স্পেনে ছিলো তাদের স্পেন থেকে বিতাড়িত করার জন্য খ্রিস্টানরা অমানবিক নির্যাতন চালানো শুরু করে। সেখানকার মসজিদগুলো গির্জায় রূপান্তরিত করা হয়, বাজেয়াপ্ত করা হয় মুসলমানদের সম্পত্তি, অনেককে তাড়িয়ে দেয়া হয় দেশ থেকে। এছাড়াও মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্ব করা হয় চরমভাবে।
নতুন ইতিহাস
এখানে আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, খ্রিস্টানদের এই নির্যাতনের আওতায় কেবল মুসলমানরাই ছিলো না বরং গ্রানাডার অধিবাসী প্রায় তিন লাখ ইহুদিকেও এই একই ভাগ্যবরণ করতে হয়। উপরন্তু ইহুদিদের ওপর খ্রিস্টানরা মুসলমানদের চেয়ে বেশি নির্যাতন চালায় এবং ১৪৯২ সালের ৩১ মার্চ [এই তারিখটি স্মরণ রাখা প্রয়োজন] রানি ইসাবেলা ও রাজা ফার্ডিন্যান্ড ইহুদিদের দমনে ‘আল-হামরা ডিক্রি’ নামে একটি অধ্যাদেশ জারি করেন। সেখানে ইহুদিদের দুটি প্রধানশর্ত দেয়া হয়। এক. যদি স্পেনে থাকতে চাও তবে খ্রিস্টানধর্ম গ্রহণ করতে হবে; দুই. অন্যথায় এ দেশ থেকে চলে যেতে হবে। ষড়যন্ত্রপ্রিয় এবং দাঙ্গাপ্রিয় ইহুদিদেরকে অত্যন্ত অপমানজনকভাবে স্পেন থেকে তাড়ানো হয়।
১৪৯২ সালের মার্চে যদিও স্পেনের ইহুদিদের ৩ মাসের সময় দিয়ে আল-হামরা ডিক্রি জারি করা হয় কিন্তু এ ডিক্রির আওতায় মুসলমানরা ছিলো না। কেননা ২ রা জানুয়ারি ১৪৯২ সালে যে ‘ট্রিটি অব গ্রানাডা’ স্বাক্ষরিত হয় সেখানে মুসলমানদের সঙ্গে এ ধরনের কোনো আচরণ করা হবে না বলে শর্তারোপ করা ছিলো। তাই খ্রিস্টান শাসকরা কার্যত তখনো মুসলমানদের ওপর প্রত্যক্ষ কোনো বিধি-নিষেধ আরোপ করতে পারেনি।কিন্তু এর কিছুদিন পর থেকেই ক্রমান্বয়ে খ্রিস্টানরা গ্রানাডাচুক্তির শর্তগুলো ভাঙতে শুরু করে এবং ১৫০১ খ্রিস্টাব্দে তারা তাদের স্বরূপে আবির্ভূত হয়। ইহুদিদের মতো মুসলমানদেরকেও একই শর্ত দিয়ে নতুন অধ্যাদেশ জারি করা হয়; হয় তোমাদের খ্রিস্টান হতে হবে নয়তো ছাড়তে হবে স্পেন।
এর পরের ইতিহাস অত্যন্ত বেদনাবহ এবং করুণ। প্রাণের ভয়ে হাজার হাজার মুসলমান খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করে, নিজেদের মুসলিম পরিচয় বিসর্জন দিয়ে গ্রহণ করে ক্যাথলিকিজম। যাদের সামর্থ্য ছিলো তারা মাতৃভূমি ছেড়ে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে আশ্রয় নেয় আফ্রিকার মুসলিম দেশগুলোতে। আর এভাবেই একসময় সমগ্র স্পেন হয়ে পড়ে মুসলিমশূন্য এক খ্রিস্টান দেশ। অনেকেই মনে করতে পারেন যে, এই দেশত্যাগ এবং খ্রিস্টধর্ম গ্রহণে বাধ্য করার সময়ে হয়তো এপ্রিল ফুল ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তাদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, আল-মাকারি বা অন্যান্য ঐতিহাসিকগণ মুসলমানদের স্পেনত্যাগের যে বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেছেন সেখানে এমন কোনো তথ্য পরিবেশিত হয়নি।নির্ভরযোগ্য তথ্যের ওয়েবসাইট উইকিপিডিয়াতে মুসলমানদের স্পেনত্যাগের বিষয়টি অত্যন্ত নিরাবেগভাবে বর্ণনা করার চেষ্টা করা হয়েছে- সূত্র:http://en.wikipedia.org/wiki/Morisco#Genetic_legacy_of_Moriscos _in_Spain
এ বিষয়টি নিয়ে ২০০৯ সালের ৪ সেপ্টেম্ব বিবিসি Muslim Spain (711-1492) নামে একটি ডকুমেন্টারি আর্টিকেল প্রকাশ করে। আর্টিকেলটির একদম শেষদিকে বলা হয়- The Muslims finally lost all power in Spain in 1492. By 1502 the Christian rulers issued an order requiring all Muslims to convert to Christianity, and when this didn't work, they imposed brutal restrictions on the remaining Spanish Muslims. “মুসলিমরা চূড়ান্তভাবে তাদের ক্ষমতা হারায় ১৪৯২ সালে। ১৫০২ সালে খ্রিস্টান সরকার এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে সমস্ত মুসলমানকে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হওয়ার আদেশ দেয়; সবাই সেটি মান্য না করায় তাদের ওপর নেমে আসে পাশবিক নির্যাতন।” সূত্র : http://www.bbc.co.uk/religion/religions/islam/history/spain_1.shtml
আমার এতোক্ষণের আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণ করতে চেয়েছি যে, স্পেনে মুসলমানদের ইতিহাসে এপ্রিল ফুল বলতে কিছু নেই এবং পহেলা এপ্রিলেরও কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। অধুনা আমরা যে ‘এপ্রিল ফুল’ বলে বেদনাহত হই সেটাও নিতান্ত আবেগী অজ্ঞতা ছাড়া আর কিছুই নয়। এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন হতে পারে, তাহলে এপ্রিল ফুল বিষয়টি এলো কোথা থেকে? কেনোই বা এটি আমাদের সংস্কৃতিতে সংযোজিত হলো? সে বিষয়টিও অত্যন্ত কৌতূহলোদ্দীপক।
তাহলে এপ্রিল ফুল আসলে কী ?
প্রথমেই কিছু দরকারি কথা জানা থাকা দরকার। অনেকেই ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করতে পারেন, আমি কেনো শুধু শুধু এমন প্রচলিত বিষয়টি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করছি? তাদের জানা প্রয়োজন, মিথ্যা দিয়ে কখনো সত্যকে বেগবান করা যায় না। ইতিহাসের যেটা সত্য আমরা সেটাকেই আমাদের ধর্মীয় মানসে লালন করবো। একটি অযাচিত আবেগী মিথ্যা দিয়ে কেনো আমরা কলঙ্কিত করবো আমাদের রক্ষিত ইতিহাসকে? স্পেনে মুসলমানদের পরাজয় এবং সেখান থেকে বিতাড়নের ইতিহাস অবশ্যই আমাদের জন্য বেদনার উপলক্ষ। আমাদের সোনালি ইতিহাসে একটি জ্বলজ্বলে ক্ষত। গ্রানাডা, কর্ডোভা (কুরতুব; আমরা অনেকেই হয়তো জানিনা পাশ্চাত্যের কর্ডোভার আরবি নাম আসলে কুরতুব। বিখ্যাত তাফসিরকারক ইমাম কুরতুবির জন্ম হয়েছিলো এখানে, আলহামরা, আন্দালুস- এসব নাম আমাদের মুসলিম মানসে চিরায়তভাবেই মিশে গেছে। আমাদের চোখের শার্শী বন্ধ করলে এখনো আমরা যেনো আন্দালুসের সেই সটান দাঁড়িয়ে থাকা মিনার চূঁড়াগুলো দেখতে পাই। দেখতে পাই গ্রানাডা থেকে মুসলমানদের বিতাড়নের নারকীয় দৃশ্যাবলি। এগুলো আমাদের অনেক পুরনো বেদনার অনুষঙ্গ, আমাদের জাগরুক চেতনার অগ্নিশিখা। কিন্তু তাই বলে একটি মিথ্যা দিয়ে তো আমরা আমাদের সেই জাগরুক চেতনাকে কলঙ্কিত করতে পারি না। হোক আমাদের বেদনার ইতিহাস, হোক তা শোকের; একটি নির্জলা মিথ্যাকে কেনো আমরা আমাদের ধর্মীয় আবেগের অন্দরবাড়িতে জায়গা দেবো? সত্য ধর্মের জন্য সত্য ইতিহাস আমাদের জানতেই হবে।
যাই হোক, এবার আমরা দেখতে চাই যে, এপ্রিল ফুল জিনিসটি আসলে কী চিজ। প্রথমেই আমরা সাহায্য নিচ্ছি পৃথিবীর সবচে বৃহৎ দালিলিকগ্রন্থ এনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রিটানিকার। এপ্রিল ফুল নিয়ে সেখানে লেখা আছে- April Fools’ Day, also called All Fools’ Day, in most countries the first day of April....
ব্রিটানিকা বলছে, ‘এপ্রিল ফুল দিবসকে অনেক দেশে ‘অল ফুলস ডে’ নামেও ডাকা হয়। এটি গ্রহণ করা হয়েছে মূলত এপ্রিলের প্রথম তারিখে হাস্য-কৌতুকের দিবস হিসেবে।... এটি কোথা থেকে শুরু হয়েছে, তা নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে। এ দিবসকে প্রাচীন রোমের হিলারিয়া উৎসবের মতো উদযাপন করা হতো মার্চের ২৫ তারিখে,...তবে নতুনভাবে দিবসটি পালন করা হয় সম্ভবত ফ্রান্সের গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার গৃহীত হওয়ার পর থেকে, যা পূর্ববর্তী নতুন বছর শুরুর দিন ২৫ মার্চ থেকে জানুয়ারি ১ লা তারিখে পরিবর্তন করা হয় ১৫৮২ সালে।’
এ কথা ঐতিহাসিকভাবে সত্য যে, অনেক আগে থেকেই পহেলা এপ্রিল বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে উদযাপিত হতো। তবে কিভাবে যে এপ্রিল ফুলের সূচনা হয় তা নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে বিস্তর মতভেদ রয়েছে। প্রাচীনকালে জনপ্রিয় উৎসবসমূহ পালিত হতো বসন্তকালীন বিষুব সময়ে (vernal equinox), অর্থাৎ যে সময়ে দিনরাত মোটামুটি সমান থাকে। সময়টি হলো ২১ মার্চ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ঋতু পরিবর্তনের প্রান্তিক সময় ২৫ মার্চ থেকে ২ রা এপ্রিল (অর্থাৎ শীতের শেষে বা বসন্তের শুরুতে) পুরাতন জুলিয়ান (Julian) ক্যালেন্ডার অনুযায়ী গোটা ইউরোপে সপ্তাহব্যাপী উৎসব উদযাপন চলতো। আঠার শতকে এপ্রিল ফুল বর্তমান অবয়ব ধারন করার আগ পর্যন্ত গ্রেট ব্রিটেনে সাধারণ মানুষদের ঐতিহ্যবাহী মেলা বসতো প্রতিবছরের পহেলা এপ্রিলে। স্কটল্যান্ডে এই দিনটিকে বলা হতো ‘কোকিল শিকারের দিন (hunting the gowk or cuckoo)’। এপ্রিল ফুল নতুনরূপে জন্মলাভের পর এর নামকরণ করা হয় এপ্রিল-কোকিল (April-gowks)।
ইউরোপে সম্ভবত এপ্রিল ফুলের বিস্তৃতি ঘটে প্রথমে ফরাসিদের মধ্যে। ফ্রান্সই হলো প্রথম দেশ যে দেশে সরকারিভাবে নবম চার্লস (Charles IX) ১৫৬৪ সালে এক ফরমানের মাধ্যমে ১ লা জানুয়ারিকে নববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন । তিনি এটি করেন ১৫৮২ সালে ইতালিয়ান পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি (Pope Gregory XII) প্রবর্তিত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার (যেটিকে আমরা বর্তমানে ভুল করে ইংলিশ ক্যালেন্ডার বলি) হিসেবে প্রচলন হওয়ারও আগে। এরই সাথে ১ লা এপ্রিলে বন্ধু-বান্ধবদের উপহার দেয়া নেয়ার প্রথাটি বদল হয়ে চলে যায় ১ জানুয়ারি বা নিউ ইয়ার উদযাপনের প্রাক্কালে। কারণ তখন পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নিউ ইয়ার পালিত হতো ১ লা এপ্রিলে। অনেকেই এই পরিবর্তনকে মেনে নিতে না পেরে এদিনই অর্থাৎ ১ লা এপ্রিলেই তাদের পুরোনো প্রথাসমূহ চালিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু বিপরীত ১ জানুয়ারির পক্ষের লোকজন এদেরকে ফাঁকি দিতে ১ লা এপ্রিলে ভূয়া উপহার পাঠানোর কালচারটি চালু করে। এখান থেকেই মূলত চালু হয় ‘এপ্রিল ফুল ডে’ অর্থাৎ এপ্রিলের বোকা দিবস। কেননা সেসময় যারা নতুন গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারকে গ্রহণ করে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারকে বিদায় দিয়েছিলো তারা বিদ্রুপ করে অন্যান্য যারা তখনো জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বর্ষগনণা করতো তাদেরকে বোকা বানাতে ১ লা এপ্রিলে নববর্ষের উপহার পাঠাতো। এতে প্রাচীনপন্থীরা বোকা বনে যেতো এবং নতুন গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারধারীরা উপহার পাঠিয়ে তাদেরকে পশ্চাদপদ বলে উপহাস করতো।
ডাচরা পহেলা এপ্রিল পালন করে অন্য কারণে। স্পেনের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ ১৫৭২ সালে নেদারল্যান্ড শাসন করতেন। যারা তার শাসন অমান্য করেছিলো তারা নিজেদেরকে গুইযেন (ডাচে Geuzen ও ফরাসিতে gueux বলা হয়, যার অর্থ ভিখারী) বলে পরিচয় দিতো। ১৫৭২ সালের এপ্রিলের ১ তারিখে গুইযেন বা বিদ্রোহীরা উপকূলীয় ছোটো শহর ডেন ব্রিয়েল (Den Briel) করায়ত্ব করে ফেলে। তাদের এই সফলতায় বিদ্রোহের দাবানল দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। শেষমেষ স্প্যানিশ সেনাপ্রধান দ্যা ডিউক অব অ্যালবা প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হন। ‘ব্রিয়েল’ হলো ডাচ শব্দ, যার অর্থ কাঁচ। ১৯৭২ সালের ১ লা এপ্রিল স্মরণে ডাচরা বিদ্রুপ করে স্প্যানিশদের ‘অ্যালবা কাঁচ হারিয়েছে (Alba lost glasses)’ বলে পুরনো স্মৃতি রোমন্থন করে থাকে। উল্লেখ্য, অ্যালবা ছিলো স্পেনের একটি শহরের নাম, যেখানে দ্যা ডিউক অব অ্যালবার সদর দপ্তর ছিলো।
এপ্রিল ফুলের আরেকটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের প্রফেসর জোসেফ বসকিন (Joseph Boskin)। তিনি বলেছেন, এই প্রথাটির শুরু হয় রোমান সম্রাট কনস্ট্যান্টাইনের (২৮৮-৩৩৭ খ্রিস্টাব্দ) শাসনামলে। হাসি-ঠাট্টা নিয়ে মেতে থাকে এমন একদল বোকা গোপালভাঁড়েরা সম্রাটকে কৌতুক করে বলে, তারা রাজার চেয়ে ভালোভাবে দেশ চালাতে পারবে। রাজা মহোদয় বেশ পুলকিত হলেন। রাজা গোপালভাঁড়দের সর্দার কুগেলকে একদিনের জন্য বাদশাহ বানিয়ে ক্ষমতা ছেড়ে দিলেন। আর কুগেল সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে রাজ্যময় আইন জারি করে দিলো, প্রতিবছরের এইদিনে সবাই মিলে তামাশা করবে। আর সে দিনটি ছিলো এপ্রিলের ১ লা তারিখ।
১৯৮৩ সালে বার্তা সংস্থা এপি পরিবেশিত বসকিনের এই ব্যাখ্যাটি অনেক কাগজে নিবন্ধাকারে প্রকাশিত হয়। বসকিন মূলত আগের সব ব্যাখ্যাকে উড়িয়ে দিয়েছেন। আর্টিকেলটি ছাপানোর আগে এপি দুই সপ্তাহ ধরে ভেবেছে তারা নিজেরাই এপ্রিল ফুলের বোকামির শিকার হচ্ছে না তো!
অন্যান্য দিবসের মত এই দিবসটির উৎপত্তি প্রাশ্চাত্যে শুরু হলেও এর বিস্তৃতি এখন দেশে দেশে। শুধুমাত্র বাংলাদেশে (বৃহৎ অর্থে, উপমহাদেশে) কিছু মুসলমানদের মধ্যে এপ্রিল ফুলের ব্যাখ্যায় নতুন মাত্রা লাভ করেছে। এই এপ্রিল ফুল বিষয়টি কিন্তু কেবল আমাদের উপমহাদেশের ধর্মীয় সংস্কৃতিতে যোগ হয়েছে, আরব বা অন্যান্য মুসলিম দেশে এপ্রিল ফুলের নাম নিয়ে কোনো ধরনের মর্সিয়া ক্রন্দন করা হয় না। আরেকটি বিষয় উল্লেখযোগ্য, আমাদের পূর্ববর্তী কোনো ইমাম, আকাবির, গ্রন্থপ্রণেতা কিন্তু স্পেনে এপ্রিল ফুল টাইপের কোনো ইতিহাস বর্ণনা করেননি। হ্যাঁ, গ্রানাডা চুক্তির পর তাদের ওপর নির্যাতনের অনেক বর্ণনা পাওয়া যায় তবে সেগুলো নির্দিষ্ট করে এপ্রিলের ১ লা তারিখের কোনো ঘটনার উল্লেখ নেই। বিগত ছয়শো বছরের কোনো আকাবিরই (ইসলামি স্কলার) এমন কোনো আলোচনা করে যাননি অথবা তারা এ ইতিহাস জানতেন না- এমন ভাবনা বোকারাও ভাববে না নিশ্চয়ই ।
প্রতিবছর ১ লা এপ্রিল আসলেই ফেসবুকে, ইন্টারনেট, পত্র-পত্রিকা আর কিছু মানুষের মুখে শোনা যায়, এদিনে মুসলিমদের বোকা হওয়ার ইতিহাস, খ্রিস্টানদের অপরাধের ইতিহাস আর মুসলিমদের এদিন পালন না করার উপদেশ। বস্তুত আমরা কখনো ইতিহাস না জেনে, পড়াশোনা না করে কেবল অন্যের আবেগী কথায় কান দিয়ে এমন ভুল ইতিহাস পালন করছি। ধর্মকে পুঁজি করে এ ধরনের অপপ্রচার শুধুমাত্র আমাদের দীনতা এবং অজ্ঞতাকেই প্রকাশ করে। আমাদেরকে ঈমানদার মুসলিম বা হামদর্দি মুসলিম করে না।
এপ্রিল ফুল নিয়ে আলোচনার শেষদিকে আমরা এ বিষয়েরই ভিন্ন একটি দিকে আলোকপাত করতে চাই। এ আলোচনার পর স্বাভাবিকভাবেই আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে, তাহলে এপ্রিল ফুলকে মুসলমানদের বেদনার দিবস বানালো কে? এটি একটি কঠিন প্রশ্ন। অন্তত আমাদের জন্য। কেননা আমরা এখনো জানতে পারিনি ঠিক কবে থেকে কোথায় প্রথম এই এপ্রিল ফুল বিষয়টি মুসলমানদের ভেতরে জায়গা করে নিয়েছে। কারাই বা এগুলো মুসলিম সংস্কৃতির ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়েছে- সে বিষয়েও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। তবে আমরা কিছু সম্ভাবনার ভিত্তিতে কয়েকটি কারণ নির্ণয় করতে পারি, যেগুলো তথ্যনির্ভর না হলেও সত্যের অনেক কাছাকাছি হবে বলেই আশা করি।
সন্দেহের অব্যর্থ তীর ইহুদিদের দিকে
‘ইসরাইলি রেওয়ায়েত’ বলে আরবি শিক্ষিতদের মাঝে একটি নির্দিষ্ট পরিভাষা প্রচলিত আছে। কোরান এবং হাদিসের ব্যাখ্যায় যে সব তথ্য মিথ্যা কিংবা প্রায়মিথ্যা বলে প্রতীয়মান হয় সেগুলোকে সাধারণত ইসরাইলি রেওয়ায়েত-(ইসরাইলি বর্ণনা) বলা হয়। কোরানের তাফসির বা হাদিসের ব্যাখ্যায় এসব বর্ণনার ওপর আস্থা রাখা হয় না। লোকসমাজে ব্যাপক প্রচলিত হওয়ার কারণে এগুলোকে সত্য হিসেবে যেমন গ্রহণ করা হয় না তেমনি মিথ্যা বলেও উড়িয়ে দেয়া যায় না। আর এই ইসরাইলি রেওয়ায়েতগুলো উৎপাদিত হয় সাধারণত ইহুদিসমাজ থেকে। ইসরাইল মানেই ইহুদি। সেমতে আমরা বলতে পারি, এপ্রিল ফুলের বিষয়টিও একটি ‘ইসরাইলি রেওয়ায়েত’ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এ মতের ব্যাপারে নির্দিষ্ট কারণও রয়েছে।
আসুন, কারণগুলো নিয়ে আমরা একটু আলোচনা করি। আমরা আগেই উল্লেখ করেছি যে, খ্রিস্টানরা গ্রানাডা দখল করার পর সর্বপ্রথম স্পেন থেকে বিতাড়িত করে অভিশপ্ত ইহুদিদের। বর্তমান সময়ে ইহুদিরা খ্রিস্টানদের মিত্র হলেও ঐতিহাসিকভাবে ইহুদি এবং খ্রিস্টানদের সম্পর্ক দা-কুমড়ো। ইউরোপের ইতিহাসে বহুবার তাদেরকে বিভিন্ন খ্রিস্টান দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। এদের নির্দিষ্ট কোনো দেশ ছিলো না। যাযাবরদের মতো বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়াতো আর ষড়যন্ত্র করে গন্ডগোল বাধাতো রাষ্ট্রের ভেতর। বর্তমানে ইহুদি-খ্রিস্টান মিত্রতা দেখা গেলেও এটা কেবল বাহ্যিক মিত্রতা, ইহুদিরা নিজেদের স্বজাতি ছাড়া কাউকেই তাদের বন্ধু মনে করে না।
যাহোক, আমরা বলছিলাম গ্রানাডা থেকে ইহুদিদের বিতাড়নের প্রসঙ্গে। দেখুন ইতিহাসের কি চমৎকার মিল এবং মুসলমানদের কেমন অজ্ঞতা; ফার্ডিন্যান্ড এবং ইসাবেলার পক্ষে গ্রানাডা থেকে ইহুদিদের খ্রিস্টানধর্ম গ্রহণ নয়তো স্পেন থেকে বিতাড়নের অধ্যাদেশ জারি করা হয় ১৪৯২ সালের ৩১ মার্চ। অর্থাৎ ১ লা এপ্রিলের আগের দিন। খুব ভালো করে স্মরণ রাখা প্রয়োজন, এদিন গ্রানাডা থেকে ইহুদিদের বের হয়ে যাওয়ার আদেশ দেয়া হয়, মুসলমানদের নয়। আরো স্মরণ রাখুন, দিনটি ছিলো পহেলা এপ্রিলের আগের দিন, ৩১ মার্চ ১৪৯২। আশা করি বিষয়টি এবার ক্লিয়ার হওয়া শুরু করেছে।
দেখুন এ ব্যাপারে উইকিপিডিয়া কী বলছে- Several months after the fall of Granada an Edict of Expulsion was issued against the Jews of Spain by Ferdinand and Isabella (March 31, 1492). It ordered all Jews of whatever age to leave the kingdom by the last day of July (one day before Tisha B'Av).
সূত্র : http://en.wikipedia.org/wiki/History_of_the_Jews_in_Spain#1391.E2.80.931492
‘গ্রানাডা পতনের কয়েক মাস পর ফার্ডিন্যান্ড এবং ইসাবেলা ৩১ মার্চ ১৪৯২-এ ইহুদিদের বিরুদ্ধে দেশান্তরের আদেশ জারি করেন। ...’
উইকিপিডিয়ার আরেকটি সূত্র দেখুন- The punishment for any Jew who did not convert or leave by the deadline was death without trial the punishment for a non-Jew who sheltered or hid Jews was the confiscation of all belongings and hereditary privileges. সূত্র :http://en.wikipedia.org/wiki/Alhambra_decree
‘যেসব ইহুদি ধর্মান্তরিত কিংবা দেশান্তর হবে না তাদেরকে বিনা বিচারে হত্যা করা হবে।...’
আশা করি এতোক্ষণে আমাদের এপ্রিল ফুলবিষয়ক চিন্তা-ভাবনা স্বচ্ছ হতে শুরু করেছে। ১৪৯২ সালের ৩১ মার্চ যেহেতু ইহুদিদের বিরুদ্ধে ধর্মান্তর বা স্পেন থেকে বিতাড়নের ডিক্রি জারি করা হয় সেহেতু পরের দিনটি অর্থাৎ এপ্রিলের ১ তারিখটি তাদের জন্য নিশ্চয়ই বেদনাবহ হওয়ার কথা। হয়েছেও তাই। এদিনটি ইহুদিদের জন্য অত্যন্ত নারকীয় যন্ত্রণার। এদিনটিকে তারা ভুলতে পারেনি শত শত বছর পরেও। আজো তারা ইতিহাসের এ দিনটিকে বেদনার সঙ্গে স্মরণ করে।
যেহেতু তারা ইহুদি তাই একটা সময় তারা কুটিল সিদ্ধান্ত নেয় যে, এদিনটি কেবল আমরাই স্মরণ করবো না, কৌশলে আমাদের সঙ্গে মুসলমানদেরও কান্নাকাটি করাবো। নিজেদের অজান্তে তারাও আমাদের ব্যথায় সমব্যথী হবে। কোনো মুসলিম দেশে ইহুদিরা সমাদৃত না হতে পারে তাই বলে ইহুদিদের ইতিহাস তো অপাঙক্তেয় নয়। সেগুলো মুসলিম দেশগুলোতে তারা ঢুকাতে হবে। তবে সাপ্লাই প্রক্রিয়াটা হতে হবে আবেগী এবং ধর্মীয় হামদর্দির সাথে। কেননা ধর্ম মানেই তো স্পর্শকাতর বিষয়। ভুল-চুক হলেও যদি তার ভেতর যথেষ্ট পরিমাণ আবেগ থাকে তবে তা সমাদরে সমাদৃত হয় মুসলমানদের কাছে। কার ঠ্যাকা পড়েছে ইতিহাস ঘাটার! স্পেনে মুসলমানদের পুড়িয়ে মারা হয়েছে- এটাই সাফকথা। এই সুযোগে ইহুদিরা ঢুকিয়ে দিয়েছে তাদের ইতিহাস। বাইরে মলাট লাগিয়ে দিয়েছে- ১ লা এপ্রিল : স্পেনে মুসলমানদের বোকা বানিয়ে অগ্নিদগ্ধ করে মারার দিন। ইহুদিরা এখানে আরেকটি সুবিধা পেয়েছে, যেহেতু স্পেনে মুসলমানদের পরাজয়, ধর্মান্তর এবং দেশান্তরও প্রায় সমসাময়িক তাই এ বিষয়টিকে খুব সহজেই কাজে লাগিয়েছে তারা। অর্ধশিক্ষিত উপমহাদেশের মানুষ তো আর এতো ইতিহাস ঘাটতে যায় না, তাদেরকে কেবল ধর্মের কথা বলে একটু নাড়া দিলেই হয়, তারা ঝড়ের মতো নড়তে থাকে। কেননা এদেশে ধর্মের কল খুব অল্প বাতাসেই নড়ে। ফলে চতুর ইহুদিরা তাদের বেদনার ইতিহাসকে মুসলমানদের বেদনার ইতিহাস বানিয়ে ঢুকিয়ে দিয়েছে মুসলিমসমাজে। কারণ এদেশে ধর্মের লেবাস পরে ইহুদিদের টাকা খাওয়া পাবলিকের অভাব নেই। সুতরাং এইতো সুযোগ!
দাও, মুসলমানদের ধর্মীয় আবেগে ঢুকিয়ে দাও ইহুদি কান্না। মুসলমানদের চোখ দিয়ে ঝরবে ছয়শো বছয় আগের বিতাড়িত ইহুদিদের জন্য শোকাশ্রু। ইহুদিদের জন্য এর চেয়ে পরম চাওয়া আর কী হতে পারে! প্রতি পহেলা এপ্রিলে মুসলমানদের বড়ো বড়ো ধর্মীয় নেতা, আলেম, যুবক-যুবতীরা ইহুদিদের বেদনায় কান্নাকাটি করে। ইতিহাস বিকৃতির এমন নজির আর কয়টা পাওয়া যায়? আর কয়জনই বা পারে সত্য না জেনে কেবল আবেগের যুক্তিহীন বাণে নিজেদের ধর্মকে মিথ্যার কাছে বিকিয়ে দিতে? ভাগ্য ভালো যে ইসরাইলকে বাংলাদেশ স্বীকৃতি দেয়নি, নইলে হয়তো অনেক আগেই বাংলাদেশের অনেক আলেম-ওলামা আর ইসলামপন্থীরা ইহুদি ইতিহাস তোষণ করার বদৌলতে ঢাকা টু তেলআবিবের বিমান টিকেট পেয়ে যেতেন।
আমরা সঠিকভাবে জানি না ঠিক কবে কীভাবে ইহুদিদের এই বিতাড়নের ইতিহাস আমাদের মুসলিমসমাজে প্রচলন করা হয়েছে, তবে এর প্রচলন যে খুব বেশিদিনের নয় তা অনুমান করা যায়। কেননা বিগত একশো বছরে মুসলমানদের বাংলা সাহিত্যে এপ্রিল ফুলবিষয়ক কোনো রচনা চোখে পড়ে না। পড়ার কথাও না। এর কারণ হলো, ইহুদিদের সর্বপ্রথম নিজস্ব ভূখন্ড ইজরাইল প্রতিষ্ঠা পায় ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে এবং এর পর থেকেই তারা মূলত বিশ্বব্যাপী তাদের নানামুখী ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রম শুরু করে। এরই আওতায় সম্ভবত তারা মুসলমানদের ইতিহাস বিকৃতির কাজটিও সুচারুরূপে সম্পন্ন করে। সুতরাং অনুমান করা যায় যে, ইতিহাস বিকৃতির এই কুকর্মটি বিগত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকের পরে ঘটেছে। ইজরাইল প্রতিষ্ঠার আগে ইহুদিরা ইউরোপব্যাপী দৌঁড়ানির ওপর ছিলো। তখন তাদের দ্বারা ইতিহাস নিয়ে এতো বৃহৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব ছিলো না বলেই মনে হয়। তবে এমনও হতে পারে, ইতিহাস বিকৃতির বিষয়টিকে ইহুদি ঐতিহাসিকরা আগে থেকেই সাজিয়ে রেখেছিলো এবং ইজরাইল প্রতিষ্ঠার পর সেগুলো বিভিন্ন মুসলিম দেশে সাপ্লাই করা শুরু করে।
এখানে আরেকটি সম্ভাবনার কথা বলা যেতে পারে। বিশেষ করে সেলিব্রেটিদের মুসলিম হওয়া এবং পাশ্চাত্যে ইসলাম দ্রুত অগ্রসরমান হওয়ার খবর নিয়ে। এগুলো বিধর্মীরা প্রচার করে মুসলিমদের মাঝে এমন ধারনা সৃষ্টি করে, সারাবিশ্বে ইসলাম খুব ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছে; সুতরাং মুসলিমবিশ্বের চিন্তার কিছু নেই। সেই সঙ্গে এগুলো দিয়ে অন্যান্য বিধর্মীদেরও উস্কে দেয়া হয়, যেনো তারা ইসলামের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পারে। যেমন ডেনমার্কের আন্দ্রে ব্রেভিক। যে চরম মুসলিমবিদ্বেষে গুলি করে খুন করেছিলো প্রায় একশো নিরীহ মানুষকে। সুতরাং এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না।
প্রিয় পাঠক! এতোক্ষণের আলোচনা-পর্যালোচনা দিয়ে আমরা একথাই বুঝাতে চেষ্টা করেছি যে, আলোচ্যবিষয়গুলো নিতান্তই আমাদের ধর্মীয় আবেগের দুর্বলতা এবং ইতিহাসের অজ্ঞতা ছাড়া আর কিছুই নয়। আমাদের ধর্মীয় সরলতার সুযোগ নিয়ে ইহুদি বা অন্য কেউ আমাদের সমাজে ঢুকিয়ে দিয়েছে (আমরা কিন্তু এখানে কোনো নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে ইহুদিদের দায়ী করিনি। হতে পারে অন্য কোনোভাবে এটি আমাদের সমাজে প্রচলিত হয়েছে। তবে ইহুদিদের বিষয়টি অবশ্যপ্রনিধানযোগ্য)। এখানে শুধু দুটো প্রচলিত বিষয়ের সুলুক সন্ধান তুলে ধরা হয়েছে অথচ এমন আরো শত শত প্রচলিত ভুল ইতিহাস আমাদের সমাজে চলতি আছে। আমরা জানিও না যে, এগুলো কবে থেকে কীভাবে আমাদের সমাজে প্রচলিত হয়েছে এবং এগুলোর মূল ইতিহাসটাই বা কী। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, এসব ইতিহাসকে আমরা কেবল নিছক ইতিহাসই মনে করি না বরং মনে করি আমাদের ধর্মের অবশ্য অনুষঙ্গ। এগুলোকে অস্বীকার করলে বা অবিশ্বাস করলে আমাদের ঈমান চলে যাবে- এমন ধারনাও অনেকের আছে। কাজেই সহজ কথায় যে চিড়া ভিজবে না, একথা বলাই বাহুল্য।
তবে আমরা কিন্তু আমাদের উপমহাদেশে প্রচলিত ইতিহাসকে একেবারেই উড়িয়ে দিচ্ছি না। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ইতিহাসের ইতিহাস নিয়ে। কোনো অনুসন্ধানী গবেষক যদি এ বিষয়ে ইতিহাসের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে গবেষণা করে প্রমাণ করতে পারেন যে ১ লা এপ্রিলে সত্যিই স্পেনে এমন বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটেছিলো তবে সেটি হবে বাহবা পাওয়ার মতো ব্যাপার। সে যাই হোক, এমন আরো অনেক ভুল এবং ভয়াবহ মিথ্যা ইতিহাসও আমাদের মাঝে প্রচলিত আছে। যেমন পেপসি মানে হচ্ছে ‘পে ইচ পেনি টু সেভ ইসরাইল’- প্রতিটি পয়সা ইসরাইলের জন্য সংরক্ষণ করো। এটিও একটি ভুল তথ্য। শুধু পেপসিই কেনো, আমাদের মুসলিম সমাজে অনেক ভ্রান্তবিশ্বাসধারী মানুষকে মুসলিম বিজ্ঞানী, মুসলিম কবি, ইমাম বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। অথচ তাদের মধ্যে ইসলামের সঠিক বিশ্বাসই ছিলো না। এমন অনেকজন আছে যারা ঈশ্বরের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করতেন। এমন আরো নানা ‘মজাদার’ চরিত্রের লোকদের আমাদের সমাজে খুব সম্মান এবং গর্বের সঙ্গে স্মরণ করা হয় !
No comments:
Post a Comment