তাওহিদের বিশ্বাসসমূহ : ৭ : বালা-মুসীবত দূর করার উদ্দেশ্যে রিং, তাগা [সূতা] ইত্যাদি পরিধান করা

তাওহিদের বিশ্বাসসমূহ : ৭ : বালা-মুসীবত দূর করার উদ্দেশ্যে রিং, তাগা [সূতা] ইত্যাদি পরিধান করা


বালা-মুসীবত দূর করা বা প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যে রিং, তাগা [সূতা] ইত্যাদি পরিধান করা শিরক
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরানে ইরশাদ করেছেন,
قُلْ أَفَرَأَيْتُمْ مَا تَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ إِنْ أَرَادَنِيَ اللَّهُ بِضُرٍّ هَلْ هُنَّ كَاشِفَاتُ ضُرِّهِ (الزمر: 38
[হে রাসূল] ‘‘আপনি বলে দিন, তোমরা কি মনে করো, আল্লাহ যদি আমার কোন ক্ষতি করতে চান তাহলে তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে ডাকো, তারা কি তাঁর [নির্ধারিত] ক্ষতি হতে আমাকে রক্ষা করতে পারবে? (ঝূমারঃ ৩৮)।

সাহাবি ইমরান বিন হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, নবি করিম (সা.) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘এটা কি? লোকটি বললো, এটা দুর্বলতা দূর করার জন্য দেয়া হয়েছে। তিনি বললেন, ‘‘এটা খুলে ফেলো। কারণ এটা তোমার দুর্বলতাকেই শুধু বৃদ্ধি করবে। আর এটা তোমার সাথে থাকা অবস্থায় যদি তোমার মৃত্যু হয়, তবে তুমি কখনো সফলকাম হতে পারবে না। (আহমাদ)
উকবা বিন আমের (রা.) হতে একটি ‘‘মারফু হাদিসে বর্ণিত আছে,
من تعلق تميمة فلا أتم الله له ومن تعلق ودعة فلا ودع الله له
‘‘যে ব্যক্তি তাবিজ ঝুলায় (পরিধান করে) আল্লাহ যেন তার আশা পূরণ না করেন। যে ব্যক্তি কড়ি, শঙ্খ বা শামুক ঝুলায় তাকে যেন আল্লাহ রক্ষা না করেন।"
অপর একটি বর্ণনায় আছে,
من تعلق تميمة فقد أشرك
‘‘যে ব্যক্তি তাবিজ ঝুলালো সে শিরক করলো।"
ইবনে আবি হাতেম হুযাইফা থেকে বর্ণনা করেছেন, ‘‘জ্বর নিরাময়ের জন্য হাতে সূতা বা তাগা পরিহিত অবস্থায় তিনি একজন লোককে দেখতে পেয়ে তিনি সে সূতা কেটে ফেললেন এবং কোরানের এ আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন,
وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُمْ بِاللَّهِ إِلَّا وَهُمْ مُشْرِكُونَ (يوسف: ১০৬)
এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায় : 
১। রিং (বালা) ও সূতা ইত্যাদি রোগ নিরাময়ের উদ্দেশ্যে পরিধান করার ব্যাপারে অত্যাধিক কঠোরতা।
২। স্বয়ং সাহাবিও যদি এসব জিনিস পরিহিত অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন তাহলে তিনিও সফলকাম হতে পারবেন না। এতে সাহাবায়ে কেরামের এ কথারই প্রমাণ পাওয়া যায় যে, ছোট শিরক কবিরা গুনাহর চেয়েও মারাত্মক।
৩। অজ্ঞতার অজুহাত গ্রহণযোগ্য নয়।
৪। لا تزيدك إلا وهنا ইহা তোমার দুর্বলতা ছাড়া আর কিছুই বৃদ্ধি করবে না। এ কথা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, রোগ নিরাময়ের উদ্দেশ্যে রিং বা সূতা পরিধান করার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই বরং অকল্যাণ আছে।
৫। যে ব্যক্তি উপরোক্ত কাজ করে তার কাজকে কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
৬। এ কথা সুস্পষ্ট যে, যে ব্যক্তি (রোগ নিরাময়ের জন্য কোন কিছু [রিং, সূতা] শরীরে লটকাবে তার কুফল তার উপরই বর্তাবে।
৭। এ কথাও সুস্পষ্ট যে, যে ব্যক্তি রোগ নিরাময়ের উদ্দেশ্যে তাবিজ ব্যবহার করলো সে মূলতঃ শিরক করলো।
৮। জ্বর নিরাময়ের জন্য সূতা পরিধান করাও শিরকের অন্তর্ভুক্ত।
৯। সাহাবি হুযাইফা কর্তৃক কোরানের আয়াত তেলাওয়াত করা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, সাহাবায়ে কেরাম শিরকে আসগরের দলীল হিসেবে ঐ আয়াতকেই পেশ করেছেন যে আয়াতে শিরকে আকবার বা বড় শিরকের কথা রয়েছে। যেমনটি ইবনে আববাস (রা.) বাকারার আয়াতে উল্লেখ করেছেন।
১০। নজর বা চোখ লাগা থেকে আরোগ্য লাভ করার জন্য শামুক, কড়ি, শঙ্খ ইত্যাদি লটকানো বা পরিধান করাও শিরকের অন্তর্ভুক্ত।
১১। যে ব্যক্তি তাবিজ ব্যবহার করে তার উপর বদ দোয়া করা হয়েছে, ‘আল্লাহ যেন তার আশা পূরণ না করেন। আর যে ব্যক্তি শামুক, কড়ি বা শঙ্খ (গলায় বা হাতে) লটকায় তাকে যেন আল্লাহ রক্ষা না করেন।
রচয়িতা : মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহহাব

No comments:

Post a Comment