০২ প্রশ্ন : আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধাসহ আমি এক কোম্পানির পক্ষ থেকে চাকুরীর প্রস্তাব পেয়েছি। আমার কাজের ধরনটা হবে কোম্পানির গবেষণাগারে শূকরের জিন নিয়ে গবেষণা করা । এ গবেষণার চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে - শূকরের উৎপাদন ও জেনিটিক মানোন্নয়ন করা । আরো স্পষ্ট করে বলতে গেলে গোশতের মান উন্নত রেখে শূকরের প্রজনন বাড়ানো এবং গ্রাহকের ভোগের জন্য তা বাজারজাত করা । অর্থাৎ ইসলামে নিষিদ্ধ শূকরের গোশত গ্রাহক কর্তৃক ক্রয় ও ভোগ করার উৎস থেকে আমার বেতনটা আসবে। প্রশ্ন হল- এ ধরনের উৎস থেকে অর্জিত সম্পদ কি বৈধ হবে ? আমি কি এ চাকরিতে যোগদান করব ? নাকি প্রত্যাখ্যান করব ? দ্রুত উত্তর দিলে কৃতজ্ঞ থাকব; যাতে আমি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পরি। আল্লাহ আপনাদেরকে উত্তম প্রতিদান দিন।
উত্তর : আলহামদুলিল্লাহ । মুসলমানের জন্য শূকরের গোশত খাওয়া হারাম। দলিল হচ্ছে- আল্লাহ তাআলার বাণী (ভাবানুবাদ): “বলুন, যা কিছু আমার কাছে ওহী করা হয়েছে, তাতে আহারকারীর আহার হিসেবে কোন কিছুই নিষিদ্ধ পাই না — মরা প্রাণী, প্রবহমান রক্ত ও শূকরের গোশত ছাড়া; কারণ তা (শূকরের গোশত) অপবিত্র এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে পাপের জবাই ছাড়া । তবে যে ব্যক্তি অবাধ্য ও সীমালঙ্ঘনকারী হয়ে নয়; নিরুপায় হয়ে এগুলো গ্রহণ করে, নিশ্চয় আপনার রব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু ।” [সূরা আল আনআম:১৪৫]
অনুরূপভাবে শূকরের গোশত ক্রয়বিক্রয় করাও হারাম । জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মক্কা বিজয়ের বছর বলতে শুনেছেন-তখন তিনি মক্কায় ছিলেন-“নিশ্চয় আল্লাহ ও তাঁর রাসূল মদ, মরা প্রাণী, শূকর ও মূর্তি বিক্রয় হারাম করেছেন । জিজ্ঞেস করা হল- ইয়া রাসূলাল্লাহ! মরা প্রাণীর চর্বির ব্যাপারে আপনার কি অভিমত ? তা দিয়ে তো জাহাজে প্রলেপ দেয়া হয়, চর্ম তৈল হিসেবে ব্যবহার করা হয়, বাতি জ্বালানোর কাজে ব্যবহার করা হয় । উত্তরে তিনি বললেন: না; ওটা হারাম। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : আল্লাহ ইহুদিদেরকে নিপাত করুন । আল্লাহ যখন মরা প্রাণীর চর্বি হারাম করলেন তখন তারা চর্বি গলিয়ে বিক্রয় করল এবং এর মূল্য ভক্ষণ করল।” [সহিহ বুখারী (১২১২), সহিহ মুসলিম (১৫৮১)]
অতএব, আল্লাহ যখন কোনো জিনিসকে হারাম করেন তখন তিনি এর মূল্যকেও হারাম করেন । অনুরূপভাবে হারাম কিছু বাস্তবায়নের মাধ্যমও হারাম । মূল কাজের যে হুকুম মাধ্যমেরও সেই হুকুম । হুকুমের দিক থেকে এতদুভয়ের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই । উপরন্তু মুসলমানের জন্য ফাসেক বা পাপাচারী গোষ্ঠীকে শরিয়তবিরোধী কাজকর্মে সহায়তা করা জায়েয নয় । মুসলমানের বরং উচিত হল- যতদূর সম্ভব তাদের শরিয়তবিরোধী কাজকর্মে বাধা হয়ে দাঁড়ানো । তাদেরকে এসব কর্ম থেকে বারণ করা । তাদের জন্য হারাম বস্তুর উন্নয়নে কাজ করে যাওয়ার তো প্রশ্নই আসে না । আপনি কি পছন্দ করবেন - আপনি হারাম বস্তুর উন্নয়ন, সৌন্দর্য বর্ধন ও উৎসাহ প্রদানের মাধ্যম হবেন এবং এসব হারাম প্রচার, প্রসার ও ব্যবহারে সহায়ক ভূমিকা পালন করবেন ?
আমার তো মনে হয় আপনি বলবেন: ‘নাউযুবিল্লাহ’ (আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই), আমি নিজের জন্য এমন জিনিস কখনো পছন্দ করব না; যা আমার সৃষ্টিকর্তা পছন্দ করেন না । যত বেশি বেতনই দেওয়া হোক না কেন আমি এ হারাম কাজ কখনো করব না । রিযিকের মালিক আল্লাহ । আপনি অন্য কোনো হালাল রুজির তালাশ করুন ।
আমরা আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করছি তিনি যেন, হালাল রুজি দিয়ে আমাদেরকে হারাম থেকে বাঁচিয়ে রাখেন এবং তাঁর নিজ অনুগ্রহে অন্যের মুখাপেক্ষিতা থেকে আমাদেরকে দূরে রাখেন।
No comments:
Post a Comment